মুতাসিম বিল্লাহ:প্যালিওলিথিক শব্দটি গ্রিক শব্দ প্যালিও- যার অর্থ পুরাতন এবং লিথোস যার অর্থ পাথরের, যার দ্বারা প্রাচীন মানুষের দীর্ঘ সময়ের ইতিহাসকে বুঝানো হয়ে থাকে। প্রাগৈতিহাসিক শিল্পকলায় আমরা দেখি মানুষ লেখালেখি আবিষ্কারের আগে তারা ভাষ্কর্য্য, পেইন্টিং, চিত্রকলার আবিষ্কার করেছে।
এ সময়ে মানুষ যাযাবর জীবন যাপন করত, তারা শিকার করার পাশাপাশি পশুপাখিদের অনুসরণ করত। খাদ্য (ফল,মূলসহ) সংগ্রহ করার ক্ষেত্রেও তারা প্রাণীদের অনুসরণ করেছে। এখন যেমন কৃষি খামার হয়, তখন তেমন ছিলো না, বরং তখন উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে মানুষ পরিচিত হয়নি। এসময়ের মানুষ ছোট ছোট দল, উপদলে বিভক্ত হয়ে বসবাস করত। বরং তারা তীর নিক্ষেপ করে প্রাণী শিকার করত, এই ধারণা তারা পেয়েছিলো পাথর নিক্ষেপ করার ধারণা থেকে।
আমরা কেউই অতীতে গিয়ে দেখতে পাওয়ার সুযোগ পাইনা তবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা বর্তমানের বতসোয়ানার কালাহারি মরুভূমির বুশম্যান নৃ-গোষ্ঠীর জীবনাচরণ দেখে এমনটি ধারণা করেছেন। ধারণা করা হয়, এ সময়ের প্রত্যেক দল ও উপদলে একজন করে দলপতি ছিলো, গ্রুপ প্রধানকে শ্যামন বা আধ্যাত্মিক নেতা/ম্যাজিশিয়ান হিসেবে বলা হয়। যিনি দলকে নেতৃত্ব দিতেন। ধারণা করা হয় প্রাগৈতিহাসিক সময়ে যে আর্টগুলো আমরা পেয়ে থাকি তা হয়ত ধর্মীয় অনুষ্ঠাদির অংশ হিসেবে অঙ্কন করা হতো।
ডায়োরামা আবার এই গুহাচিত্রগুলো যেখানে পাওয়া গেছে তার কাছাকাছি তাদের কবরও পাওয়া গেছে। সুতরাং এটা হতে পারে মৃত মানুষের সৎকারের কোনো অনুষ্ঠানের অংশ বিশেষও। অথবা শিকারের জন্য কোনো দৈব বিশ্বাস থেকে। আমরা এই পেইন্টিং এর দুটি ধরণ পাই আকৃতির দিক থেকে একটি হলো প্রোফাইল ভিউ- যেখানে সাইডের কোনো দৃশ্য দেখানো হতো কিংবা একে অনেকটা বাস্তব/জীবন্ত করে ফুটিয়ে তোলা হতো। সিলহাউট্টি ভিউ- সাধারণ দৃশ্য যেখানে পূর্নাঙ্গ শেইপ দেওয়া হতো। তবে প্রোফাইল ভিউতে যেমন বিস্তারিত দৃশ্যমান হয় এক্ষেত্রে তেমনটি হয় না। আমরা জানি মানবজাতির উৎপত্তি আফ্রিকা থেকে, সেখান থেকে তারা অভিবাসী হয়ে উত্তরাভিমূখে এসেছে, আমরা আফ্রিকাতে তেমন একটা শিল্পকলার চিত্র পাইনা, সেটার একটা কারণ এটাও হতে পারে যে, আফ্রিকার আবহাওয়া সংরক্ষণের খুব ভালো উপযোগি তা বলা যাবে না। কিন্তু ফ্রান্স, উত্তর স্পেন এর অনেক গুহা থেকে আমরা এই চিত্র পাই, যে গুহাগুলো বা ল্যান্ড স্যালেন্ড এর দ্বারা বদ্ধ ছিলো। যার কারণে হাজার হাজার বছর যাবৎ এগুলো সংরক্ষিত ছিলো। এসব চিত্রকলার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষণের উদাহরণ হিসেবে আমরা উলংগ নারীর চিত্র ভেনাস অব উইলেনড্রফ এর কথা বলতে পারি। এটা পাওয়া গেছে অস্ট্রিয়া, সময়কাল আনুমানিক (৩০,০০০ বছর, রেডিওকার্বন ডেটিং) এ। কেন এটা তৈরি করা হয়েছে এর ব্যখ্যায় মনে করা হয় তাকে উর্বরতার দেবী হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। এ সময়ে উর্বরতা প্রয়োজন ছিলো, বেশি সন্তানের দরকার ছিলো তাদের টিকে থাকার জন্য। বা তারা উর্বরতায় বিশ্বাসী ছিলো, নারী ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী ছিলো। সিংহ চেহারার মনুষ্য অবয়বের ভাস্কর্য্য পাওয়া গেছে জার্মানি থেকে। এটার ব্যখ্যাও আমাদের নিকট ক্লিয়ার না। প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করছেন সিংহের ভীতি থেকে তারা এ ধরণের ভাস্কর্য্য তৈরি করেছে, তার পূজা করেছে।
শোভে গুহা ফ্রান্সের এখানে কিছু চিত্র অঙ্কন করা আছে। এটা এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে এখানের অঙ্কিত ড্রয়িং হচ্ছে সবচেয়ে পূরাণ। এর সময়কাল ১৫০০০ হাজার বছর আগে। মেসোলেথিক সময়কাল থেকে কুকুর হয়ে ওঠে মানুষের বন্ধুপ্রতিম। শিকার কাজে তাকে ব্যবহার করে মানুষ। এসময়ে খাবার সংরক্ষণের জন্য লবন দিয়ে মাছ ও মাংসকে শুকিয়ে মানুষ সংরক্ষণ করত। মেসোলেথিক সময়ের (১৫০০০-৮০০০) শিল্পকলার উদাহরণ হতে পারে মানুষের মাথার খুলি যেটা জেরিকো থেকে পাওয়া গেছে। জেরিকো অধিবাসীরা মারা গেলে তারা দেহ থেকে মাথা আলাদা করত এরপরে তারা মাথারখুলিকে প্লাস্টার দিয়ে সংযুক্ত করত। নিউলেথিক সময়কালে (৮০০০-২৩০০) কৃষি, মনুমেন্টাল আর্কিটেকচার, ডমেস্টিক অ্যানিমল এর সময়কাল। শুরুতে তারা তুরস্কের আনাতোলিয়া, পরে মেসোপটোমিয়া এর পর ইউরোপে তারা কৃষিকাজ শুরু করে। ফার্মিং এর ফলে গৃহপালিত পশু লালনপালন করা সহজ হয়, মনুমেন্টাল আর্কিটেকচার তারা শুরু করে। কৃষির প্রয়োজনে হাতিয়ার ও বেড়ে যায়। এসময়ে যেহেতু লেখার প্রচলন শুরু হয়নি ফলে তারা ছবির অংকনের মধ্য দিয়ে গল্প বলত। প্যালিওলিথিক সময়ের চিত্রকলায় শুধু প্রাণীদের উপর ফোকাস করা হয়। তারপরে ‘মনুমেন্টাল আর্কিটেকচার’ আমরা পেয়ে থাকি। যাকে আমরা মেগালিথ বলে থাকি। জেরিকোতে আমরা এমনটি পেয়ে থাকি। স্টোনহেঞ্জ এক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে। অনেক দূর থেকে তাদেরকে এই পাথর বয়ে নিয়ে আসতে হয়েছে। এটাকে তারা প্রিহিস্টরিক ক্যালেন্ডার হিসেবে ব্যবহার করত। এর চারপাশে কবর ছিলো।
চিত্রকর্মের বিষয় হিসেবে শুরুতেই এসেছে মানুষের হাতের ছাপ। মানুষের হাতে রঙ মেখে গুহার দেয়ালে এই হাতের ছাপগুলো তৈরী হয়েছিল। ২০১৪ সালের ঘোষণা অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ার মারকো দ্বীপে পাওয়া গুহাচিত্রটি এ পর্যন্ত প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন যার বয়স আনুমানিক পয়ত্রিশ হাজার বছর। এর আগে ধারণা করা হতো যে, সবচেয়ে প্রাচীন গুহাচিত্রটি ইউরোপে আবস্থিত। ইউরোপে প্রাপ্ত অরিগনেশিয়ান যুগে অঙ্কিত চিত্রকর্মটির বয়স আনুমানিক ত্রিশ হাজার থেকে বত্রিশ হাজার বছর। এটি পাওয়া গিয়েছিল ফ্রান্সের চৌবেট গুহায় এবং রোমানিয়ার কোলিবোয়াই গুহায়।
প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষের প্রধান শিকার ছিল বাইসন ও হরিণ। এই প্রাণীগুলো শিকারের চিত্রই দেখা যায় বেশিরভাগ ছবিতে। এছাড়া ভালুক, ঘোড়া, নেকড়ে ও কিছু কিছু ছবিতে মানুষের ছবিও পাওয়া যায়। ছবিতে এসব জীবজন্তু শিকারের দৃশ্য আহত পশু-পাখী, কিছু অদ্ভুদ প্রাণী, জ্যামিতিক চিহ্ন, সাংকেতিক চিহ্ন পাওয়া যায়। কোনো ছবিতে আছে অস্ত্র-বিদ্ধ পশু, কোনো ছবিতে আছে আহত পশু, কোনোটিতে আবার আছে পশুর পাল। মানুষকে নিয়ে আঁকা ছবিগুলোর মধ্যে আছে ঘোড়সওয়ারের ছবি, নৃত্য, বিভিন্ন ধর্মীয় আচারের ছবি ইত্যাদি। ধারণা করা হয় শিকারের ছবিগুলো আঁকা হতো শিকারের পশুগুলোকে আয়ত্বে আনার জন্য। তখনকার মানুষের মাঝে বাস্তব আর অবাস্তবতার ফারাকবোধ তেমন ছিল না। তারা ভাবত পশু শিকারের ছবি আঁকলে ছবির সম্মোহনী ক্ষমতায় তাদের শিকার সহজ হবে। অর্থাৎ, তাদের কল্পনায় জয় করার ইচ্ছাটাই ফুটে উঠত শিকারের এই ছবিগুলোতে।
গুহাচিত্র বা শৈল-চিত্রণের প্রকারভেদ:
রং ব্যবহার করে যে চিত্রসমূহ পাথরের দেয়ালে প্রধানত প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ করেছিল সেগুলোকে শৈলচিত্র হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। অবশ্য ইংরাজিতে বেশির ভাগ সময়ে Cave paintings না বলে শুধুমাত্র Paintings বলা হয়ে থাকে। এই প্রকারের চিত্রণ ছাড়া আরও একপ্রকার চিত্রণ প্রাগৈতিহাসিক যুগে অনেক গুহা বা শৈলাখন্ড কিংবা শৈলাশ্রয়ে মানুষ চিত্রায়ণ করেছে যেগুলোকে ইংরেজিতে Petroglyph অথবা Rock Carving বলা হয়। এইগুলো চিত্রায়ণের জন্য বিশেষ যন্ত্রের প্রয়োজন হতো, যা তখনকার মানুষ পাথর বা হাড় থেকে বিশেষ আকার দিয়ে তৈরি করে নিতো। এই Petroglyph এর বিশেষ নামকরণ করা হয়েছে Cupule । ধারণা করা হয় উদ্ভিদবিদ্যা থেকে শব্দটি সংগ্রহ করা হয়েছে। উদ্ভিদবিদ্যায় ফুলের গোড়ায় যে পেয়ালাকৃতি ছোট বৃন্ত বা বৃতিটি ফুল ধরে রাখে সেটিকে Cupule বলা হয়। এইগুলোও প্রায় সেই ধরনেরই ছিলো।
১৮৭৯ সালের দিকে উত্তর স্পেনের সান্টাদের এর নিকটবর্তী স্থানে সর্বপ্রথম গুহাচিত্র আবিষ্কৃত হয়। আর এসব উল্লেখযোগ্য গুহাগুলো হলো- আলতামিরা (১৮৭৯, স্পেইন), লাস্কো (ডর্ডন, ফ্রান্স), পেয়ার-নন-পেয়ার (১৮৯৬, ফ্রান্স), ফন্ট-ডি-গুমে (১৯০১, ডর্ডন, ফ্রান্স)। শত শত বছর ধরে পুরাতত্ত্ববিদেরা পাথর বা গুহায় প্রাচীনকালে আঁকা ছবি খুঁজে চলেছেন। বরফ যুগের সময়কার মানুষের আঁকা ঘোড়া বা বাইসনের ছবির সন্ধান মিলেছে ইউরোপের বিভিন্ন গুহায়। তবে অল্প কিছু বিজ্ঞানী দৃষ্টি দিয়েছেন সূক্ষ্ম জ্যামিতিক আঁকিবুকির দিকে। অনেকের কাছ সেগুলো প্রতীয়মান হয়েছে সেই সময়কার শিল্পচর্চা হিসেবে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, এগুলোর মাধ্যমে বিশেষ অর্থ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ভিক্টোরিয়ার পিএইচডি শিক্ষার্থী এবং প্যালিএনথ্রোপলজিস্ট জেনেভিনে ভন পেটজিনজার নতুনভাবে এই জ্যামিতিক নকশার ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর ‘দ্য ফার্স্ট সাইনস’ বইয়ে তিনি লিখেছেন, “বরফ যুগের ইউরোপিয়ানরা ৩২টি বিশেষ অর্থপূর্ণ নকশা ব্যবহার করতেন ভাষার আদান-প্রদানের জন্য। এর ব্যবহার চলে প্রায় ত্রিশ হাজার বছর ধরে”। এই গবেষক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় “কোডব্রেকার” নামে পরিচিত বেøচলে পার্কের নাতনী। সেই সুবাদেই তার বিভিন্ন নকশার পাঠোদ্ধারের আগ্রহ জন্মে। প্রাচীনকাল থেকেই পাথরের আঁকিবুকি তাকে আকর্ষণ করতো। তাঁর গবেষণায় মজার এবং আশ্চর্যজনক তথ্য পাওয়া যায়। তাঁর মতে, বরফ যুগে ইউরোপিয়ানরা কয়েক ধরনের নকশার মাধ্যমে অর্থ প্রকাশ করতেন। এর সাথে নতুন নতুন অর্থপূর্ণ নকশার জন্ম হতে থাকে। তিনি উত্তর স্পেন থেকে শুরু করে রাশিয়ার উরাল মাউন্টেন অঞ্চলে ৩৬৭টি প্যালিওলিথিক পাথের গায়ে আঁকা চিত্র নিয়ে গবেষণা করেছেন।
এসব চিত্র নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার কাজে তিনি ইউরোপ ভ্রমণ করেন তাঁর স্বামী ফটোগ্রাফ্রা ডিলিয়ন ভন পেটজিনজারকে সাথে নিয়ে। তাঁরা দুজন মিলে ৫২টি গুহা ভ্রমণ করেন, যেখানে সবচেয়ে বেশি জনসমাগম ছিলো। টানা দুই সপ্তাহ তারা গুহা থেকে গুহাতে ঘুরে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এসব গুহায় ঘুরে মোট ৩২টি নকশার ব্যবহার প্রত্যক্ষ করেছেন তাঁরা। গোটা ইউরোপে এই নকশাগুলোর প্রচলন ছিল।
এবারে ভারতীয় উপমহাদেশে আবিষ্কৃত কিছু শৈলচিত্রের পরিচয় দেয়া যাক। ভারতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষ যে সমস্ত গুহায় ছবি আঁকতো, সেগুলিকে গুহার ভৌগোলিক সংজ্ঞা অনুযায়ী যথাযথভাবে গুহা বলা চলে না। ইংরেজীতে এগুলিকে Rock Shelter (শৈলাশ্রয়) বা শুধুমাত্র Shelter (আশ্রয়) বলা হয়। এমন কিছু শৈলাশ্রয়, যেগুলোতে চিত্রিত হয়েছে প্রাগৈতিহাসিক মানুষের দ্বারা, সেগুলো হলো-
ভানপুরা: ভীমবেটকার মতই মধ্যপ্রদেশের শেষপ্রান্ত, মান্ডসাউর জেলার মান্ডসাউর শহরের ১২৭ কি.মি. উত্তর-পূর্বে ভানপুরাতেও শৈলচিত্রণ আর শৈলকোরণ পাওয়া গিয়েছে। এই শৈলাশ্রয়গুলোতে প্রায় নিরবচ্ছিন্নভাবে ১২ কিমি. দীর্ঘ শৈলচিত্রণ রয়েছে। বিশ্বের দীর্ঘতম এই শৈলাশ্রয়শ্রেণী চতুর্ভুজনাথ নালা শৈলাশ্রয় নামে পরিচিত। এখানে প্রথম দিকের চিত্রগুলো প্রধানত পশুদের। যেমন: নীলগাই,গন্ডার ভাল্লুক, নেকড়ে, হাতি, বানর, বাইসন, শেয়াল, উট, ঘোড়া। জলচর জীবের সংখ্যাও চিত্রণে কম নেই, যেমন, কুমির, কচ্ছপ। বেশ কিছু পাখির চিত্রণও রয়েছে। মানুষের, এবং কেবলমাত্র পুরুষের চিত্রণই রয়েছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা রেখা দিয়েই বুঝানো হয়েছে। অনেকক্ষেত্রেই দুটি বিপরীত ত্রিভুজের সাহায্যে ও আরও কয়েকটি রেখা দিয়েই মানুষ বোঝানো হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে পোশাক পরিহিত মানুষও দেখানো হয়েছে। চিত্রণে প্রায় সব সময়েই লাল রং ব্যবহার হয়েছে, অবশ্য অল্প ক্ষেত্রে সাদা ও হলুদের ব্যবহারও লক্ষ্য করা যায়।
বিহার ও ঝাড়খন্ডের শৈলচিত্রণ: এই রাজ্যগুলোতে প্রাগৈতিহাসিক যুগের শৈলচিত্রণ, যেগুলো পাওয়া গেছে, সেগুলো তেমন ভাবে বিখ্যাত হয়ে উঠতে পারেনি। বিহারে ১৯৭১ সালে সর্বপ্রথম ড. রাকেশ তিওয়ারি গারওয়া জেলায় শৈলচিত্রণ আবিষ্কার করেছিলেন। এর পর হাজারিবাগ, নওয়াদা, কোডরমা, গিরিডি, জামুই, ভবনাথপুর এবং সতীপাহাড়িতে চিত্রণ আবিষ্কৃত হয়। কৈমুর পাহাড়ের একেবারে শীর্ষের কাছে একটি বেশ বড় গুহায় কয়েকটি চিত্র দেখা গেছে।
এছাড়াও ভারতের বিভিন্ন স্থানে আরোও বেশ কয়েকটি শৈলাশ্রয়ে শৈলচিত্রণের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। বিভিন্ন প্রতœতাত্তি¡ক এবং গবেষকেরা আরোও অনেক গুহাচিত্রের খোঁজ করে চলেছেন। গুহাচিত্রগুলো শুধুই প্রাচীন শিল্পকলার নিদর্শন নয়। এসব চিত্রের মাধ্যমে প্রাগৈতিহাসিক কালের মানুষের জীবন যাপনের পদ্ধতি জানা যায়, বোঝা যায় মানব সভ্যতার পরিবর্তন কিভাবে ঘটেছে। কিছু প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্রের অবস্থান লস্কো গুহাচিত্র, ফ্রান্স লস্কো গুহাটি প্রস্তর যুগের গুহাচিত্রের জন্য সারা বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত। এটি দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের দোর্দনে অঞ্চলের মন্তিনিয়াকে অবস্থিত। ১৯৪০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর চারজন ছেলে লস্কো গুহাতে তাদের হারিয়ে যাওয়া কুকুরের সন্ধান করছিলো। তাদেরই একজন মার্সেল রাবিদাত গুহাটির প্রবেশপথ খোলে এবং সবাই মিলে ভেতরে যায়। সেখানে তারা কিছু চিত্র দেখতে পায়। পরদিন তারা আরো ভালো প্রস্তুতি নিয়ে গুহায় প্রবেশ করে এবং গুহার ভেতরে বিস্ময়কর সব চিত্র আবিষ্কার করে। ১৯৪৮ সালে এটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এই গুহায় ২ হাজারেরও বেশি চিত্র রয়েছে। ধারণা করা হয়, গুহাচিত্রগুলো বিশ হাজার বছরের পুরনো। গুহাটিতে বিভিন্ন প্রাণী, মানুষের অবয়ব এবং বিমূর্ত চিত্র চিত্রায়িত হয়েছে। লস্কো গুহা কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি সেকশন রয়েছে। এগুলো হলো গ্রেট হল অফ বুলস (ষাঁড়ের বিশাল কক্ষ), ল্যাটরাল প্যাসেজ (পার্শ্ব পথ), শাফট অফ দ্য ডেড ম্যান (মৃত মানুষের খাদ), চেম্বার অফ এনগ্রেভিংস (নকশার চেম্বার), পেইন্টেড গ্যালারি (অঙ্কিত গ্যালারি) এবং চেম্বার অফ ফিলাইনস (বিড়ালের কক্ষ)। এই সেকশনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সেকশন হচ্ছে ‘গ্রেট হল অফ বুলস’। এটি মোট চারটি কালো ষাঁড়কে ফুটিয়ে তুলেছে। সতেরো ফুট দীর্ঘ কালো ষাঁড়ের চিত্রকর্মটি গুহা শিল্পকলায় আবিষ্কৃত বৃহত্তম পশুর চিত্র। প্রস্তর যুগের মানুষেরা এসব চিত্র আঁকার জন্য প্রাকৃতিক রঞ্জক পদার্থ ব্যবহার করেছিলো।
আলতামিরা গুহাচিত্র, স্পেন
আলতামিরা গুহাটি উত্তর স্পেনের কন্টাব্রিয়াতে আন্তিয়ানা দেল মার গ্রামের কাছে অবস্থিত। গুহাটি প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৮৬৮ সালে। মোদেস্তো কুবিলাস নামক এক ব্যক্তি প্রথম এটি দেখেন। পরে তিনি এর কথা প্রত্নতত্ত্ববিদ স্যান ডি সাওতোলাকে বলেন। স্যান ডি সাওতোলা গুহার ভেতরে বিভিন্ন গুহাচিত্র দেখে এগুলোকে প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্র বলে চিহ্নিত করেন। কিন্তু তখনকার কেউ এগুলোকে প্রস্তর যুগের গুহাচিত্র বলে মানতে রাজি হয়নি। কারণ সেসময় যতগুলো গুহাচিত্র আবিষ্কার হয়েছিলো তার মধ্যে এটির গুহাচিত্র ছিলো শতগুণে সুন্দর। পরে অবশ্য প্রত্নতত্ত্বিকরা এসব গুহাচিত্রকে প্রস্তর যুগের বলে স্বীকার করেন। বর্তমানে গুহাটি ২৭০ মিটার লম্বা। গুহাটিকে তিনটি সেকশনে ভাগ করা যেতে পারে। যথা: প্রবেশদ্বার, পলিক্রোম রুম এবং গ্যালারি। প্রবেশদ্বার হচ্ছে গুহাটির সেই অংশ যেখানে সেকালের মানুষেরা বসবাস করতো।প্রত্নতত্ত্বিকরা এখানে বিভিন্ন প্রাণীর হাড়ের অবশিষ্টাংশ, ছুরি, কুড়ালের মতো জিনিসের সন্ধান পেয়েছেন, যেটা প্রমাণ করে এখানে মানুষ বসবাস করতো। গুহাটির দ্বিতীয় সেকশন পলিক্রোম রুম গুহাটির ভেতরের দিকে অবস্থিত, যেখানে প্রাকৃতিক কোনো আলো পৌঁছায় না। এই অংশটি বেশ কিছু রঙ দিয়ে চিত্রায়িত করা। বেশিরভাগ ছবিই এখানে। গুহার ছাদটা এখানে বেশ নিচু। তাই তখনকার মানুষেরা হয়তো এই ছাদের দেয়ালজুড়েই ছবিগুলো এঁকেছিলেন। শত শত ছবির মধ্যে বাইসন, হরিণ, বন্য শূকরের ছবিই বেশি। গুহাটির একেবারে শেষাংশে রয়েছে সরু গ্যালারি। কার্বন ডেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করে চিত্রগুলোকে পরীক্ষা করে ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানিয়েছেন, এগুলো প্রায় ১৪-১৭ হাজার বছর আগের আঁকা। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো গুহাটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে।
ক্যাকাডু রক আর্ট, অস্ট্রেলিয়া
ক্যাকাডু ন্যাশনাল পার্ক অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনে অবস্থিত। এখানে রয়েছে রক আর্টস, পাথরের সরঞ্জাম এবং পাথরের শেল্টারসহ হাজারেরও বেশি আদিম সাইট। ক্যাকাডু জাতীয় উদ্যানের রক আর্টগুলো চল্লিশ হাজারেরও বেশি বছর পূর্বের আদি মানব সভ্যতার প্রতিনিধিত্ব করে। ক্যাকাডুর প্রাচীন শিল্প মূলত শিকার, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন সময়কাল থেকে বসবাসরত বিভিন্ন আদিম জনগোষ্ঠীর সামাজিক জীবনকে উপস্থাপন করে। ক্যাকাডু ন্যাশনাল পার্কের সবচেয়ে প্রাচীন চিত্রটি আঁকা হয়েছিলো বিশ হাজার বছর আগে। ক্যাকাডু ন্যাশনাল পার্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্প হচ্ছে উবির রক আর্ট, নোরলাঞ্জি রক আর্ট, নাঙ্গুলুর গ্যালারি। ক্যাকাডু পার্কের এসব পাথর চিত্রে ফুটে উঠেছে তাসমানিয়ান বাঘ, মাগুর মাছ, বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ, গম, সাপের মাথাওয়ালা কচ্ছপের চিত্র। এসবের বাইরে এমন কিছু চিত্রও রয়েছে যেগুলো ক্যাকাডুর পূর্বপূরুষদের পৌরাণিক বিশ্বাসকে উপস্থাপন করে। তবে এসবের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে, উবির রক আর্ট সাইটে প্রাচীন বিশ্বের সবচেয়ে সেরা ‘এক্স-রে আর্ট’ এর নিদর্শন রয়েছে।
সোঁভে গুহাচিত্র, ফ্রান্স
সোঁভে গুহায় রয়েছে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন চিত্রগুলো। এটি দক্ষিণ ফ্রান্সের রোন-অ্যাল্পস অঞ্চলে অবস্থিত। রেডিও কার্বন ডেটিং সিস্টেমে জানা যায়, এর চিত্রগুলো প্রায় ৩২ হাজার বছর আগের আঁকা। ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর মাসে জ্যঁ মেরি সোঁভে এই গুহাচিত্র আবিষ্কার করেন। তিনি এবং তার গুহাপরিব্রাজক দল নদীর ধার দিয়ে হাঁটছিলেন। এসময় তারা গুহা থেকে আলোর রেখা দেখে গুহার ভেতরে যান এবং বিস্ময়কর চিত্রগুলো আবিষ্কার করেন। গুহার দেয়ালে এক হাজারেরও বেশি চিত্র রয়েছে। চিত্রগুলো এঁকেছিলেন প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষেরা। চিত্রগুলোতে বিভিন্ন প্রাণীকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ম্যামথ, বন্য ছাগল, ঘোড়া, গÐার, সিংহ, বাঘ, হায়না এবং ভালুক। বরফ যুগের দুর্লভ কিছু প্রাণীর চিত্রও রয়েছে এসবের মধ্যে। বেশ কিছু চিত্রের বাইরে রেখা টেনে প্রাণীগুলোর গতিশীলতা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। চিত্রের বাইরেও এই গুহায় বিভিন্ন প্রাণীর ফসিলস, আঁচড়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছে। ২০১৪ সালে ইউনেস্কো এই গুহাটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে।
মাগুরা গুহাচিত্র, বুলগেরিয়া
মাগুরা গুহাটি বুলগেরিয়ার অন্যতম বৃহৎ একটি গুহা। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২,৫০০ মিটার। এটি বুলগেরিয়ার ভাইডিন প্রদেশের বেলোগ্রাদচিক অঞ্চলের রাবিশা গ্রামে অবস্থিত। এজন্য একে রাবিশা গুহাও বলা হয়। এর দেয়ালগুলো চমৎকার সব চিত্র দিয়ে চিত্রায়িত করা। ধারণা করা হয়, এই চিত্রগুলো নিওলিথিক এবং ব্রোঞ্জ যুগের শুরুর দিকে আঁকা হয়েছিলো। এই গুহার বিভিন্ন দেয়াল থেকে ৭০০টিরও বেশি চিত্র খুঁজে পাওয়া গেছে। চিত্রগুলোর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন দেব-দেবী, প্রাণী শিকার করার কৌশল, নারী, মুখোশ পরা পুরুষ, উদ্ভিদ এবং তারা। এই চিত্রগুলো আঁকা হয়েছিলো পাখির বিষ্ঠা দিয়ে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, সেই চিত্রগুলো এখনও টিকে আছে। গুহার দেয়ালে একটি সোলার ক্যালেন্ডার স্থাপন করা হয়েছে, যেটি ৩৬৬ দিন এবং পাঁচটি বিশেষ উৎসবকে উপস্থাপন করে। এটি ইউরোপীয় মহাদেশে আবিষ্কৃত প্রাচীনতম সোলার ক্যালেন্ডার। এই গুহাটিতে আট প্রজাতির প্রায় দুই হাজারেরও বেশি বাদুড় বাস করে।
কুয়েভা ডি লাস মানোস, আর্জেন্টিনা
কুয়েভা ডি লাস মানোস গুহাটি আর্জেন্টিনার সান্টা ক্রুজ প্রদেশে অবস্থিত। এটি ‘কেইভ অফ হ্যান্ডস’ অর্থাৎ ‘হাতের গুহা’ নামেও পরিচিত। এমন নামের পেছনে কারণ হচ্ছে- গুহাটিতে অসংখ্য হাতের চিত্র রয়েছে। চিত্রগুলো আঁকা হয়েছিলো প্রায় ৯ হাজার থেকে ১৩ হাজার বছর আগে। শুধু হাতের চিত্রই নয়, এর বাইরেও রয়েছে বিভিন্ন প্রাণী, শিকার করার দৃশ্য, জ্যামিতিক নকশা এবং বিভিন্ন আঁকাবাঁকা নকশা। আর্জেন্টিনার পাতাগোনিয়া অঞ্চলের আদিম লোকজন এসব চিত্র অঙ্কন করেছিলো। গুহাটিকে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে। তবে অবাক করার বিষয়- এই গুহায় যতগুলো হাতের চিত্র রয়েছে তার বেশিরভাগই বাম হাতের চিত্র। প্রতœতাত্তি¡কদের ধারণা- সেকালের মানুষেরা তাদের ডান দিয়ে বাম হাতের উপর রং ছিটিয়ে এই চিত্রগুলো এঁকেছিলো বা ছাপ দিয়েছিলো। হাতে রঙ ছিটানো হয়েছিলো হাড় দিয়ে তৈরি পাইপ দিয়ে। রঙ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছিলো প্রাকৃতিক খনিজ রঞ্জক পদার্থ, যেমন- ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড (কালো), চীনামাটি (সাদা), ন্যাট্রোজারোসাইট (কালো), আয়রন অক্সাইড (লাল, রক্তবেগুনী)।এখন পর্যন্ত এই গুহাচিত্রটি বিশ্বের সবচয়ে দীর্ঘ এবং বিস্ময়কর হাতের ছাপ পাওয়া যায়। এই হাত দিয়ে আসলে কি বোঝানো হচ্ছে তার উত্তর কারো জানা নেই। তবে একটি তত্ত্ব বলে- কিশোরদের দীক্ষা অনুষ্ঠান বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে এই হাতগুলো আঁকা হতো। কারণ বেশিরভাগ হাতই কিশোরদের। বড়দের হাতের সংখ্যা খুব কম। অন্য একটি তত্ত্ব মতে, শিকারে যাওয়ার আগে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে এই হাতগুলো আঁকা হয়েছিলো।
ভীমবেটকা ভারত
ভীমবেটকা গুহাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের রায়সেন জেলায় অবস্থিত। ১৯৫৭ সালে ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিকবিদ ভিএস ভাকান্দর এই গুহাটি আবিষ্কার করেন। এতে ৭৫০টির মতো গুহা-বসতি রয়েছে। এর মধ্যে ২৪৩টি ভীমবেটকা অঞ্চলে এবং ১৭৮টি লাখা জুয়ার অঞ্চলে অবস্থিত। এসব গুহা-বসতিতে অসংখ্য চিত্র পাওয়া গিয়েছে। সবচেয়ে প্রাচীন চিত্রগুলো আঁকা হয়েছিলো ৩০ হাজার বছর আগে। মধ্যযুগে আঁকা ছবিও রয়েছে এর মধ্যে। এত বছর আগের চিত্রগুলো এখনও টিকে আছে, কারণ বেশিরভাগ চিত্রই আঁকা হয়েছে গুহার একেবারে ভেতরের দিকে। তবে গুহার উপরের অংশেও কিছু চিত্র আঁকা হয়েছে এবং সেগুলো এখনো টিকে আছে। বেশিরভাগ চিত্রই আঁকা হয়েছে লাল এবং সাদা রঙ দিয়ে। রঙ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছিলো কাঠকয়লা, ম্যাঙ্গানিজ, লাল পাথর। চিত্রগুলোতে সেসময়ের সামাজিক জীবন-যাপন, শিকার, পশুর লড়াই, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কিছু চিত্র উৎসর্গ করা হয়েছে শুধুমাত্র হিংস্র প্রাণীদের। আঁকা হয়েছে বাঘ, শূকর, হাতি, গন্ডার, হরিণ এবং বানরের চিত্র। ২০০৩ সালে ইউনেস্কো এই গুহাটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে।
ছেরা ডা ক্যাপিভারা, ব্রাজিল
ছেরা ডা ক্যাপিভারা গুহাচিত্র দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে প্রাচীন গুহাচিত্র। এটি ব্রাজিলে অবস্থিত। গুহাটিতে প্রায় ৩০ হাজারের মতো চিত্র পাওয়া গেছে। বেশিরভাগ চিত্রই ২৫ হাজার বছর আগের আঁকা। এগুলো আঁকা হয়েছিলো লাল রঙ দিয়ে। চিত্রগুলোতে শিকার, নাচ এবং মানুষ ও বিভিন্ন প্রাণীর গঠন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই গুহাচিত্রগুলো আমেরিকা মহাদেশে মানব সভ্যতার প্রথমদিকের দলিল হিসেবে পরিগণিত। ১৯৯১ সালে ইউনেস্কো এই গুহাটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে।
লাস গাল, সোমালিয়া
লাস গাল হচ্ছে উত্তর-পশ্চিম সোমালিয়ায় অবস্থিত একটি জনপ্রিয় প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট। ২০০২ সালে ফ্রান্সের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক দল গুহাচিত্রগুলো আবিষ্কার করেছিলেন। তারা যখন এই গুহাটিতে বসতির সন্ধানে খনন করছিলেন, তখন এই চিত্রগুলোর দেখা পান। গুহাটিতে নিওলিথিক যুগের অসংখ্য চিত্র রয়েছে যেগুলো প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার বছর আগে আঁকা হয়েছিলো। এই চিত্রকর্মগুলো আফ্রিকার কয়েকটি সেরা সংরক্ষিত গুহা চিত্রকর্ম হিসেবে বিবেচিত। লাস গাল কমপ্লেক্সটিতে মোট আটটি প্রাচীন গুহা রয়েছে। বেশিরভাগ চিত্রই আঁকা হয়েছে কমপ্লেক্সটির প্রথম গুহাতে। বেশিরভাগ চিত্রতেই ফুটে উঠেছে হিংস্র প্রাণী এবং গরুর চিত্র। গরুর চিত্রটি এমনভাবে আঁকা হয়েছে যেন তাদেরকে আনুষ্ঠানিক পোশাক পরানো হয়েছে। লাস গাল কমপ্লেক্সের বাকি গুহাগুলো বসবাস এবং কারাগার হিসেবে ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে এটি সোমালিয়ার জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ সাইট।