খাদিজাতুল কুবরা:
হাওড় হচ্ছে বিশাল গামলা আকৃতির জলাশয় যা ভূআলোড়নের ফলে সৃষ্ট এবং সেখানে অনেক পানি জমে। যেমন হাকালুকি হাওড়। অন্যদিকে বাওড় হল পুরাতন নদীর গতিপথ পরিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্ট জলাশয়। একে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদও বলা হয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে, বাওড়ের পানি সবসময় একবুক পরিমাণের নিচে নামেনি বিধায় এর নাম হয়েছে বুকভরা বাওড়।
এমনি এক জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত বাওড় হল যশোরের ‘বুকভরা বাওড়’। যশোর সদর উপজেলার ৮ নং দেওয়াড়া মডেল ইউনিয়নের ভেতর অবস্থিত বাওড়টি বাংলাদেশের জলাভূমির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর দক্ষিণে হালসা, পশ্চিমে আরিচপুর, উত্তরে চান্দুটিয়া এবং পূর্বে মঠবাড়ি ও ইছাপুর অবস্থিত। এই পাঁচটি গ্রামকে স্পর্শ করে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত বিচরণভূমি এবং জলজ প্রাণীর অভয়ারণ্য যশোরের বুকভরা বাওড়।
মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা যশোর শহর থেকে পশ্চিমে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মুহাম্মদ সড়ক ধরে মাত্র দশ কিলোমিটার দূরে গিয়েই চোখে পড়ে হাজার বছরের সাক্ষী, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর এক অপরুপ চিত্রের উন্মুক্ত প্রদর্শনী। যার নাম ‘বুকভরা বাওড়’। বাওড়টি কাটাখাল নামক একটি খালের মাধ্যমে আমাদের অতি পরিচিত এবং বিখ্যাত কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত ‘কপোতাক্ষ নদের’ বুকে বিলীন হয়েছে। ৩৬২টি গ্রামের পানি এসে মেশে এই বাওড়টিতে। এটি যশোরের দেশি মাছের অন্যতম অভয়ারণ্য হিসেবেও পরিচিত। নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষদের অবসর কাটানোর জন্যও বাওড়টি একটি উপযুক্ত স্থান বলা চলে। বাওড়টিকে ঘিরে রয়েছে নানান প্রজাতির গ্রামীণ গাছপালা।
দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া না থাকলে প্রায় প্রতিদিন বিকালে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মানুষের সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে বাওড়টি। জায়গাটিতে স্থানীয় মানুষের সমাগম বেশি কিন্তু পর্যটকদের সংখ্যাও একেবারে এড়িয়ে যাওয়া চলে না। তাই পর্যটকদের জন্য একটি পার্কও তৈরি করা হয়েছে। চারপাশের কোলাহলমুক্ত গ্রামীণ পরিবেশ এবং নির্মল বাতাস বাওড়টিকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে।
বাওড়টিকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য গ্রামীণ কল্পকাহিনী ফলে এটি স্থানীয় মানুষদের কাছে আরো তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যশোরের দেশি মাছের যতগুলো অভয়ারণ্য রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম এটি। বাওড়টি পরিচালনার জন্য ‘চান্দুটিয়া সমবায় সমিতি’ নামক একটি কমিটি রয়েছে।
কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার বিশ্বাসের থেকে জানা যায়, মোট ৬ টি গ্রামের ২৫৬ জন সদস্য নিয়ে কমিটি গঠিত। বাওড় পরিচালনা, বাওড়ে মাছ ছাড়া, মাছ ধরা এককথায় বাওড়ের সার্বিক দেখাশোনা করেন কমিটির সদস্যরা।
কমিটির সদস্যরা জানান, এ বাওড়টিতে রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, কমান্ড কার্প, ব্ল্যাক কার্পসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ চাষ করা হয়। এসব মাছ বিক্রয় থেকে শতকরা ৬০ শতাংশ সমিতিতে রাখা হয় এবং বাকি ৪০ শতাংশ সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। তবে বাওড়টি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম বিচরণভূমি হওয়া সত্ত্বেও এখানে যাতায়াতের তেমন কোন সুব্যাবস্থা নেই। মঠবাড়ি থেকে চান্দুটিয়া পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা খুবই শোচণীয় বলা চলে। তবুও মানুষ শহুরে শ্বাসরুদ্ধকর যান্ত্রিক জীবন থেকে অবসর নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য গ্রামীণ পরিবেশে হারিয়ে যাওয়ার জন্য ছুটে আসেন এখানে। তাই এ অংশে জন দুর্ভোগ লাঘবে মঠবাড়ি থেকে চান্দুটিয়া পর্যন্ত উন্নত রাস্তা নির্মাণ প্রয়োজন।
এছাড়া বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক শৃঙ্খল পুরোদস্তুর বিঘ্নিত হচ্ছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত। তাই বাওড়টির সৌন্দর্য ও জীবনীশক্তি ধরে রাখার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যাবস্থাপনা এবং উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ থাকা প্রয়োজন।
এরমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড যেমন সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন, যাতায়াতের সুবিধার্থে রাস্তাঘাট নির্মাণ, বাঁধ নির্মাণ জরুরি। এছাড়াও বাওড়ে পলিথিনসহ বিভিন্ন ময়লা আর্বজনা ফেলা থেকে বিরত থাকার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। জলজ ও জীববৈচিত্র্য আরো সমৃদ্ধ করার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
তবেই শহরের শ্বাসরুদ্ধকর যান্ত্রিক জীবন থেকে ছুটি নিয়ে মানুষ কিছুক্ষণের অবসর নিয়ে গ্রামীণ পরিবেশে হারিয়ে যেতে এখানে ছুটে আসতে চইবেন এইখানে। পরিকল্পিত উন্নয়নে রক্ষা পাবে জীববৈচিত্রের প্রাকৃিতিক শৃঙ্খল।
লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
আমি যশোর এ থাকি,আর নিজের এলাকাতেই এত সুন্দর জায়গা আছে জানতাম না তো।বেশ ভালো হল অনেক অনেক কিছু জানতে পারলাম এবার নিজে গিয়ে জায়গাটি উপভোগ করব
এখন সময় করে গিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করে আসবেন। মতামতের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। বিডিফিচারের সঙ্গে থাকবেন।