29.1 C
Dhaka
Friday, June 27, 2025

নৃ-গোষ্ঠীদের খাদ্য ও জীবনধারা নিয়ে কুবিতে বর্ণাঢ্য আয়োজন

Must read

সুদীপ চাকমা

নগর ব্যস্থতার যান্ত্রিকতায় ও পড়াশোনার ব্যস্ততার দরুন অনেকের সুযোগ হয়ে উঠে না দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে জানার। কেউ কেউ জানলেও পাহাড়ে ছুটে গিয়ে তাদের খাদ্য ও জীবনধারা স্বাদই নিতে পারে কতজন! তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সেই অভাব পূরণ করতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের নিজস্ব সংস্কৃতি, জীবনধারাও খাবারের বৈচিত্র্য তুলে ধরেছে কুবির ‘আদিবাসী ছাত্র সংসদ’। গত ২০ ফেব্রুয়ারি তাদের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় “ইন্ডিজেনাস ফুড এন্ড কালচারাল এক্সিবিশন-২০২৪”।

সেখানে প্রদর্শন করা হয় চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পিনোন-হাদী, হুত্তি (পানি খাওয়ার পাত্র), হুল্লি (তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবনে ব্যবহৃত মাধ্যম) ও মানচিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশে অবস্থিত আদিবাসীদের অবস্থান। এর পাশাপাশি প্রদর্শন করা হয় চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের অন্যতম জনপ্রিয় খাবারের সমাহার।

জুম থেকে উৎপাদিত চাল, সবজি ও শুঁটকিসহ নানান উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয় এসব খাবার। সেই সাথে এক্সিবিশনের একপাশে প্রদর্শন করা হয় ফটো কনটেস্টে অংশগ্রহণকারী চিত্রগ্রাহকদের পাঠানো আদিবাসীদের জীবনযাত্রার সাথে সম্পৃক্ত ৫০ টিরও বেশি স্থিরচিত্র ।

এই প্রদর্শনীতে মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মারমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘মুন্ডি’। পাশাপাশি প্রদর্শনীতে ত্রিপুরাদের খাবারের মধ্যে ছিল ওয়ান পুংজাক (যা কলাপাতায় সাদা-কালো বিন্নি চালের সংমিশ্রণ, গুড় ও নারকেল দিয়ে তৈরি করা হয়), ওয়ান বেলাপ (বিন্নি চালের গুঁড়া আর চিনি দিয়ে তৈরি করা হয়), মাইসি দিয়ে তৈরি পায়েস (যা জুমের উৎপাদিত একধরণের ছোট দানা জাতীয় মাইসি, গুড়, চিনি, নারকেল, দুধ দিয়ে তৈরি পায়েস), বুট সংজাক( মটর বুট,ডিম,আলু দিয়ে তৈরি খাবার), থাইপং( কাঁঠালের তরকারি), থাবুচুক(জুমে উৎপাদিত আলু), ওয়ান বুদু( চালের গুঁড়া, গুড়+নারকেল তৈরি খাবার) আর ছিল মকাম বা ভুট্টা।

আর চাকমাদের খাবারের মধ্যে ছিল পাজন (যা পাহাড়ি ২৫ পদের বেশি সবজি দিয়ে তৈরি করা হয়), পাহাড়ি বিন্নি চালের পায়েস, দুই প্রকারের কলা পিঠা(যা কলা, নারিকেল, বিন্নি চাল দিয়ে তৈরি করা হয়), ব্যাম্বো চিকেন (পাহাড়ি ও ব্রয়লার মুরগি দিয়ে বাঁশের ভিতর রান্না করা খাবার) ও চিকেন লাক্সু (মুরগির ভর্তা)।

এই আয়োজন নিয়ে থিয়েটার, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক হান্নান রহিম বলেন, ‘শুরুতেই আয়োজকদের ধন্যবাদ দিতে চাই এরকম মনোমুগ্ধকর একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য। উক্ত অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বাহারি খাবারের আয়োজন। উল্লেখযোগ্য একটা বিষয় ছিল পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের সংগ্রামী জীবন নিয়ে ছবি প্রদর্শনী। এরকম অনুষ্ঠান প্রতিবছর আরো বড় পরিসরে হোক সে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।’

‘ইন্ডিজেনাস ফুড এন্ড কালচারাল এক্সিবিশন’ আয়োজনের উদ্দেশ্য নিয়ে আদিবাসী ছাত্র সংসদ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ইতু চাকমা বলেন, ‘ এই আয়োজন মূলত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে আয়োজন করা হয়। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাঙালিদের পাশাপাশি আমাদের বাংলাদেশে যে আরও অনেক জাতিসত্তার মানুষ রয়েছে তা জানান দেওয়া। যাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও যুগ যুগ ধরে লালিত স্বীয় সংস্কৃতি। এবং তার সাথে আমরা আদিবাসীদের জীবনযাত্রা স্থিরচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যাতে অনেকের মনে যে ভ্রান্ত ধারণা থাকে তা দূর হয়।’

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article