শালবন বিহারের পাদদেশে লাল-সবুজে ঘেরা উপমধ্য-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় হাঁটি হাঁটি পা পা করে ১৮ বছরে পদার্পণ করেছে। ২০০৬ সালে ২৮ মে দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে। সেই দিন থেকে প্রতি বছরের ২৮ মে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে উদ্যাপন করা হয়। প্রথমে ৭টি বিভাগে ৩০০ শিক্ষার্থী ও ১৫ জন শিক্ষক দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ৬টি অনুষদে ১৯টি বিভাগে প্রায় ৭১৩৯ শিক্ষার্থী ও ২৬৫ জন শিক্ষক নিয়ে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালু আছে।
বর্তমানে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে উৎসাহ বাড়াতে প্রথমবারের মত ২৫৭ জন শিক্ষার্থীকে মেধাবৃত্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষকদের গবেষণামুখী করতে চালু হয়েছে গবেষণা অ্যাওয়ার্ড। প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে তৈরি হয়েছে থিম সং। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন- চাঁদনী আক্তার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দিবসে প্রত্যাশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ তম আবর্তনের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী অন্তু চন্দ অর্ঘ্য বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা থেকে বের হয়ে আসুক। গুচ্ছ পরীক্ষার কারণে দিনদিন আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠছে। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের জন্যে হল ক্যাফেটেরিয়া এবং ক্যাম্পাসের আশেপাশের খাবারের দোকানের খাবারের মান ও দাম নিয়ন্ত্রণে কতৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরী।
তবে একজন সনাতন ধর্মালম্বী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা মন্দির না থাকায় এখনো আফসোস রয়ে গেছে। তাই বর্তমান ক্যাম্পাসে একটি মন্দির স্থাপনের ব্যাবস্থা নিলে সনাতনী শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে পারবে। সব কিছুর উর্ধ্বে, শিক্ষার্থী বান্ধব পরিবেশ বজায় রাখুক এই প্রত্যাশা করছি।’
নিজের বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানের দেখতে চেয়ে অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ তম আবর্তনের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়দা ফৌজিয়া নদী বলেন, ‘আমরা আগামীর বিশ্ববিদ্যালয় কে জাতির গর্ব হিসেবে দেখতে চাই৷ দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে আন্তর্জাতিক মানের একটা বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার্থীরাও যেন কুবিতে এসে নিজেদেরকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারে। এইজন্য আমাদের সকলকে এগিয়ে যেতে হবে।’
১৬ তম আবর্তনের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ নোমান বিশ্ববিদ্যালয়ের দিবসে চারুকলা বিভাগের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাহ্যিক সৌন্দর্য বর্ধনে জন্য চারুকলা অনুষদ বড় একটি ভূমিকা পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ একটি চারুকলা অনুষদ চালু করা উচিত। যাতে আগামী একশো বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কালচারের ছাপ লেগে থাকুক বিশ্ববিদ্যালয়ের উঠোনে ও দেওয়ালে।’
একই বর্ষের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সিনথিয়া রহমান জানান বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক সুন্দর। বর্তমান গবেষণা ও উন্নয়নের দিক দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে অনেক শিক্ষার্থী এখান থেকে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। আশা করি, ভবিষ্যতেও এই সংখ্যা আরও এগিয়ে যাবে। একদিন তারাও শিরদাড়া উঁচু করে জানান দিবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সমগ্র দেশ ও জাতির গর্ব।’
লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।