28 C
Dhaka
Saturday, June 28, 2025

বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং সম্ভাবনা

Must read

জুবায়ের রহমান:

অজানাকে জানার আগ্রহ থেকেই মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছুটে গিয়েছে অবিরত। অদেখাকে দেখার কৌতূহল থেকে পাড়ি দিয়েছে শতসহস্র মাইল পথ। মানুষের কৌতূহলী মন কখনও জয় করতে চেয়েছে হিমালয়, পাড়ি দিতে চেয়েছে সমুদ্র কিংবা উত্তপ্ত মরুভূমি। অজানা রহস্যকে ভেদ করতে কিংবা নতুন আবিস্কারে যুগের পর যুগ এই ছুটে চলা এখনো বিদ্যমান।

বানিজ্য প্রসার কিংবা নতুনত্বের খোঁজে সেই প্রাচীনকাল থেকে মানুষ নোঙর ফেলেছে সাগরের এক তীর থেকে অন্য তীরে৷ আবার কখনও মানসিক প্রশান্তির খোঁজে সবরকম ব্যস্ততাকে দূরে ঠেলে প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি জমিয়েছে। অবসরের ঘোষণা নিয়ে তারা ছুটেছে প্রকৃতির মায়ায় ঘেরা পাহাড়, বন, সমুদ্র কিংবা প্রাচীন স্থাপত্যশালার নান্দনিক সৌন্দর্যের খোঁজ। আধুনিক প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ ব্যাবস্থা তাদের এই ছুটে চলাকে সহজ করতে সামনে এনেছে নতুনত্ব। বেড়েছে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারও।

মূলত মানুষের এমন ভ্রমণের পিপাসা থেকেই আসে পর্যটন শিল্পের ধারণা। যে দেশ পর্যটনের দিক থেকে সর্বাগ্রে চলছে, সেই দেশগুলো কেবল বিশ্বের বুকে নতুন পরিচায়ক নয়, একইসাথে তাদেরকে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বের এমন কিছু দেশ আছে, যাদের অর্থনীতির ক্ষেত্রে অবদান রাখার মতো তেমন কিছুই নেই। শুধু পর্যটনকে কেন্দ্র করে তাদের অর্থনীতির চাকা ঘুরে। আর এভাবেই পর্যটন সমগ্র বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করে।

বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশ একটি সুপ্রাচীন জনপদ। প্রাচীন ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি প্রাচীনকাল থেকে বিশ্বে বেশ পরিচিত ছিলো। পশ্চিমা বিশ্বেও নানান কারণে এদেশের সুখ্যাতি রয়েছে । বিভিন্ন দেশের পরিব্রাজক এখানকার উর্বর ভূমি, প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য ও নান্দনিক স্থাপত্য কলায় মুগ্ধ হয়েছে বারংবার। এদেশের মুসলিম তাঁতশিল্প ও সোনারগাঁওয়ের সুখ্যাতি ছিলো সারা দুনিয়ায় জুড়ে।

পর্যটনকে আমাদের দেশে আরও শক্তিশালী এবং অনবদ্য করে তোলার মত প্রাকৃতিক শৃঙ্খল এখানে আছে। মানুষ সচরাচর পাহাড়, ঝর্ণা, সাগর, হাওর, প্রাচীন স্থাপত্যকলার নিদর্শনকে কেন্দ্র করে ভীড় জমিয়ে থাকে। বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এর সবকিছুই বিদ্যমান রয়েছে৷ কিছু স্থানের রয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও। তবে এসকল স্থানগুলোকে বিশ্বের বুকে ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে না পারা এবং পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে না পারায় আন্তর্জাতিক পর্যটকদের তেমন আকর্ষণ করতে পারেনি।

আমাদের রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, জলপ্রপাত, প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন, ঐতিহাসিক নিদর্শনসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান; যা পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য যথেষ্ট। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি আমাদের দেশকে পরিণত করেছে একটি বহুমাত্রিক আকর্ষণসমৃদ্ধ অনন্য পর্যটন গন্তব্যে, বাংলাদেশকে গড়ে তুলছে পর্যটকদের জন্য তীর্থস্থান হিসেবে।

২০২৫ সালের মধ্যে পর্যটন শিল্পের সর্বোচ্চ বিকাশে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে কক্সবাজারে পর্যটন অবকাঠামো নির্মাণে ২৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এগুলোতে প্রত্যক্ষভাবে বিনিয়োগ হবে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। পরোক্ষভাবে বিনিয়োগ হবে ১ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া সরকারের প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন, আধুনিক হোটেল-মোটেল নির্মাণ, মহেশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, সোনাদিয়াকে বিশেষ পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা, ইনানি সৈকতের উন্নয়ন, টেকনাফের সাবরাংয়ে ইকো ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ, শ্যামলাপুর সৈকতের উন্নয়ন, ঝিলংঝা সৈকতের উন্নয়ন, চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ, কুতুবদিয়ায় বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্প্রসারণ, চকরিয়ায় মিনি সুন্দরবনে পর্যটকদের গমনের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ডুলাহাজরা সাফারি পার্কের আধুনিকায়ন ইত্যাদি। এছাড়া আরো চারটি নতুন প্রকল্প নিতে যাচ্ছে সরকার।

৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চাঁদপুরের মেঘনার চরে গড়ে তোলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র। ব্লুরিভার আইল্যান্ড রিসোর্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম ক্লাবের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিদিন লক্ষাধিক লোকের ভ্রমণের ব্যবস্থা ও ২০ হাজার পর্যটকের রাতযাপনের সুবিধা থাকবে। প্রায় পাঁচ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। বর্তমান সরকারের পদক্ষেপ বিশেষ করে নাফ ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলার ঘোষণা পর্যটন বিকাশে নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। কারণ এতে বিনিয়োগ করছে থাইল্যান্ডের বিখ্যাত কোম্পানি সিয়ামসিয়াম ইন্টারন্যাশনাল। প্রাথমিকভাবে কোম্পানিটি ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। ২৭১ একর জায়গাজুড়ে প্রায় ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি ১২ হাজারের বেশি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।

একক হিসাবে বলা হয়, ১৬ কোটির বেশি মানুষ, গড়ে প্রতি বছর ১০ ভাগও যদি দেশ ঘুরে দেখে তাহলে বিশাল অংকের অর্থনৈতিক তৎপরতা তৈরি হবে। দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন করেছে পর্যটন শিল্প বিকাশের ফলে। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল —গত আট বছরে ৬ হাজার ৬৯৯ দশমিক ১৬ কোটি টাকা পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে আয় হয়েছে। বিভিন্ন উৎসবকালীন মানুষের ঘুরে বেড়ানোর যে প্রবণতা, তা এই অর্থনৈতিক বিকাশ আরো বাড়িয়ে দেবে। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার পক্ষ অনুযায়ী সারা বিশ্বে ২০২০ সাল নাগাদ পর্যটন থেকে প্রতি বছর ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হবে। ২০৫০ সাল নাগাদ ৫১টি দেশের পর্যটক আমাদের দেশে আসবে। বাংলাদেশের জিডিপির ১০ শতাংশ পর্যটন খাত থেকে আয় করা সম্ভব।

বর্তমানে দেশের মোট জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ আসতে পারে এই খাত থেকে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ‘ভ্রমণ ও পর্যটন প্রতিযোগী সক্ষমতা প্রতিবেদন-২০১৭’ অনুযায়ী, ১৩৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৫তম। দেশের পর্যটন শিল্পের আগামীকে ঢেলে সাজানো হলে এখানে পশ্চিমা বিশ্বের অনেক পর্যটকই আসবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও বহির্বিশ্বে প্রচারের মাধ্যমে এদেশের পর্যটন খাতে বিপ্লব সম্ভব। অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে আরব আমিরাতের দুবাই শহর গত কয়েক বছরে বিশ্বের অন্যতম পর্যটন খাত হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। পশ্চিমা বিশ্বের পর্যটন শিল্পের প্রসারের অন্যতম কারণও এই অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও উন্নত নিরাপদ ব্যবস্থা। সকল দিক বিবেচনায় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সঠিক ব্যাবস্থাপনায় বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে বিপ্লবের সম্ভাবনা রয়েছে।

পযটনের বৈশ্বিক চিত্র ও বাংলাদেশের সমস্যা

১৯৫০ সালে পৃথিবীতে পর্যটকের সংখ্যা ছিল ২৫ মিলিয়ন। ২০১৬ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ২৩৫ মিলিয়ন। ধারণা করা হচ্ছে, ঐ বছর প্রায় ১৩৯ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার পর্যটক সারা বিশ্বে ভ্রমণ করবে। অর্থাৎ গত ৬৭ বছরে পর্যটক সংখ্যা প্রায় ৫০ গুণ বেড়েছে। পর্যটকের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি ব্যাপকতা লাভ করেছে। World trade and Tourism Council এর মতে, বর্তমান পৃথিবীতে ১৪৫ কোটি পর্যটক আছেন। যা ২০২৩ সালে ২০০ কোটি পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে জানান তারা।

যেসকল দেশে সবচেয়ে বেশি পর্যটকদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি সেসকল দেশসমূহ হলো- ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, চায়না, মেক্সিকো, জার্মান, ইংল্যান্ডসহ অন্যান্য কয়েকটি দেশ। এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের মধ্যে সিঙ্গাপুরের মোট আয়ের ৭৫ শতাংশ, তাইওয়ানের ৬৫ শতাংশ, হংকংয়ের ৫৫ শতাংশ, ফিলিপাইন ৫০ শতাংশ, থাইল্যান্ড ৩০ শতাংশ আয় করে এই খাত থেকে। বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে শিল্প, কৃষির পরেই এই খাতের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে তেল সমৃদ্ধ রাষ্ট্রগুলোও তাদের পর্যটনখাতে মনোযোগ দিতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যের বেশ সাফল্য পেয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।

তবে বাংলাদেশে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অবকাঠামোগত দুর্বলতা, বিশ্বের বুকে নেতিবাচক চিত্র ও নিরাপত্তার দুর্বলতার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে এই খাতটি তেমন প্রসার লাভ করতে পারেনি। আমাদের দেশে বিদেশি পর্যটকরা আসেন দু’ধরনের জিনিস দেখতে। এর একটি হচ্ছে ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহ এবং অন্যটি হচ্ছে নিঃসর্গ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। নিঃসর্গ প্রকৃতি আমাদের কম সুন্দর নয়, অথচ এর কাছে যাওয়ার, উপভোগ করার পরিকল্পিত ব্যবস্থা আমরা এখনো গড়ে তুলতে পারিনি। কারণ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশের মধ্যে নেপাল কয়েকটি পাহাড় দিয়ে, মালদ্বীপ কয়েকটি ছোট দ্বীপ দিয়ে যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছে এইখাত থেকে সেখানে বাংলাদেশের সম্ভাবনা খুবই বেশি। দেশের পর্যটন খাতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে পারলে এখানে বিদেশী পর্যটকদের তীর্থস্থান হয়ে উঠবে। এখানে বিশাল সাগর আছে, সেন্টমার্টিনের মতো প্রবাল দ্বীপ আছে৷ এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় নামে-বেনামে অসংখ্য দ্বীপ রয়েছে যেগুলোতে দেশীয় পর্যটকদেরই তেমন ভীড় নেই প্রচারণার অভাবে। আবার সেখানে পর্যটকদের জন্য নেই কোন বিশেষ সুযোগ সুবিধা। ফলে বিশ্বের কাছে আমরা এখনো নিজেদের অবস্থান তেমন জানান দিতে পারিনি।

আমাদের দেশে যারা আসে তাদের বেশিরভাগই দক্ষিণ এশিয়ার। ৪০ ভাগ আসে ভারত থেকে যাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশে আসেন তাদের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও ব্যবসায়িক বন্ধু-বান্ধবদের সাক্ষাত করতে। কাজেই এদের কাছ থেকে আশাপ্রদ বৈদেশিক মুদ্রা আমরা পাই না। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ইউরোপ থেকে বাংলাদেশে আসে ১৬ ভাগ পর্যটক। ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড থেকে আসে শতকরা ৯ ভাগ। বাকি পর্যটক আসে পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে।

এদেশে পর্যটক না আসার অন্যতম আরেকটি কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা। অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে বিদেশি পর্যটকেরা যেমন এদেশে আসতে উৎসাহ পান না তেমনি দেশীয় ভ্রমণ পিপাসুরাও নিরাপদ বোধ করেননা। অথচ, দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্র দেশগুলোতে পর্যটকদের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, বর্তমানে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থানগুলো দূষণের শিকার। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থা না থাকায় ভ্রমণকালে পর্যটকরা তাদের ব্যবহৃত ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণ করছে। এতে স্থানীয় জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়ছে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কক্সবাজারের পৌর এলাকায় প্রতি দিন শহরে ৩০ টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। এসব বর্জ্য নালা কিংবা সমুদ্রে ফেলা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ১০-১৫ বছরের মধ্যে ময়লার গন্ধে থাকা যাবে না। সমুদ্র ভরে যাচ্ছে ময়লা-বর্জ্য।

প্রকৃতি আমাদের দু’হাত ভরে দিলেও আমরা তার অতি অল্পই ব্যবহার করতে পারছি। বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত আমাদের দেশে হলেও আমরা এখনো সৈকতের ১২০ কিলোমিটার ব্যবহার করতে পারিনি। ৪৩ বছর ধরে মাত্র তিন কিলোমিটার সৈকত ব্যবহৃত হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে এগুলোর ব্যবহার বৃদ্ধি করা হবে কিনা তা নিয়েও নেই কোন পরিকল্পনা।

তবে এইসব কিছুকে ছাপিয়ে যদি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে ঢেলে সাজানো সম্ভব হয়, তাহলে কৃষি ও শিল্পের সাথে দেশের অন্যতম একটি অর্থনৈতিক খাত হিসেবে বিশাল ভূমিকা রাখবে। আর এটি সম্ভব হলে বাংলাদেশকে আর কখনোই পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ঘুরবে দেশের অর্থনীতির চাকা। বৃদ্ধি পাবে কর্মসংস্থান ও বিদেশী বিনিয়োগ। ফলে শিক্ষা, সংস্কৃতির উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের জীবনমানও বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। গড়ে উঠবে পরিকল্পিত নগরী ও নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থা।

এটা আমাদের জেনে রাখা ভাল যে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো মূলত তেল নির্ভর অর্থনীতিতে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছে। তারা জানে যে একটা সময় এসে এই তেলের মজুদ কমে আসবে। তাই, দেশগুলোতে তারা সাগরের তীর কে কেন্দ্র করে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে নজর দিচ্ছে। ইতোমধ্যে দুবাইয়ে ও আবুধাবিতে আরব আমিরাত সফলতা পেয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোও পর্যটন স্থানে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। খুব সম্ভবত এক যুগের পরিবর্তনে বিশ্বের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে মরুভূমির দেশগুলো। সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে পশ্চিমা ভ্রমণ পিপাসুদের বাংলাদেশমুখী করতে বিশ্বের বুকে নিজেদের পর্যটনের প্রচার প্রসারে এখনই মনযোগী হতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article