28 C
Dhaka
Saturday, June 28, 2025

তাল বৃক্ষে শিল্পের কারিগর

Must read

সাইফুল ইসলাম তাওহীদ

লালমাটির সবুজ ক্যাম্পাস কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছোট ছোট পাহাড় আর গাছগাছালিই এই ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য। ঋতুচক্রে এ বিশ্ববিদ্যালয় সাজে নতুন নতুন সাজে। চক্রের ধারায় বৈশাখ জ্যেষ্ঠ মাসে এই ক্যাম্পাস হয়ে উঠে চিরসবুজ। তখন আলাদাভাবে সবার দৃষ্টি কারে কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে অবস্থিত তালগাছটি। কারণ বাবুই পাখি তখন নতুন করে বাসা বাঁধতে শুরু করে। যা ক্যাম্পাসের অসংখ্য সুন্দরের মাঝে অন্যতম একটি এই বাবুই পাখির তালগাছ।

গাছটি রাস্তার পাশে হওয়ায় এখানে মানুষের চলাচলও বেশি। তাই তো একপলক দেখতেও দাঁড়িয়ে যান কেউ কেউ। স্নিগ্ধ বাতাসে এক পায়ে দাঁড়িয়ে গাছটিতে দোল খাওয়া বাবুইয়ের বাসাগুলো সবার মনেই যেন এক অদৃশ্য দোল দিয়ে যায়। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাখির ডাকাডাকি শুনা আর বাসায় ঝুলে থাকার দৃশ্য যে কারো চোখে প্রশান্তি এনে দেয়।

বাবুই পাখি মানব বসতির কাছাকাছি বাসা বেঁধে থাকে। তাই তো কুবির ছড়ানো-ছিটানো অসংখ্য তালগাছ থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় মসজিদ, ক্যাফেটেরিয়া এবং বঙ্গবন্ধু হলের ঠিক মধ্যভাগের তালগাছটিতে নিপুণ কারিগর এই বাবুইগুলো শৈল্পিকভাবে তৈরি করেছে তাদের বাসা। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সাপুড়ের বাঁশি গুলো উল্টোভাবে ঝুলে আছে তাল গাছের পাতায়। কুবির এই তাল গাছে গোলাকার এবং লম্বা এই দুই ধরনের পাখির বাসা লক্ষ্য করা যায়।

বাবুই পাখির বাসা বোনার পিছনে মজার বিষয়টি হলো পুরুষ পাখিটিই বাসা বোনে থাকে। পুরুষ পাখিটি বাসা বোনার কাজ শেষের দিকে হলে, স্ত্রী পাখিকে ডেকে নিয়ে আসে বাসা দেখাতে। স্ত্রী পাখির বাসা পছন্দ করলেই পুরুষ পাখির সার্থকতা। স্ত্রী পাখির উৎসাহ, উদ্দীপনা, আশা এবং অনুপ্রেরণায় দিনরাত কাজ করে বাসা বোনার বাকি কাজ শেষ করে ফেলে পুরুষ পাখিটি। স্ত্রী পাখিটি ডিম দিলে আবার নতুন বাসা বোনার কাজ শুরু করে পুরুষ পাখিটি। এক মৌসুমে ছয়টি বাসা তৈরি করে ছয়টি নতুন সঙ্গীর সাথে থাকে পুরুষ পাখিটি।

গ্রীষ্মকাল বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। এরা সাধারণত বীজ, পোকামাকড়, ঘাস, ফুলের মধু, রেনু ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। বাবুই পাখি ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

এই সুনিপুণ কারিগর বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এরা দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। তাইতো আশেপাশে আরও তালগাছ থাকলেও একটি গাছেই তাদের বাসা ঝুলে থাকতে দেখা যায়। মজবুত এই বাসাগুলো ঘাস, নলখাগড়া ইত্যাদির সমন্বয়ে তৈরি করে এর ভিতরে কাঁদার প্রলেপ দেয়া হয় রোদ বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। ঠোঁট দিয়ে শৈল্পিক বুনন এবং পেট দিয়ে ঘষে ঘষে গোলাকার মসৃণ বাসা তৈরির কৌশলটি স্বচক্ষে না দেখে কল্পনা করাও অসম্ভব।

লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। 

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article