নাঈমুর রহমান রিজভী:
ঘুরতে কার না ভালো লাগে। আর পছন্দের জায়গায় যদি থাকে দখিনা হাওয়া, পাখির কলতান, মাঝির জাল টানার দৃশ্য, মাঝে মাঝে অথৈ পানিতে ছোট-বড় নৌকা ভেসে চলা, সূর্যাস্তসহ প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য দেখার সুযোগ মেলে। তবে যেকেউ তা সাদরে গ্রহণ করতে চাইবেন।
বলছিলাম লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা সংলগ্ন রামগতি ও আলেকজান্ডারের বেড়িবাঁধের কথা। যেখানে ঈদ পরবর্তী সময়ে মেঘনার তীরের এমন মনোরম দৃশ্য দেখতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভিড় জমান হাজারো ভ্রমণপিপাসু মানুষ। প্রতি ঈদের মতো এবারের ঈদেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।
প্রতিদিন শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্করাও পরিবার পরিজন ও প্রিয় মানুষের সাথে হাজির হন এখানে। তরুণরা বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে মেতে উঠেন আড্ডায়। ঈদের ছুটিতে এখনও গ্রামে অবস্থান করছেন জীবিকার তাগিদে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই অঞ্চলের মানুষজন। তাই ঈদের দিন থেকে শুরু করে প্রতিদিনই এখানে বিরাজ করে মানুষের উপচে পড়া ভিড়।
স্থানীয় মানুষদের পাশাপাশি জেলাশহর লক্ষ্মীপুর,পার্শ্ববর্তী জেলা নোয়াখালী এবং চাঁদপুর থেকে মোটরসাইকেল, সিএনজি, অটোরিকশা এবং মাইক্রোবাস নিয়ে ঘুরতে আসেন অনেকে। নদীর পানির সাথে মনের আবেগ মিশিয়ে দিতেই যেন একটু ছুটে চলা। প্রকৃতির এমন অপরুপ দৃশ্য সত্যিই আবেগ ছুয়ে যায়। যেন মনের সঙ্গী হয়ে উঠে নদীর ঢেউ।
নোয়াখালীর মাইজদী থেকে ঘুরতে আসা রেদওয়ান শুভ জানান, রামগতির কথা অনেক শুনেছি। আজকে সুযোগ করে বন্ধুদের সাথে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে চলে এলাম। এখানকার সৌন্দর্য সত্যিই অসাধারণ।
বাবা মায়ের সাথে সূবর্ণচর থেকে ঘুরতে আসা ৬ বছরের রাইসা জামান বলেন, এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে। আমি আব্বু আম্মুর সাথে এখানে ঘুরতে এসেছি। আব্বু আম্মুকে বলবো এখানে আমাকে আবার নিয়ে আসতে।
মানুষের এমন ভিড় উপলক্ষ্যে স্থানীয় হকারেরা চটপটি, হালিম, ফাস্টফুডসহ মৌসুমি ফল ও ভাজা বাদামের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। দর্শনার্থীদের আনাগোনায় জমে উঠেছে তাদের ব্যবসা।
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার রামগতি বাজার সংলগ্ন বেড়িবাঁধ ও আলেকজান্ডার বেড়িবাঁধ এবং কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহার ও মতিরহাটসহ মেঘনার তীরের বিভিন্ন স্পটে ঈদ মৌসুমে দর্শনার্থীদের এমন ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তবে এ অঞ্চলে কোনো পরিকল্পিত বিনোদন স্পট না থাকায় মেঘনাপাড় বিনোদন স্পটে পরিণত হয়েছে। তবে প্রশাসনের সুষ্ঠু তদারকি না থাকায় বিভিন্ন সময়ে ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। ফলে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করেছেন স্থানীয়রা।
তাদের মতে ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের আরও আকৃষ্ট করতে এই স্থানগুলোর সৌন্দর্যবন্দন জরুরী। সেক্ষেত্রে বাঁধের চারপাশে ফুলগাছ এবং অন্যান্য সৌন্দর্যবর্ধক গাছ রোপণ করা যেতে পারে। দর্শনার্থীদের বসার জন্য টুল বা টেবিল এবং নদী ভ্রমণের জন্য লঞ্চ বা স্টিমারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বেড়িবাঁধের চারপাশে আলোকসজ্জা, পরিকল্পিত পার্কিং নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি ভ্রমণ নিরাপদ করতে এবং পরিবেশ রক্ষায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ডাস্টবিন নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি। তাহলেই মেঘনার এই বেড়িবাঁধ আরও বেশি উৎসবমুখর হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।
লেখক: শিক্ষার্থী, লোক প্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।