28 C
Dhaka
Saturday, June 28, 2025

ঈশপঃ পশুপাখিই যার শিক্ষণীয় গল্পের খোরাক

Must read

জুবায়ের রহমানঃ

ছোট বয়সে আমরা সবাই খরগোশ-কচ্ছপের গল্প পড়েছি। মায়ের কোলে কিংবা দাদীর কাছে লেজ কাটা শেয়ালের গল্প শুনে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছি। আঙ্গুর ফল টক বলে বন্ধুদেরকে খোঁচা দিয়েছি। রাজহাঁস ও সোনার ডিমের গল্প পড়ে লোভের পরিণতি জেনেছি। বাঘ শিয়ালের গল্প, ইঁদুর-সিংহের গল্পসহ অসংখ্য ছোট ছোট গল্পের ভীড়ে নৈতিকতার শিক্ষা গ্রহণ সাবলীল করেছিলাম।

তবে এসব গল্পের রুপকার কে, আমরা কি কখনো তার পরিচয় নিয়ে আলোচনা করেছি? নাকি হৃদয়ঙ্গম করা গল্পের ভীড়ে গল্পকারকে হারিয়ে ফেলেছি!

আজ আমরা জানব সেই কিংবদন্তির কথা, যার গল্পের শিক্ষা আজও বিশ্ববাসী আপন মনে ধারণ করে থাকে।
ঈশপ ছিলেন মিসরের ফারাও বাদশাহ আমাসিসের সময়কার লোক। সামস দ্বীপে তিনি বাস করতেন।
কখনো ঈশপ নামে, আবার কখনো এসপ নামে পরিচিত এসব ছোট গল্পের গ্রিক গদ্যাকার। পশুপাখিকে তার গল্পের উপজীব্য হিসেবে নিয়েছিলেন। গল্পের শিক্ষার সাদৃশ্যতা বর্তমান সময়েও বিদ্যমান। ফলে এসকল কালজয়ী ছোটগল্প তাকে করেছে বিখ্যাত। মৃত্যুর আড়াই হাজার বছর পরেও সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে বেঁচে আছেন সমহিমায়।

জীবনের প্রথম দিকে ঈশপ ছিলেন একজন ক্রীতদাস। তখন তার পরিচয় ছিলো ইয়াডমান। কথিত সৌন্দর্যের শ্রী ছিলো না। ফলে বর্ণবাদের কুৎসা গায়ে নিয়েই তার বেড়ে ওঠা।

তবে সব কুৎসাকে মাটিতে রেখে জ্ঞানে ও প্রজ্ঞায় ছিলেন একসময় অনন্য হয়ে ওঠেন তিনি। চারপাশের মানুষের প্রতিদিনকার ঘটনা পরখ করতেন আপন চোখে। ঘটনার ভীড়ে ব্যক্তিদের কাজের ভালোমন্দ ও ফলাফল লক্ষ্য রাখতেন। আর সেসকল মানুষের কর্মকান্ডকে পশুপাখিদের চরিত্রে ফুটিয়ে তুলতেন। এসব গল্পের মাধ্যমে চারপাশের জনজীবনের চিত্র ফুটিয়ে মানুষের চর্ম চক্ষু খুলে দিতেন।

বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস থেকে শুরু করে সব শ্রেণির মানুষ ছিলেন তার গল্পের ভক্ত। ঈশপের জন্মস্থান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে তার দাসত্ব জীবন কেটেছে এশিয়ার মাইনরে। জ্ঞানের প্রখরতার কারণে জীবনের এক সময়ে এসে তিনি দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভ করেন। মুক্ত জীবন পেয়ে ঈশপ বিভিন্ন দেশে ঘুরতে থাকেন। যেখানেই যেতেন গল্পের আসর জমিয়ে ফেলতেন। রক্তে মিশে থাকা গুণ থেকে তিনি বেরিয়ে আসতে পারেননি। ফলে তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসা গল্পগুলো চারদিকে ছড়িয়ে যেতে থাকে। বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকে ভক্ত। তার নীতিশাস্ত্রগুলো মানুষের মনে আবেগের সঞ্চার করত।

দেশ-বিদেশ ভ্রমণের অংশ হিসেবে এক সময়ে তিনি লাইডিয়া নামক একটি রাজ্যে পাড়ি জমান। সেখানকার রাজা ক্রোসাস তাঁর কথা শুনে তাকে দেখার ইচ্ছাপোষণ করেন। তাঁর বুদ্ধিমত্তা দেখে রাজা তাঁর রাজ্যের নৈতিক শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তুলে দেন ঈশপের হাতে।

একপর্যায়ে ক্রোসাস রাজ্যের সভাসদ হিসেবে ঈশপকে নির্বাচিত করলেন। রাজসভায় বিভিন্ন নীতিবাক্যের গল্প বলে রাজাকে বেশ প্রভাবিত করেছিলেন ঈশপ। দিনে দিনে রাজার প্রিয়পাত্র হয়ে উঠলেন তিনি। রাজ্যের বৃদ্ধ থেকে শিশুরা ঈশপের কাছে গল্প শোনার জন্য অস্থির হয়ে যেত।

তবে একসময় এসে এসব খ্যাতি তার জন্যে কাল হয়ে দাঁড়ায়। একবার রাজা ক্রোসাস ডেলফি নামক এক জায়গায় স্বর্ণ বিতরণের জন্য ঈশপকে পাঠান। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে তা বণ্টন করতে গিয়ে। একপর্যায়ে যখন তিনি সেখান থেকে ফিরে আসার মনস্থির করেন। তখন কিছু ষড়যন্ত্রকারীরা তার ব্যাগে একটি স্বর্ণপাত্র ডুকিয়ে দেন। তখন তাকে চোর অপবাদ দিয়ে পাহাড় থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেন।

পরবর্তীতে ঈশপের গল্প দেশ-বিদেশে আরো বিস্তার লাভ করতে থাকে। তার খ্যাতি আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে। তার মৃত্যুর পর গ্রিসের দার্শনিক জিমট্রিয়াস তার গল্পগুলো সংগ্রহ করে রাখেন। ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে ব্যাবিআসের লেখা ঈশপের একটি দুষ্প্রাপ্য সঙ্কলন মাউন্ট এথেসের মঠ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। ঈশপের নামে প্রচলিত লেখাগুলো মূলত সেখান থেকেই সংগৃহীত। সেই থেকে নীতি-নৈতিকতা শেখানোর জন্য ঈশপের গল্প আজও সারা বিশ্বের অমূল্য সম্পদ।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। 

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article