গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক ধারার সূত্রপাত হয়।পরিবর্তন হয় কূটনৈতিক পরিবেশেরও।আমরা আবর্তিত হচ্ছি এক নতুন রাজনৈতিক হাওয়ায়।প্রায় প্রতিটি স্থান নেতৃত্বের অভাববোধ করছে।সেটা হোক আদর্শ নেতৃত্ব বা অসৎ নেতৃত্ব।এমতাবস্থায় অনেকের মধ্যেই রাজনৈতিক বীজের অঙ্কুরদগম ঘটছে।তাদের মধ্যে কেউ মেধাবী ছাত্র,কেউ রাজনীতির মঞ্চের পিছনের ব্যক্তি,কেউ সংগঠক,কেউ স্বেচ্ছাসেবী ইত্যাদি। রাজনীতি বিষয়টা অনেকটা দাবা খেলার মত। দাবা খেলা না জানা লোক যেমন রাজার ঘরে হাতি বসাতে একটুও ভাববে না, তেমন রাজা দিয়ে রাজাকে খেয়ে দিতেও কুন্ঠবোধ করবে না। অথচ দাবা খেলায় সৈন্যকে চালানো সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টা না জেনে দাবা খেলায় নামা যেমন মারত্বক আহাম্মকি। ঠিক সেরকম,রাজনীতির হাল চাল না জেনে,কলা কৌশল রপ্ত না করে এ মাঠে নেমে পড়াও এক ধরণের বোকামি।
একথা অনস্বীকার্য যে,নেতা ও নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন পুরাতনদের কাতারে নতুনদের আগমন একটি স্বপ্ন দেখাতে পারে।নতুনদের সুযোগ করে না দিলে পরবর্তীতে অভিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তির বড্ড অভাব হবে।কিন্তু আমরা যারা এমন স্বপ্ন কে লালন করছি তাদের মধ্যে একদল মেধাবী তরুণের রাজনৈতিক জ্ঞান অল্প থাকলেও রাজনৈতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ,কূটনৈতিক ভাবধারা,স্ক্রিপ্ট না দেখে প্রেস ব্রিফিং,সাংবাদিকদের তাৎক্ষণিক প্রশ্নোত্তর,তাদের মিশন-ভীষণ,সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ইত্যাদি সব কিছু নতুন করে স্বপ্ন দেখার পথ উন্মোচন করছে।তাদের মধ্যে অধিকাংশের ক্ষমতার মোহ নেই বললেই চলে।
একটি উদাহরণ দেখুন,গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাসীন সরকার প্রধান পতন এবং মন্ত্রীসভা ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে গঠিত হয়েছে অন্তবর্তীকালিন সরকার।এই সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে যারা শপথ গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে প্রবর্তিত হয়েছেন,তারা কখনো কল্পনায়ও ভাবেননি,তারা একদিন এদেশের মন্ত্রী পদমর্যাদার কোন পদে আসীন হবেন। তারা কখনো রাজনৈতিক কোন দলের আশ্রয়ে নেতৃত্বের স্বপ্ন হয়ত দেখেন নি। তারা কখনো রাজনৈতিক ব্যক্তি হওয়ার অভিপ্রায় প্রকাশ করেননি।তবে,তারা একেক জন ছিলেন রাজনীতি,কূটনীতি,অর্থনীতি অথবা সমাজনীতির বিশ্লেষক,গবেষক। আমরাই তাদের নেতৃত্বের আসনে বসিয়েছি,তাদের যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে।এবং তারা আমাদের দেশ আমাদের স্বপ্নের মত করে সংস্কার করবে এই প্রত্যাশা রাখি।এবার দেখুন,তারা কিন্তু এই রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক,কূটনৈতিক সহ রাষ্ট্র পরিচালনার সম্যক জ্ঞান একদিনে রপ্ত করেন নি।বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা ও গবেষণা,সময়ের যৌক্তিক দাবী উত্থাপন ও নেতৃত্বদান,নাগরিকদের হক আদায়ের পক্ষে সমর্থন,বিভিন্ন পত্র পত্রিকা পাঠ,বিখ্যাত লেখকদের গ্রন্থ অধ্যয়ন এবং সমাজের পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে উক্ত জ্ঞান অর্জন করেছেন।এবং আজকে তারা তাদের যোগ্য আসনে সমীহ হয়েছেন।
আজকের বাংলাদেশে মেধাবীদের জন্য এই পথ উম্মুক্ত রাখা অতীব জরুরী।দেশের প্রয়োজনে,দশের স্বার্থে মেধাবীদের মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন ও তাদের দান অগ্রনী ভূমিকা রাখতে সক্ষম।পৃথিবী এখন তার আগের অবস্থানে নেই।সূর্যের চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে আজ এমন একটা জেনারেশনে এসে পৌঁছিয়েছে,যে জেনারেশন তথ্য প্রযুক্তির উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।আর আমাদের প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিগণ এই প্রযুক্তিতে তরুণদের থেকে বহুলাংশে পিছিয়ে।এরকম পরিস্থিতিতে যদি পুরাতনদের সাথে নতুনত্বের সমন্বয় সাধন না ঘটে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে কোন স্থান নয় বরং পুরো দেশ নেতৃত্বের অভাবে ট্রয় নগরীর মত পুনরাবৃত্ত ঘটতে পারে।
বলাবাহুল্য সবাই যদি অভিনেতা হয় তাহলে দর্শক হবে কে? আর টিকেট ই বা বেচবে কে!বিষয়টা অনেকটা এরকম।নেতৃত্বের গুণাবলি সবার মাঝে থাকে না।কিন্তু একজন নেতার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা আপনি আয়ত্ব করতেই পারেন।তাই শুধু রাজনৈতিক নেতা হওয়ার স্বপ্ন না দেখে,রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করারও কায়দা কানুন আয়ত্ব করতে হবে।এদেশের ঝানু কূটনৈতিকদের পিছনের চেয়ার গুলো ফাঁকা পড়ে আছে।সেগুলোতেও শুন্যতা যাতে না আসে সে দিকেও নজর রাখতে হবে এই তরুণদের।সবাই যে নীতি নির্ধারক হবে এমনটিও নয়।আপনি আপনার অবস্থান থেকে এদেশকে দিতে পারেন অনেক কিছু।কৃষি,চাকরি,দিনমজুর,হালচাষ প্রতিটি স্তরকেই সাজাতে হবে এদেশের কথা চিন্তা করে।
মহান আল্লাহ যে বিশেষ গুণটি আপনাকে দিয়েছেন তার যথাযথ চর্চা করি।নিজেকে পুরোপুরি আবিষ্কার করি।রাজনীতি,কূটনীতি,অর্থনীতি,সমাজনীতি ইত্যাদিতে নিজের মেধার জানান দিই।ভালো মন্দের বিচার করা শিখি।তাহলে আমরা রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক,কূটনৈতিক ভাবে এদেশ,এদেশের মানুষ তথা এদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অংশীদার হতে পারবো। আপনার মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন হবে।আপনার নতুন নেতৃত্বে এদেশ আবার গড়বে নদ নদীর অববাহিকায়।আপনাকে এ জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে যতদিন উড়বে লাল সবুজের ঝান্ডা।
লেখক পরিচিতিঃ শিক্ষার্থী, বিবিএ,এমবিএ, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, কারমাইকেল কলজে,রংপুর।