মুতাসিম বিল্লাহ||
বগুড়া সদর উপজেলার লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের দোবাড়ীয়া গ্রাম, সেই গ্রামের কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সাবেক ছাত্রদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় দোবাড়ীয়া অগ্রদূত ফাউন্ডেশন। সদ্য পাশ করা বিশ্ববিদ্যালয় তরুণরা ২০১৮ সালে গড়ে তোলে অগ্রদূত ফাউন্ডেশন। যারা তাদের চাকুরীর আয়ের কিছু অংশ দিয়ে এই ফাউন্ডেশনের অর্থের যোগান দেয়।
‘আমরা এলাকায় চিকিৎসা সেবা, চিকিৎসা ক্যাম্প, বিভিন্ন উৎসবে ও শীতে গরীব দুস্থদের উপহারসামগ্রী বিতরণসহ এলাকার কৃতি ছাত্রছাত্রীদের মাঝে সংবর্ধনা হিসেবে বই ও ক্রেস্ট প্রদান করেছি। পরবর্তীতে ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তরা এলাকার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে বই পড়তে উৎসাহিত করতে এলাকায় একটি পাঠাগার স্থাপন করি।’ বিডিফিচারকে বলছিলেন এই পাঠাগার ও ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী সরকার রায়হান।

পাঠাগার ও ফাউন্ডশনের অন্যতম উদ্যোক্তা সরকার রায়হান ছাড়াও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মিন্টু রহমান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্দানের শিক্ষার্থী আলী হাসান সরকার, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী তৌফিক হাসান, স্থানীয় উদোক্তাদের মধ্যে স্বাধীন ইসলাম, আজমল হোসেন, বেলাল, সজল এবং মামুন অন্যতম; যারা নিজেদের মেধা-বুদ্ধি দিয়ে স্থানীয় জনগণের প্রতি নিজেদের সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এ সামাজিক কল্যানমূলক কর্মকান্ডে এগিয়ে এসেছে।
রায়হান জানায়, এলাকার শিক্ষানুরাগী, সমাজ সচেতন এবং জনকল্যাণমমুখী চিন্তার মানুষ ছিলেন প্রয়াত দুলু পাইকার। তাঁর স্মৃতি স্মরণে এ পাঠাগার এর নামকরণ করা হয় দুলু পাইকাড় স্মৃতি পাঠাগার। পাঠাগারের প্রধান উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আফরোজা হোসাইন, যিনি সম্পর্কে দুলু পাইকার এর বোন। এছাড়াও তাঁর আমেরিকা ও কানাডা প্রবাসী ভাইয়েরা এ পাঠাগার প্রতিষ্ঠায় ও বিভিন্ন কার্যক্রমে অর্থনৈতিক সহায়তায় যুক্ত থাকেন।
২০১৮ সাল থেকে শুরু হয় পাঠাগার স্থাপনের কাজ। প্রথমে নিজ গ্রামে পাঠাগার স্থাপনের চিন্তা থাকলেও বৃহত্তর পরিসরে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সামনে নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিই দোবাড়ীয়া গ্রামের নিকটে গড়ে উঠা চার থেকে পাঁচটি ইউনিয়নের প্রাণ কেন্দ্র পীরগাছা বাজারে পাঠাগার স্থাপন করা হবে, যার মাধ্যমে অত্র এলাকার বৃহৎ জনগোষ্ঠী পাঠাগার ও ফাউন্ডেশন থেকে নানা সেবা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে- বলছিলেন রায়হান।
বর্তমানে পাঠাগার কেন্দ্র থেকে তথ্যসেবা পেতে সংযুক্ত করা হয় একটি কম্পিউটার, স্ক্যানার ও প্রিন্টার। এই তথ্য সেবা কেন্দ্র চালু হওয়ার ফলে চাকরীর আবেদন, সরকারী বিভিন্ন সেবার তথ্য, ছাত্রছাত্রীরদের বিভিন্ন আবেদন ও তথ্য সেবা দেয়া হয়। তছাড়া বর্তামানে পাঠাগারে থাকা প্রায় ৬০০ মত বই রয়েছে। যা ইতিহাস, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, ধর্মীয়, সাহিত্য, কবিতা, উপন্যাস, রাজনীতি, ও মুক্তিযুদ্ধ জাতীয় ও আন্তজার্তিক ব্যক্তির জীবনী সম্পর্কিত।
পাঠাগার ও তথ্যসেবার পরিচালনায় আছেন একজন তত্ত্বাবধায়ক। তাঁর নেতৃত্বে সকাল দশটা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত পাঠাগার ও তথ্যসেবা কেন্দ্র খোলা থাকে। প্রতিমাসেই পাওয়া যাচ্ছে চিকিৎসা সেবা, পাঠাগার ও ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সেলুনেও চালু করা হয়েছে পাঠাগার সেবা।
পাঠাগার কার্যক্রমে জেলাগ্রন্থাগার কর্মকর্তা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, ইতোমধ্যে জাতীয় গণগ্রন্থাগার পাঠাগার অন্তর্ভুক্তি সনদও দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে জনকল্যাণমুখী কাজ করতে চায় অগ্রদূত ফাউন্ডেশন, আকাঙ্ক্ষা সরকার রায়হানের।