27.8 C
Dhaka
Saturday, June 28, 2025

তারুণ্যের বিশ্বে প্রযুক্তি এবং আমাদের অগ্রগতি

Must read

আহমেদ ইউসুফ:

আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, ইন্টারনেট ছাড়া তথ্য প্রযুক্তির পরিপূর্ণ ব্যাবহার করতে পারবেন? কিংবা সকল সুবিধা প্রদান করলে প্রযুক্তির যেকোন বিষয়ে কতটুকু দক্ষতার প্রমাণ দিতে পারবেন? তবে আপনার উত্তর কেমন হবে?

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন্স ল্যাবের একজন এসোসিয়েট প্রফেসর ড. ওয়েনি হলমেস কিছুক্ষণের জন্য থমকে গিয়ে পুনরায় এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, আপনি যদি তথ্য প্রযুক্তির পূর্ণাঙ্গ সুবিধা গ্রহণ করতে চান তবে আপনার ইন্টারনেট কানেকশন খুব শক্তিশালী উপাদান হিসেবে বিবেচিত হবে।

বস্তত একজন ব্যাবহারকারীকে যদি শুধুমাত্র ইন্টারনেট সংযোগ এবং সকল সরঞ্জামের সুবিধা প্রদান করা হয়, তখন মূলত ব্যাবহারকারীর দক্ষতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে যদি ব্যাবহারকারী যথেষ্ট দক্ষতাসম্পন্ন না হন তবে যথাযথ নিরাপত্তা রক্ষা এবং নির্দিষ্ট বিষয়ে ফলাফল বের করে আনার বিষয়টি সামনে এসে দাঁড়ায়।

তাই প্রযুক্তিগত বিষয়ে তরুণদের দক্ষতা বাড়াতে এখন যা প্রয়োজন, তা হলো তাদের প্রযুক্তির ব্যবহারে সক্ষম করে তোলা। পাশাপাশি সেই প্রযুক্তি আয়ত্তে আনার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে কেবল শিল্প নয়, মানবজীবনের প্রতিটি মুহূর্তও প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে কৃষি, বাজার, শিক্ষাক্ষেত্রেও এর ব্যবহার সারা বিশ্বেই বেড়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চালু থাকা ‘ক্যাম্পাস ইউনেস্কো’র প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে এমনি একটি সিরিজ ক্লাস, যেখানে তরুনদেরকে বিশ্বের শিল্প বিশেষজ্ঞদের সাথে সংযুক্ত করার বিষয়ে জোর দেয় একই একইসাথে তরুণদেরকে ক্রিটিকল থিংকিংয়ের বিষয়ে সমর্থন করে। যেসকল মানুষেরা প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের দক্ষতাকে অসামান্য করতে পেরেছ প্রোগ্রামটি তাদের সাথে যারা প্রযুক্তি ভীতির কারনে পিছিয়ে গেছে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং মেলবন্ধন তৈরীতে সহায়তা করে থাকে।

সম্প্রতি করোনা কালীন সময়ে বৈশ্বিকভাবে প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যাবহার আমাদেরকে নতুন দিগন্তের দিকে নিয়ে গেছে। যেখানে লকডাউনের সময়ে আমাদের সম্পূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা ভার্চুয়ালি পরিচালিত হওয়ার বিষয়ে জোর আলোচনা চলে। যেটি ইতোপূর্বে কল্পনাতীত ছিল। বিশেষত নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে প্রযুক্তি ভীতি এবং পর্যাপ্ত ব্যাবস্থার অভাবে তারা এই মাধ্যমটিকে গ্রহণে পিছিয়ে যায়।

ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের এক গবেষণায় বলা হয়, ২০১৯ সালে উন্নত বিশ্বে ইন্টারনেটে প্রবেশের হার ছিল ৮৭ শতাংশ যেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই হার ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ১৯ শতাংশ। গবেষনায় বলা হয়, শুধুমাত্র ২০১৯ সালে বিশ্বের প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মানুষ নতুনভাবে ইন্টারনেটে প্রবেশ করে। অর্থাৎ এই ব্যাবধানটি ২০২১ সালের শেষের দিকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে। গবেষণায় আরও বলা হয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইন্টারনেটে ব্যাবহারকারীদের ৯৬ শতাংশ মানুষ এখনও এ বিষয়ে অদক্ষ কিংবা যথাযথ সুযোগ পাচ্ছে না।

তারুণ্যের বিশ্ব বলতে একটি প্রজন্মকে ইঙ্গিতের চেয়ে কোন একটি রাষ্ট্র কিংবা সমগ্র বিশ্বের উদ্যমী মানুষদেরকে বোঝানো গেলে বেশি ভালো হত। তবুও একটি দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে সেখানকার তরুণ প্রজন্ম বড় বেশি ভূমিকা রাখে। আবার যেহেতু বর্তমান হল তথ্যের যুগ। আপনি কতখানি প্রযুক্তিগত দক্ষতার পাশাপাশি তথ্যের দিক থেকে পরিপূর্ণ, সেটি আপনার ব্যাক্তিগত, সামাজিক এবং জাতিগত সার্বিক উন্নয়নে মূল উপাদান হিসেবে দেখা দিবে। কাজেই আমাদের উদ্যোগটি তারুণ্যের দক্ষতাকে এগিয়ে নিতেই বেশি প্রয়োজন।

তরুণ শিক্ষার্থীরাই সমাজ পরিবর্তনের দূত। তরুণরাই ইতিবাচক পরির্তন এনে গড়ে তুলবে সমৃদ্ধ দেশ। এ সময়ে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে একইসাথে প্রযুক্তির জ্ঞান আহরণের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত রাখতে হবে। পাশাপাশি তাদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত খেলাধুলায় সম্পৃক্ত, সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা, ইতিহাস চর্চা এবং বৈশ্বিক জ্ঞান আহরণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

যেসকল নাগরিকদের তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞান রয়েছে এবং যাদের এক্ষেত্রে দুর্বলতা কিংবা সীমিত অবস্থান রয়েছে উভয়ের মাঝে ব্যাবধান কমিয়ে আনা আবশ্যক। আমাদের তরুণদেরকে একইভাবে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিতে পারদর্শী করা বিষয়ে জাতীয় উদ্যোগের প্রয়োজন। কারন উন্নত দেশগুলোর উন্নয়নের মূলে তাদের যে শক্তি রয়েছে আদতে সেটি আধুনিককালের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যতার ফলাফল।

বর্তমানে আমাদের দেশে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর নতুন নতুন স্টার্টআপ কোম্পানি হচ্ছে। তাদের জন্য সরকার হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার পার্কসহ নানা কিছু করছে। একইসাথে যদি সেগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আরও ব্যাপক হারে প্রচার করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের মাথায় প্রথম থেকেই ইনোভেশন (নতুন উদ্ভাবন) বিষয়টি নিয়ে আসা যায়। তাহলে বৈশ্বিক আকাঙ্খা বিবেচনায় আগামী দিনে আমাদের তরুণদের এগিয়ে নেয়া সহজ হবে।

২০১৪ সালে কমনওয়েলথ প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তরুণ বা যুবকদের কর্মসংস্থানে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে৷ বিশ্বের ১৮৩টি দেশের মধ্যে ১৭৭তম৷

একটি বিষয় বুঝতে হবে যে, বাংলাদেশ এখন তরুণদের দেশ৷ দেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার গড় বয়স ২৪-এর নীচে৷ কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ৷ এটি একটি দেশের জন্য আশীর্বাদ, যদি তার জন্য প্রস্তুতি থাকে৷ ডেমোগ্রাফিক অ্যানালাইসিস করে বহু আগেই রাষ্ট্রের এ সময়ের জন্য প্রস্তুতি নেবার দরকার ছিল, যা হয়নি৷

বর্তমান সরকার প্রযুক্তি খাত এবং তরুণদের অংশগ্রহণকে বড় করার চেষ্টা করছে। যেখানে তরুণরাই মূল জনশক্তি৷ আইটি খাতে অনেক তরুণ উদ্যোক্তারাও এগিয়ে আসছেন, যেটি ইতিবাচক৷ কিন্তু সরকারকে ভাবতে হবে, তরুণ দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রমোট করার জন্য আর কী কী করা যায়৷ সেটাই হওয়া উচিত তাঁদের অগ্রাধিকার৷

ফলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই গতিশীল সময়ে প্রযুক্তির উন্নয়নে রোবটিক্সের যে প্রচলন সৃষ্টি হয়েছে এই অবস্থার সাথে আমাদের তরুণদের অভস্ত্যতা আনতে হবে। কারণ আগামীর নেতৃত্ব একইসাথে প্রযুক্তির উদ্ভাবনকে গ্রহণ করে সংকটপূর্ণ সময় উত্তরণের পথ খুঁজে বের করার দক্ষতাকে মানিয়ে নিতে হবে।

সামাজিক উন্নয়ন, নতুন প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), জটিল সমস্যাগুলি সমাধানের মাধ্যমে তরুণদের আগামীদিনের প্রস্তুতি গ্রহণ আবশ্যক। একইসাথে প্রযুক্তির ব্যাবহারের পাশাপাশি এর নৈতিকতা সম্পর্কেও তাদেরকে সচেতন থাকতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক এই উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে আমরা ডিজিটাল নবজাগরণ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি।

আরেকটি তথ্য মতে, প্রযুক্তির কর্মসংস্থান তৈরি করার যে প্রক্রিয়া। এতে আগামীদিনে যে রকম কাজ হবে, এর ১০ শতাংশ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, ২০ শতাংশ করবে প্রযুক্তি। বাকি ৭০ শতাংশের জন্য মানুষকেই লাগবে। অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম কোরসেরার বৈশ্বিক দক্ষতা সূচক বা ‘গ্লোবাল স্কিলস ইনডেক্স ২০১৯’ (জিএসআই) অনুযায়ী, প্রযুক্তিগত দক্ষতার দিক থেকে অপারেটিং সিস্টেম, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো ক্ষেত্রে ভালো করছে বাংলাদেশ।

তবে আমাদের শুধু ভালো করলেই চলবেনা। বরং প্রযুক্তির এমন সম্ভাবনাকে আরও বেশি দক্ষতার সাথে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এখনই প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবন গুলোর বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। নতুন একটি প্রজন্মকে বৈশ্বিক শিক্ষায় পরিচিত করার মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করা এখন সময়ের দাবী।

তথ্যসূত্রঃ বিবিসি

লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article