28 C
Dhaka
Saturday, June 28, 2025

দক্ষিন এশিয়ায় ধর্ম ও ইতিহাসের সম্পর্কের একটি পর্যালোচনা

Must read

মুতাসিম বিল্লাহ 

আটটি দেশ নিয়ে দক্ষিণ এশিয়া। ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভূটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান। যদিও দেশগুলোর মধ্যে মেলবন্ধন নেই। ভাষা ও ধর্মের ভিন্নতা পরস্পরকে পৃথক রেখেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ মানুষ প্রধানত ১২টি ভাষায় মাধ্যমে একে অপরের সাথে মতামত বিনিময় করে। ইন্ডিয়াতে অধিকাংশ মানুষ কথা বলে ইংরেজী ও হিন্দীতে। ১৯৬৫ সালের দিকে হিন্দী ভাষার উৎপত্তি। এ ভাষাভাষি জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি ইন্ডিয়াতে। ইন্ডিয়ানরা ইংরেজীকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। ইংরেজী এবং হিন্দী তাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা। পাকিস্তানে প্রধানত ৫টি ভাষায় কথা বলে সেখানকার মানুষ। উর্দু তাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা হলেও মাত্র ৮% মানুষ কথা বলে উর্দুতে। ভাষার মতো ধর্মও দক্ষিন এশিয়ার জনগোষ্ঠীকে একে অপরের থেকে পৃথক করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান ধর্মগুলো হলো- হিন্দু, ইসলাম, শিখ, বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টান।

১.২৯ বিলিয়ন মানুষ এ ধর্মগুলোর অনুসারী। বাংলাদেশে ৯৮% মানুষ কথা বলে বাংলাতে। নেপালে নেপালী তাদের জাতীয় ভাষা। কিন্তু সেখানে এছাড়াও ২০টি ভাষায় কথা বলে সেখানকার অধিবাসীরা। সেখানকার নৃতাত্তি¡ক জনগোষ্ঠী তাদের ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভূটানেও রয়েছে অনেকগুলো ভাষা। শ্রীলঙ্কাতে সিংহলী এবং তামিলরা তামিল ভাষায় কথা বলে। তবে সরকারী অফিস আদালতে ব্যবহার করা হয় ইংরেজি ভাষা। মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয় এবং অফিসিয়াল ভাষা দিবেহী। ইংরেজী এবং ইন্ডিয়ার অন্যকিছু ভাষাও ব্যবহার করা হয় মালদ্বীপে। দক্ষিণ এশিয়ায় ধর্মের সাথে ভাষার বিশেষত্ব আছে। ভাষা দিয়েও ধর্মের মানুষকে আলাদা করা যায়। ভাষার মতো দক্ষিণ এশিয়ার অনেকগুলো ধর্ম মানুষকে একে থেকে অপরকে পৃথক করেছে।

দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ জনগোষ্ঠী হিন্দু ধর্ম পালন করে। বহু ধর্মে ঈশ্বরের অনেক প্রতিনিধি আছে। তাদের আছে দেবতা ও ধর্মীয় সাহিত্য এর মধ্যে প্রধান হলো ঋগ্বেদ, যজুর বেদ, শাম বেদ, অথর্ব বেদ। ধর্মীয় বিশ্বাস মতে তাদের বিনাশ নেই। এক আত্মা ঘুরে ফিরে বারবার আসে। তাদের ধর্ম ও কর্মের বিষয়গুলো রয়েছে। অনুসারী দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় অবস্থানে ইসলাম ধর্ম। এক ঈশ্বর বিশ্বাসী মুসলিম ধর্মের অনুসারীরা। এ ধর্মে বিশ্বাসীদের বলা হয় মুসলিম। তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ আল কুরআন। এবং এদের মতে সর্বশেষ নবী হলো মুহাম্মাদ সাঃ। মুসলিমরা বিশ্বাস করে পৃথিবীতে মানুষ একবারই মানুষকে আসে। শিখ ধর্মের আবির্ভাব হিন্দু ধর্মের সংস্কার আন্দোলনের জন্য ১৬ শতকে। শিখরা বিশ্বাস করে নিরাকার ঈশ্বরে। ভালো কাজ, পরিবারের ভালো সার্ভিস ও প্রার্থনা এবং সেবামুলক কাজ। ৫ম শতক বিসিই তে হিন্দু ধর্মের সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বুদ্ধ ধর্মের উদ্ভব। এ ধর্মের উদ্ভাবক সিদ্ধার্থ গৌতম। আধ্যাতিœক এবং পার্থিব পবিত্রতার জন্য আটটি কাজ করতে হবে। বৌদ্ধধর্ম ইন্ডিয়ায় এর উৎপত্তি হলেও এটি ইষ্টার্ন এবং সাউথ এশিয়ায় প্রসার লাভ করে। খ্রিষ্টান ধর্ম যেটি ২০০০ বছর আগে প্যালেস্টাইনে এর উৎপত্তি স্থান। তারা মনে করে জেসাস তথা ঈসা হলো ঈশ্বরের পুত্র। খ্রিষ্টানদের আবার বেশ কিছু শাখা আছে এর মধ্যে অর্থোডক্স, রোমান ক্যাথলিক, এবং প্রোটেস্ট্যান্ট। তবে সকল খ্রিষ্টানই মনে করে বাইবেল হলো তাদের ঐশ্বরিক গ্রন্থ। আলাদা আলাদা ধর্ম দক্ষিণ এশিয়ার মানুষকে পরস্পরে পৃথক করেছে। কেননা এক একটি ধর্মের অনুসারি মানুষের বিশ্বাস, ভ্যালু, আচরণ ভিন্ন উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে হিন্দু ধর্মে গরু কে ঐশ্বরিক প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যখন মুসলিমরা সেই গরুকে খাদ্য হিসেবে ভক্ষণ করে তখন হিন্দু মুসলিমের মাঝে দাঙ্গা সংগঠিত হয়। আবার কুরআনে বর্ণিত আয়াতের আলোকে একজন পুরুষ ৪ জন নারীকে বিবাহ করতে পারলেও হিন্দুরা কেবলমাত্র ১জন কেই বিবাহ করতে পারে। আবার কাশ্মির এবং পাঞ্জাবের শুধুমাত্র ভাষার কারণে অনেক ধরনের সমস্যায় জর্জরিত।

দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিতর্কঃ

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যয়ের উক্তি ছিলো আমাদের ইতিহাস নেই সুতরাং তুমি আমি আমরা মিলিয়া ইতিহাস লিখিব। কলহনের রাজতরঙ্গীনি এটিকে ইতিহাসের প্রথম বস্তু নিরপেক্ষ গ্রন্থ মনে করা হতো। ইউরোপিয়ানরা ইন্ডিয়ানদেরকে এ হিষ্ট্রিক্যাল পিপল হিসেবে তারা আখ্যায়িত করেন। ১৮০৮ সালে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার রাজাবলীগ্রন্থ লিখেন। প্রাক উপনিবেষিক জ্ঞান কান্ডের উপর দাড়িয়ে তিনি এই ইতিহাস রচনা করেছেন। এর ৭০ বছর পরে তারিনীচরণ চট্ট্রোাপাধ্যয় তিনি একটি বই লিখেছেন। ‘ভারত বর্ষের ইতিহাস’ নামে। তিনি বললেন এখানের ইতিহাস হবে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম এরকম ভাগে। এর পরবর্তী থেকে ভারত বর্ষের ইতিহাসের নাম হলো আদি যুগ (হিন্দু যুগ এর এরপরবর্তী বৌদ্ধদের শাসনের সময়) মধ্যযুগ (মুসলিম শাসনামলের সময়) আধুনিক যুগ (ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের সময়)। বলা হয়ে থাকে এশিয়ার ইতিহাস মানে সেখানে সত্য এবং ফিকশনের সংমিশ্রণ ‘ট্রুথ এন্ড ফিকশন আর সো ব্যানডেড এ্যাজ টু বি স্কার্স্কলি ডিসটিংগুইশ্যাবল’ এবং আরো অভিযোগ করা হয় প্রাচীন ভারতের ধারাবাহিক কোন ইতিহাস নেই।

বিশ শতকে লিখিত কলহনের রাজতরঙ্গীনি গ্রন্থের আগে লিখিত ইতিহাসের কোন গ্রন্থও পাওয়া যায় না। তাদের এই দাবীর বিপক্ষেই ছিলেন উইলিয়াস জোন্স তিনি ১৭৯৩ সালে এশিয়াাটিক সোসাইটিতে দশম বর্ষপূর্তির বক্তৃতা প্রদানের সময়ও এই দাবীর বিপক্ষে অবস্থান জানান। এফ. ই পারগিটার তার গ্রন্থ ‘এ্যানসাইন্ট ইন্ডিয়ান হিষ্ট্যিক্যাল ট্রাডিশন’ যা ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো। এটিই ছিলো প্রথম গ্রস্থ যেখানে জোন্সের সুরে সুর মিলানো হয়। এই গ্রন্থে দেখানো হয় পুরাণই ছিলো প্রাচীন ভারতের আদি পর্বের রাজনৈতিক ইতিহাস বর্ণনার গ্রন্থ। একদল গবেষক ওয়ারডার ১৯৫৯, ১৯৭০ পাঠক ১৯৬৬, থাপার ১৯৮৪, ১৯৯২, মেথা ১৯৯৫প্রমূখরা অতীত ইন্ডিয়ার গ্রন্থসমূহ নিয়ে গবেষণা করেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য তাদের এই গবেষণা অধিকাংশ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে পৌছায়নি। রোমিলা থাপার আতিপাতি করে প্রাচীন ইতিহাসের সীমাবদ্ধতা এর খুটিনাটি বিষয়গুলো খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাকে যৌক্তিকভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলছেন ইতিহাসের বোধ বলতে পশ্চিামারা যদি অতীত ঘটনা সম্পর্কে সজ্ঞানতা বুঝিয়ে থাকেন বিশেষ করে যা তৎকালীণ সমাজের সাথে সম্পর্কিত ছিলো। যার একটি সময়কালও ছিলো। রোমিলা থাপার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন ইতিহাসের বোধ প্রাচীন ভারতবাসীদের ছিলো।

রোমিলা থাপার বলেছেন ভারতীয়দের ইতিহাসের সজ্ঞানতা বুঝতে হলে আগে তাদের দুটি বিষয় বুঝতে হবে প্রথমত, সময় সম্পর্কে তাদের ধারণা এবং দ্বিতীয়ত, তাদের কথ্য ইতিহাস চর্চা যেখান থেকে তা পরবর্তীতে লিখিত উপাদান হিসেবে আসে। হিন্দুদের সময় সম্পর্কিত ধারণা খ্রীষ্টান, ইহুদি এবং মুসলিমদের সময়ের ধারণা থেকে ভিন্ন। এর ঘটনা বর্ণনা করার ধরণও ছিল আলাদা। ফলে তারা ঘটনাগুলোকে ইতিহাস হিসেবে গ্রহণ করতে পারেনি। ইউরোপে সময়ের ধারণা ছিলো- এটি রৈখিক তীরের মতো ধাবমান। সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ সময় মাপনযোগ্য এবং প্রকাশযোগ্য, সময়ের কোন গুন নেই, বিমূর্ত, নশ্বর। যেখানে ইতিহাসের ঘটনাগুলো ধীরে ধীরে প্রগতির দিকে ধাবমান হয়। বৌদ্ধদের সময় সম্পর্কিত যে ধারণা তা ঠিক তরঙ্গের ন্যয়। যেখানে স্বর্ণযুগ যাওয়ার পরে পশ্চাৎ যুগ আসে তারপরে আবার স্বর্ণযুগ ফিরে আসে। অপরদিকে প্রাচীন ভারতীয়দের সময়ের ধারণা ছিলো- এটি রৈখিক নয়। বরং ঘূর্ণায়মান। সময় অসীম এটি অবনিশ্বর। ভগবৎ গীতায় হিন্দুদের সময়কে বলা হয়েছে অবিনশ্বর (ইমপেরিশাবল)। তাদের সময় সম্পর্কিত কেন্দ্রীয় ধারণা মহাযুগ সম্পর্কিত। তার সময়কাল ৪৩,২০,০০০ বচর। যাকে চারটি যুগে ভাগ করা হয়। কৃত, ত্রেতা, ধাপর, কলি। আমরা বর্তমানে কলি যুগে অবস্থান করছি। যা শুরু হয়েছে ৩১০২ বি.সি এর সময়কাল ৪,৩২০০ বছর। এটি ধ্বংস হবে বন্যা এবং আগুন দ্বারা। এই ধ্বংসের মধ্য দিয়ে আবার নতুন একটি মহাযুগের সূত্রপাত হবে। মহাযুগ-৪৩,২০,০০০ প্রত্যেকটি মহাযুগ ৪টি যুগের সমন্বয়ে গঠিত। কৃত, ত্রেতা, ধাপর, কলি। সময়টা ব্রহ্মার জীবন চক্রের সাথে তুলনীয়। ব্রহ্মার জীবন চক্রে কল্প= ৪,৩০০ মিলিয়ন ইয়ারস= ব্রহ্মার ১ দিন। এভাবে তার ৩৬০ দিন এবং ৩৬০ রাত নিয়ে তার ১ বছর।

এভাবে তার ১০০ বছর নিয়ে তার সমগ্র জীবন। এর পরে আবার নতুন ঈশ্বর আসবে। ভারতীয় সময়ের ধারণায় সময়ের গুন আছে। প্রথমটা স্বর্ণযুগ, এর অবনমনের পরে আসে এর থেকে অপেক্ষাকৃত মন্দ যুগ। বুদ্ধের সময়ের ধারণায় দেখি সেখানে সময়কে তরঙ্গের ন্যায় দেখা হয়েছে। যেখানে ভালো যুগের পর খারাপ যুগ এবং তার পরে আবার ভালো যুগ আসবে। দ্বিতীয় সেখানে ইতিহাসকে মুখস্থকরণ বা ওরাল ট্রাডিশন হিসেবে সেখানে চর্চা করা হতো। গাঁথা- একধরনের গান ছিলো বিভিন্ন কাজের গৌরব গাঁথার। নারাসামশিষ (মানুষের প্রশস্তি)। আখ্যান- দেবতা ও অসূরের সাথে যে যুদ্ধ তার বর্ণনা। ইতিহাস- অতীতের ঘটনাগুলো।  পূরাণ- প্রাচীন ঘটনা। ৪ সেঞ্চুরী বি.সি থেকে এই কথ্য ধরণগুলো লিখিত রূপ পায়। গাঁথা, নরশংসী, আখ্যান এগুলো ইতিহাস এবং পূরাণের মধ্যে চলে। ১২০০ সেঞ্চুরী এ.ডি এর মধ্যে এটি কথ্য থেকে লিখিত রূপ পায়। এই কথ্য থেকে লেখ্যরূপে আসার ক্ষেত্রে আর্থ, সামাজিক, ও রাজনৈতিক ভূমিকা ছিলো। ৪০০ সেঞ্চুরী বি.সি থেকে ৪০০ সেঞ্চুরী এ.ডি এই সময়কালে পুরোহিতদের বংশধর হিসেবে আবির্ভাব সুতোহ ও মগদদের। তাদের উপর দায়িত্ব পড়ে ওরাল থেকে বংশলতিকা তৈরী করতে। এ সময়ের রাজাদের আইনী বৈধতা এবং সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন থেকে ৪০০ এ.ডি থেকে ৬০০ এ.ডি তে গুপ্ত রাজবংশ উত্থানের সময়কাল উত্তর ভারতে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সূত্র ধরে নতুন রাজবংশের আবির্ভাব হচ্ছে। এর পরবর্তীকে ইতিহাসের ঘটনাগুলো পাচ্ছি পুরাণ হিসেবে। এই পুরাণ লেখার দায়িত্ব পাচ্ছে ব্রাহ্মানরা। (ঐশ্বরিকভাবে প্রদত্ত ক্ষমতা অর্পণ থেকে এই পূরাণ লেখার দায়িত্ব পড়ে ব্রাহ্মণদের উপর। আমরা ইতিহাসকে লিখিতরূপে প্রথম পাই সংস্কৃতি ভাষায়। পূরাণের দুটি অংশ- প্রথমত, মানব জাতির উৎস তার সাথে মিথের সম্পর্ক, মনুর মহাপ্লাবনে আক্রান্ত হয়েছে বিষ্ণু মৎস আকৃতি ধারণ করে তাকে রক্ষা করেছে। দ্বিতীয়ত মহাভারত থেকে আরো যে তথ্য পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রাজবংশগুলোর পরিচয়। শাসকের নাম এবং তাদের রাজ্যংক। পারগিটার মহাভারতে বর্ণিত যুদ্ধগুলো থেকে ৯৫ টি  বংশধরের নাম তালিকাভূক্ত করেছেন। রাজবংশগুলো ভৌগলিক পরিসর, তাদের আর্থ-সামাজিক রূপান্তর। এর সাথে রাজবংশের সম্পর্ক। তাদের কৃষিভিত্তিক ও চারণভূমি অর্থনীতি সম্পর্কে কমবেশি জানতে পারি। ৭ম সেঞ্চুরী পর্যন্ত এই পূরাণ তৎকালীণ ধর্মীয় সাহিত্যেরই অংশ ছিলো। যা ছিলো সে সময়ের অমূল্য সম্পদ। দ্বিতীয়ত, রাজবংশের সময়কাল, সামাজিক, ভৌগলিক, রাজনৈতিক বিষয়গুলো আলোচনা করতে হতো। খ্রীষ্টীয় ৭ম-১২ শতক পর্যন্ত এ সময়কালে রাজবংশীয় শাসন ভেঙ্গে (ডায়নেষ্টিক রুল) আঞ্চলিক রাজ্যের বিকাশ ঘটেছে। প্রত্যেক সভাকবি তার আঞ্চলিক ইতিহাস লেখার দায়িত্ব পাচ্ছে যাকে বলা হয় চরিত। রাম চরিত, হর্ষচরিত। নির্দিষ্ট অঞ্চলের এবং রাজগোষ্ঠীর মিথগুলো বর্ণনা এবং সেখানে রাজাকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এ সময়ে আমরা আবার লোকাল বংশবলীর বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে। যেমন- কলহনের রাজতরঙ্গীনি। কলহন ব্য্যখা করেছেন ইতিহাস লেখার পদ্ধতি কি হবে। আগের ঐতিহাসিকদের বর্ণনাকে সাবধানতা অবলম্বন করে লিখতে হবে। ঘটনা থেকে নিজেকে বিুক্ত রেখে তাকে লিখতে হবে। লক্ষ্যঃ ভবিষ্যতের পথ দেখানো। মোরাল লেসন ফর দ্যা প্রেজেন্ট। এ রিভিউ অব হিস্ট্রিকাল পারসপেকটিভ ইন ইন্ডিয়ান আর্কিওলজী তে কে. পাদায়া কিভাবে ইতিহাস নাই হয়ে যায়। তা দেখানোর চেষ্টা করেছেন।

সাম্প্রতিককালে ইতিহাস পুনঃলিখন এর প্রয়াসঃ 

সাম্প্রতিককালে ভারতে পক্ষপাতহীন এবং বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস’ লেখার দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন ৪৭ জন প্রসিদ্ধ ইতিহাসবিদ, প্রত্নতাত্ত্বিক এবং একাডেমিশিয়ান। এর বিপরীতে রোমিলা থাপার, ইরফান হাবিবসহ ৫৩ জন ঐতিহাসিক যারা নতুন করে ইতিহাস রচনার উদ্দ্যেগ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। নতুন করে ইতিহাস লেখার আন্দোলন বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা একাডেমিক প্রয়োজনীয়তা থেকে নয় বরং আদর্শিক এবং রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে সৃষ্ট বলে তাদের ধারণা। ইতিহাস নিয়ে যে টানা হেচড়া চলছে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন ১৭৬ জন শিক্ষাবিদ। যে ৪৭ জন ইতিহাসবিদ নতুন করে ইতিহাস রচনার উদ্দ্যেগের দাবি জানিয়েছেন তাদের দাবি-

দর্শন, ভাষাতত্ত¡, সাহিত্য, বিজ্ঞান, মেডিকেল, প্রযুক্তি, শিল্প এ সকল ক্ষেত্রে এমনকি সংস্কৃতি ও সভ্যতায় ভারতীয়দের অবদানকে দেখা হয় সাদাসিদেভাবে। উপরোক্ত শাখা প্রশাখায় ভারতিয়দের যে নিজস্ব উদ্ভাবিত জ্ঞান, পদ্ধতি ছিলো তা উধাও করে ফেলা হয়েছে। ইন্ডিয়ার হিন্দু বৌদ্ধ জৈন শিখ সংস্কৃতিকে প্রকারান্তরে অস্বীকার এবং ইন্ডিয়ান জেনারেশনদের কর্মকান্ড পশ্চিমা ভারতীয়দের একে অবজ্ঞার/অস্বীকার দৃষ্টিতে দেখা হয়। পশ্চিমারা  হিন্দুকে বেদ বংশ বহির্ভূত এবং হিন্দুধর্মের অনুসারীদের চরিত্রের যে চিত্রায়ন করেছে সেখানে তাদেরকে “বিচার বুদ্ধিহীন” “অযৌক্তিক” “কুসংস্কারমূলক” “পশ্চাদগামী” “বর্বোরোচিত” “অসভ্য” এককথায় তাদেরকে তাদের অতীত কে দুষ্পাঠ্য হিসেবে পরিচয় করানো হয়েছে।

ভারতীয় সে সময়কালকে অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ হিসেবে দেখানো হয়। বিশেষ করে কিছু মুসলিম স্বৈরাচারী শাসক এবং তাদের দ্বারা ভিকটিম হওয়া বৌদ্ধ, জৈন, হিন্দু কখনো কখনো খ্রিষ্টান ও মুসলিমদের নিষ্পেষিত হওয়ার  কাহিনী ইতিহাসে আসে। যেখানে এসব স্বৈরশাসকদের ইতিহাসকে গৌরবউজ্জলভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

বর্ণবৈষম্যকে ভারতীয়দের বৈশিষ্ট্যের অংশীদার করে দেখানো হয়েছে।  ঔপনেবিশিক ইতিহাসের উত্তরাধিকারী হয় লেফটিস্ট স্কুল। এমনকি ইংরেজ শাসন আমলে এর অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দৈন্যতা পরিলক্ষিত হলেও সেগুলো আড়াল করে হিন্দু ধর্ম সংস্কৃতিকে “বিস্মৃতি” এবং উপহাস ও তাচ্ছিল্যের সূত্রে তুলে ধরা হয়েছে বর্তমান ইতিহাস পাঠ্যে।

উপজাতী/নৃ-গোষ্ঠীদের ইতিহাসকে বর্ণিত হয়েছে তাচ্ছিল্যের সাথে। তাদেরকে “প্রান্তিক” এবং “নিপীড়িত” হিসেবেই রাখা হয়। ইন্ডিয়ান লেফটিস্ট স্কুলে খুব কমই তাদেরকে স্থান দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে তাদের বিশ্বাস এবং হেরিটেজের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব প্রদান করা হয়নি। সাধারণত হিন্দু কালচার এবং তাদের বিশ্বাস ঐতিহ্যের সাথে উপজাতীয়দের বিশ্বাস ঐতিহ্যকে শত্রæভাবাপন্ন করে উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে ধর্মীয় উগ্রবাদিতা এবং জঙ্গিবাদ সব ধর্মেই রয়েছে।

পক্ষপাতদুষ্ট উৎস ব্যবহার করা হয়েছে। এবং নির্দিষ্ট কিছু কিছু বিষয়কে কোড করে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে থিওরী দাড় করাতে। ভারত সম্পর্কিত উচ্চ গবেষণাকর্ম গত কয়েক বছর ধরে উপেক্ষিত হচ্ছে।

তাদের দাবি ইন্ডিয়ান এবং পশ্চিমা ইতিহাসবিদ এবং প্রতœতাত্তি¡ক, নৃ-তাত্ত্বিক তারা এই লেফটিষ্ট স্কুলের সাথে ভিন্নমত পোষন করছে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা বিকল্প গবেষনা শুরু করেছেন তাদের পূর্বের কাজকে নেতিবাচক ব্রান্ড হতে দেখে। লেফটিস্ট স্কুলগুলোতে প্রফেশনাল ইথিকস এর অনুপস্থিতি অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছে। “জাতীয়তাবাদী” আর “সমাজতন্ত্র” এর বেড়াজালে অনেকে একাডেমিক বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে। ভার্চুয়াল থেকে বহিস্কার এবং পেশাদারিত্বের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানে পুনঃপুন ইতিহাস লেখার প্রবণতা হালের এ সময়েরই যে দাবি সেটি নয়। বরং ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগ হওয়ার পর থেকে। এবং পাকিস্তানে ১৯৭১ সালে যুদ্ধের পর পুনরায় ইতিহাস লেখার প্রবনতা খুব বেশি দেখা যায়। ১৯৯০ এর দিকে রাজনীতিতে চরমভাবে হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে। ১৯৯২ সালে ষোড়শ শতকের অযোধ্যার বাবরী মসজিদ ভাঙ্গনের ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য এবং সমর্থকরা এটি ভেঙ্গে ফেলে। যা মুঘলদের সময়ে তৈরি হয়েছিলো। জহির উদ্দিন মুহম্মাদ বাবর এর সময়কালে। তাজমহলে ১৬৫৩ সালে শাহ্জাহান এখান থেকে পাথর, মার্বেল, মুল্যবান জুয়েলারী, চুরি ডাকাতি ও লুটতরাজ হচ্ছে। উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ইন্ডিয়ার গভর্ণর হিসেবে আসে ১৯২৮ সালে। তিনি এ লুটতরাজের একজন মহানায়ক। সাদা মার্বেল তিনি ইন্ডিয়া থেকে লন্ডনে পাচার করেন। (ড. মুবারক আলি তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন এগুলো ছিলো এই বিল্ডিং ধ্বংস করার পরিকল্পনা থেকে। মুবারক আলি দুঃখ প্রকাশ করে দাবি করেছেন ব্রিটিশরা এ ষড়যন্ত্রের সূচনা করেন কেননা তারা এ অঞ্চলের মানুষদের “ব্যাকওয়ার্ড পিপলস” হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন। কিন্তু এমন নান্দনিক বিল্ডিং তার অন্তরায়। মেজর রিমেন একজন ব্রিটিশ মেজর তিনি ১৮৪৪ সালে দাবি করেছেন তাজমহলের ডিজাইন করেছেন একজন ফ্রেঞ্চ। যার নাম অষ্টিন দে ব্রোদেক্স। কোন ধরনের বিশ্বাসযোগ্য আলামত ছাড়াই তিনি এ দাবি তোলেন। মুলত ইউরোপীয়ানরাই যে এই আর্কিটেকচারটি নির্মাণ করেছে সেটিই প্রমাণ করাই ছিল তার মতলব।

পরবর্তীতে বেশ কিছু হিন্দু ঐতিহাসিক সুরে সুর মিলিয়ে দাবি করলেন তাজমহল সম্রাট শাহ্জাহানের পূর্বে এবং ইন্ডিয়ায় মুসলিম শাসনের প্রাক্কালে ছিল। যদিও তাদের এ দাবি ধোপে টিকেনি ১৭ শতকে শাহ্জাহানের মমতাজ মহল নির্মাণ এর নির্দেশনাকে সামনে রেখে। ১৯০২ সালে লর্ড কার্জন কর্তৃক তাজমহলে সর্বপ্রথম পুনরানয়ন এর কাজ করা হয়। ১৯০৫ সালে এটি আবার দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়গুলোতেও তাজমহল নিয়ে অনেক বিতর্কিত লেখা রয়েছে। তাজমহলঃ দ্যা ট্রু স্টোরি নামে একটি বই লেখেন “ জাতীয় হিন্দু সংশোধনবাদী” পিনএন ওয়াক। এটি ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয়। সেখানে দাবি করা হয় মুলত তাজমহল কে বেদ মন্দির হিসেবে ১১৫৫ দিকে তৈরি হয়। এবং এটি মুসলিম শাসনের পূর্বে তার অবস্থান ছিলো। তিনি আরো দাবি করেন শাহ্জাহান জয় সিংহ থেকে এটি দখল করেন। তিনি আরো দাবি করেন এটি মন্দির ছিল যা নির্মান করেন ১২ শতকে পরমদারি দেব। গঙ্গারাম জর্জ এমনটিই আবার ১৯৯২ সালে এনসাইক্লোপেডিয়া অব দ্যা হিন্দু ওয়ার্ল্ড এ লেখেন। পিএন ওয়াক আরো দাবি করেন মুসলিম এবং খ্রিষ্টান হিন্দু ধর্ম থেকে উৎসারিত। লন্ডনের ওয়েষ্টমিনিষ্টার এ্যাবে এবং তাজমহল একসময় হিন্দু শিব মন্দির ছিল। তিনি লিখেছেন ক্রিশ্চিয়ানিটি কৃষ্ণনীতি থেকে উদ্ভুত। জেসাস ১৩-৩০ বছর এর সময়ে ইন্ডিয়া এসেছিলো। হিন্দু ঋষির কাছ থেকে কৃষ্ণনীতি শেখার জন্য।

কে এন. পানিকর কর্তৃক “আউট সাইডার এ্যাজ এনিমি” শীর্ষক আলোচনায় তিনি বিজিপির কার্যক্রমকে দেখিয়েছেন যারা স্কুলের পাঠ্যক্রমে এমন কিছু অধ্যায় অন্তর্ভূক্ত করেছে যেখানে তারা অতীত ইতিহাসকে সাম্প্রদায়িক জায়গা থেকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। হিন্দুদের হাইলাইট করা হয়েছে। তাদের অবদান দেখানো হয়েছে। অন্যদের ভূমিকাকে দেখানো হয়েছে ধ্বংসসাধনকারী এবং মিথ্যুকরূপে। পানিকর বিজেপির ভূমিকাকে আখ্যায়িত করেছেন স্যাফ্রোনিজিং রিসার্চ ইনষ্টিটিউট হিসেবে। সুভাষ জ্ঞাতাদের দাবি ওয়াক ২০০৭ সালে মারা গেছে কিন্তু তার চিন্তা এখনো জীবিত। ইন্ডিয়ার অনেক ইতিহাসবিদ তাকে “মিথ হিস্ট্রিয়ান” বলে আখ্যায়িত করেছেন। কেউবা তাকে আবার সিউডো হিষ্ট্রিয়ান বলেও অভিহিত করেছেন। কেউ বা তাকে ইরিকভন ডেনিকেন বলে আখ্যায়িত করেন। যিনি একজন সুইস লেখক তিনি তার অনেক বইয়ে দাবি করেছেন পৃথিবীর বড় বড় প্রাচীন ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভগুলো প্রকৃতপক্ষে এলিয়েনরা নির্মান করেছে। তারা অতীতে পৃথিবীতে আসত। ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির প্রেস থেকে বের হওয়া ক্রিয়েটিভ এ নিউ মদিনা এর লেখক ভেনকাট ধুলিপাল পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বের মুসলিমদের ইতিহাস টেনে প্রমান করার চেষ্টা করেছেন পাকিস্তান সৃষ্টির উদ্দেশ্য ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জার্মানীর নাৎসীবাদের সাথে তার মিল রয়েছে। অপরদিকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান হিষ্ট্রির শিক্ষক ধুলিপাল এর লেখার সমালোচনা করেছেন। লেখকের দাবি তিনি যে সোর্স ব্যবহার করেছেন সেটি অস্পষ্ট এবং আন অথেন্টিক।

এদিকে পাকিস্তানিরা তাদের উত্তরসূরী হিসেবে আরবদের সাথে ঐতিহাসিক সেতু বন্ধন দৃশ্যের অবতরণ ঘটান। অনেকটা এমনভাবে যে ৮ শতকের মুহাম্মদ বিন কাসিম হলেন প্রথম পাকিস্তানী। মুসলিমরা মুহাম্মদ বিন কাসিম, মাহমুদ গজনী, মুহাম্মদ ঘুরীকে তাদের হিরো বানাল। অপরদিকে হিন্দুরা রানা পার্থ, শিভাজী গুরু গোবিন্দ সিংহ স্থান দিলেন সর্বোচ্চ আসনে। এবং ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ভারতীয়রা পাকিস্তান সৃষ্টিকে দেখেছেন “আনন্যাচারাল ক্রিয়েশন” হিসেবে। তারা মনে করে পাকিস্তান ইন্ডিয়ার ন্যাচারাল পার্ট। পরশ্রীকাতরতা এবং আত্বগম্ভরীতার জায়গা থেকে জিন্নাহ একে ভাগ করেছেন।

অপরদিকে ২য় সেঞ্চুরী বি.সি থেকে পতঞ্জলী থেকে জানা যায় সে সময়ে ব্রাহ্মী এবং বৌদ্ধদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল সাপে নেউলে। প্রত্নতাত্ত্বিক আলামত সে দাবির প্রমাণ দেয়। শিব-বৈষ্ণব বিরোধ থেকে এর প্রমাণ মেলে। ১১ শতকে আলবেরুনী সে সময়ের হিন্দুদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে। “অহংকারী” “মূর্খপূর্ণ” এবং ”আতœম্ভরি” আল বেরুনী আরো দাবি করেছেন হিন্দুদের ন্যয় কোন ধর্মেই এমনটি নেই। এসব কিছু অস্বীকার করে পলিটিশিয়ান রাজনীতিবিদরা দাবি করেন তাদের প্রবচন ( ভাসুদহেইভা কুটুমবাকাম) অর্থ্যাৎ দ্যা ওয়ার্ল্ড ইজ ওয়ান ফ্যামিলি।

তবে সবার যে মতামত এমন সেটা নয়। ইন্ডিয়াতে ১৭ শতকে এসেছিল ফ্রাঙ্কোয়েস বার্নিয়ের (১৬২০-১৬৮৮) তিনি একজন ফ্রেঞ্চ ডাক্তার তিনি ইন্ডিয়ার বিস্তৃত পরিসর ঘুরেছেন। তিনি হিন্দু অধিবাসীদের ধৈর্য্যশীল ও সহনশীল বলেছেন। ১৮ শতকে জার্মান ফিলোসফার জোহান গোটিফ্রাইড ভন হারডার (১৭৪৪-১৮০৩) তিনি হিন্দুদেরকে “নরম” এবং “ধৈর্য্যশীল” তাদেরকে তিনি দ্যা জেন্টলেস্ট ব্রাঞ্চ অব হিউম্যানিটি” বলে আখ্যায়িত করেছেন। সমসাময়িক সময়ে ইমানুয়েল কান্ট বলেছেন “তারা অন্য ধর্মকে ঘৃনা করেনা তবে তারা মনে করে তারাই সঠিক ধর্মে আছে। ১৯ শতকে দয়ানন্দ স্বরস্বতী (১৮২৪-১৮৮৩) তিনি ১৮৭৫ সালে “আর্য সমাজ” প্রতিষ্ঠা করেন। তার উদ্দেশ্য সর্ব ধর্মকে শত্রুতার উপরে রাখা। কিন্তু তিনি সব ধর্মের উপরে বেদকে স্থান দেন। এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে “প্রতারক” ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাধারণ অজ্ঞ মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তার সমসাময়িক রামকৃষ্ণ (১৮৩৬-১৮৮৬) যিনি ধর্মের সমতার ব্যাপারে কথা বলেছেন। কিন্তু তার নিজস্ব মতামত ছিল “হিন্দু ধর্মই একমাত্র সনাতন ধর্ম”। তার শিষ্য বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০৪) ঋগ্বেদের উক্তি একিস্যাড ভিপরা ভাহুডহা ভেদান্তি) দ্যা ওয়াইজ স্পিক অব হোয়াট ইজ ওয়ান ইন মানি ওয়েস। তার বক্তব্য হচ্ছে ইন্ডিয়া ধৈর্য্যশীল সহিষ্ণু দেশ। তার মতে ৫০০ বছর থেকে প্যাসিফিক হতে আটলান্টিক এ যে রক্ত প্রবাহ মারামারি কলহ তার কারন হিসেবে তিনি মনে করেন মোহাম্মাদিনিজম। ঠিক তাদের কন্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হয় ২০ শতকে বাল গঙ্গাধর তিলন ( ১৮৫৬-১৯২০) যিনি উগ্র হিন্দুবাদের সমর্থক এবং মুসলিম বিদ্বেষী। এম এস গোলওয়ালকার (১৯০৬-১৯৭৩) সে হিন্দুদের সব থেকে সহিষ্ণু ধৈর্য্যশীল বলেছেন। এবং সে মুসলিম, খ্রীষ্টান ও কম্যূনিষটদেরকে ইন্টারনাল থ্রেট হিসেবে শনাক্ত করেন। তার দেশের জন্য। দয়ানন্দ থেকে গোলওয়ালকার তারা সবাই নিজেদেরকে ধৈর্য্যশীল সহিষ্ণু দাবি করেছেন তারা টলারেন্স কে রণযুদ্ধ থেকে বিরত থাকার অর্থে ব্যবহার করেছেন।

লেখক পরিচিতি: শিক্ষক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article