নাঈমুর রহমান রিজভীঃ
মানুষ হিসেবে আমরা কেউই নিখুঁত নই এবং আমরা কারও কাছ থেকে এটি প্রত্যাশাও করতে পারি না। এমনকি আমাদের নিজেদের থেকেও নয়। নিজেকে গড়ে তুলতে অনেক সময় এবং দীর্ঘ প্রচষ্টার প্রয়োজন। কিন্তু কখনও কখনও আমাদের উপলব্ধি এবং অনুচিত চিন্তার কারণে আমরা নিজেদেরকে ধ্বংস করি। কিছু নেতিবাচক চিন্তা ও অভ্যাস আমাদেরকে ভাবিয়ে তোলে। যেই ভাবনাগুলো আমাদের কর্মে এবং সামাজিকভাবে দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়।
ফলস্বরূপ, এই আত্ম-ধ্বংসাত্মক অভ্যাসগুলি আমাদেরকে প্রতিনিয়ত আরও দুর্বল এবং হীনমন্যতার দিকে ঠেলে দেয়। এমন ৭টি বিষয় রয়েছে যেগুলো আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রায়শই করে থাকি। একইসাথে এটি আমাদের প্রস্ফুটিত অনুভূতিকেও নিঃশেষ করে দেয়। এমন ৭টি বিষয়কে নিচে তুলে ধরা হল।
১. আত্মসংশয়
আমরা সকলেই কোনও না কোনও সময় আত্মসংশয়ের মধ্যে লিপ্ত হই। জীবনের মানে হল আপনার মধ্যে সেরাটি বের করে আনা, কিন্তু যদি আপনি আত্মসংশয়ের গর্তে পড়ে যান তবে আপনি অবশ্যই নিজেকে ধ্বংস করছেন। আত্মসংশয় আপনার আত্মবিশ্বাস এবং আত্ম-সম্মানকে আরও হ্রাস করবে।
২. অন্তহীন তুলনা
কথায় আছে, ‘নিজের জীবনকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করবেননা। সূর্য ও চাঁদের মধ্যে কোনো তুলনা হয় না। তারা আলোকিত হয় যখন এটি তাদের সময় হয়”। আপনি যখন অন্য কারও জীবন দেখেন তখন আরেকটি জিনিস মনে রাখবেন, আপনি যা দেখছেন তা হলো এমন কিছু যা তারা সামাজিকভাবে দেখাচ্ছে; এর পেছনে একটি ভিন্ন গল্পও থাকতে পারে। সবাই সমানভাবে ধন্য। তুলনা আপনাকে কিছুই দেবে না কিন্তু আপনাকে দুর্বল করে তুলবে।
৩. আচ্ছন্ন হয়ে পড়া
আবেশ প্রায়শই আমাদের মন এবং আত্মাকে দখল করে নেয়। অনেকে বিশেষ কোন মানুষ কিংবা বস্তুর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি কারও প্রেমে পড়ে যান তবে এটি সত্যিই ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে এবং যদি প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রেম ফিরে না আসে তবে এটি বিরক্তিতে পরিণত হতে পারে। এবং বিরক্তি আমাদের জীবনে নেতিবাচকতা যোগ করবে। ফলে এই আসক্তি একজন মানুষকে তীব্র গতিবেগে একটি গাড়ির এক্সিডেন্টের মতোই ধ্বংস করে দিবে। যেখান থেকে আর কারোর বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা থাকবেনা।
৪.আত্ম-করুণা
হেরে যাওয়া কিংবা সময়নিষ্ঠার অভাবে অনেকসময় আমরা অনুতপ্ত হই। কিন্তু এমন ভুলের জন্য নিজেদেরকে করুণা দেখানো কোন সচেতন পদক্ষেপ নয়। পরীক্ষায় ব্যর্থতা, প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়া কিংবা পদোন্নতি না হওয়া ইত্যাদি কিছু অর্জন না করার জন্য নিজেদের করুণা করার দরকার নেই। এমন সময়গুলোতে আমরা সাধারণত আমাদের ভাগ্যকে দোষারোপ করি এবং অভিশাপ দিতে শুরু করি। যার মাধ্যমে মূলত আমরা নিজেদেরকে একটি দুর্বল পরিসরের দিকে ঠেলে দেই। কিন্তু এসকল অবস্থায় আমাদের ফিরে আসা এবং ঘুরে দাবড়ানোই একমাত্র পথ হওয়া জরুরি।
৫. একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে অধিক যোগ্যতার অভাব
একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রতিটি মানুষই প্রকৃতিগতভাবে কিঞ্চিৎ বেশি অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন। অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি মানুষকে কোন না কোন নির্দিষ্ট গুণের অধিকারী করে পাঠিয়েছেন। কিন্তু একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের যেটি প্রয়োজন, তা হলো সেই নির্দিষ্ট বিষয়টিকে নির্ণয় করতে শেখা। এটি আপনাকে আপনার সময় রক্ষা এবং প্রচেষ্টার গতিপথ নির্ধারণে সহায়তা করবে। যখন আমাদের মন পরিষ্কার হয়না, তখন আমরা কাজগুলো সঠিকভাবে সংগঠিত করিনা এবং অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো করতে আরও বেশি সময় ব্যয় করি। পরে আমরা আমাদের দিনটিকে বিশৃঙ্খলভাবে ব্যায় করি। যেটি আমাদের মধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে।
৬. আত্মোপলব্ধিতে বাড়াবাড়ি
‘আমি আমার কর্মজীবনে ভাল করছি না’, ‘আমি সক্ষম নই’ ইত্যাদি এমন কিছু নেতিবাচক ভাবনা যেগুলো আমরা তৈরি করি এবং শেষ পর্যন্ত নিজেদের অনুভূতিকে তিক্ত করে তুলি। অর্থাৎ বিষয়টি এমন যে, যখন আমরা পরশ্রীকাতরতায় লিপ্ত হই এবং উচ্চ বিলাসী ভাবনায় ডুবে যাই, কেবল তখনই সকল প্রকার নিরাশা আমাদের উপর ভর করে।
৭. ব্যাক্তিগত আস্থায় ত্রুটি
‘আমাকে কি কুৎসিত দেখাচ্ছে? কেন আমি ওর মতো সুন্দর না? কেউ আমাকে পছন্দ করে না’। এই ধরনের ভাবনাগুলো আমরা আমাদের মনের মধ্যে লালন করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি। এতে একদিকে যেমন মানসিকভাবে আমরা বিপর্যস্ত হই, তেমনি নিজের প্রতি আরও বেশি বিরক্তিকর মনোভাব তৈরী হয়। এবং এই চিন্তাগুলোকে লালন-পালন করে আমরা সাধারণত আমাদের আত্মবিশ্বাসকে নষ্ট করে ফেলি।
লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।