নাঈমুর রহমান রিজভী
সমুদ্রপৃষ্ঠে সৃষ্ট বৃষ্টি, বজ্র ও নিম্নচাপকে ঘূর্ণিঝড় বলা হয়ে থাকে। যা নিরক্ষীয় অঞ্চলে উৎপন্ন তাপকে মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত করে। উপকূলের মানুষের অনেক ক্ষয়ক্ষতি করলেও ঘূর্ণিঝড় মূলত পৃথিবীতে তাপের ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে। ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনলে সারা পৃথিবীর মানুষ আতকে উঠলেও এমনও অনেক ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রে সৃষ্টি হয়, যা সমুদ্রেই মিলিয়ে যায়। ফলে এই ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে আমাদের কিছুই জানা হয় না। কেবল উপকূলে আঘাত হানা ঝড়গুলো সম্পর্কেই আমরা জানতে পারি।
আমাদের দেশে ঘূর্ণিঝড়ের কথা বলতে গেলে বয়স্কদের চোখে মুখে ভেসে আসে ১৯৭০ সালের ভয়াবহতার কথা। যার নাম শুনলেও এখনো আতকে উঠেন সাগর পাড়ের মানুষগুলো। যা ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর ২২৪ কিলোমিটার বেগে চট্টগ্রামে আঘাত হানে এবং সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ মৃত্যু ঘটায়। তবে এই ঝড়ের কোনো নাম না থাকায় ৭০’র ঝড় নামেই বেশ পরিচিত।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রথম নামকরণ করা হয় ১৫২৬ সালে। পুয়ের্তো রিকায় একটি হারিকেন আঘাত করার পরে এর নামকরণ করায় ‘সান ফান্সিসকো’। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঝড়ের নামকরণ করেন ব্রিটিশ আবহাওয়াবিদ ক্লেমেন্ট লিন্ডলি র্যাগ। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রথমবারের মতো ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেন ২০০৭ সালে। ২২৩ কিলোমিটার বেগে উপকূলে আঘাত হানা এই ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করা হয় সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম উইথ কোর অব হারিকেন (সিডর)। মূলত মানুষকে সতর্ক করতে এবং পূর্বাভাস দেওয়ার সুবিধার্থে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়।
১৯৪০ সালের দিকে ঘূণিঝড়ের নামকরণের জন্য ইংরেজি বর্ণমালার ক্রম ব্যবহার করা হতো। একটি ঝড়ের নাম `A’ দিয়ে রাখা হলে পরেরটির নাম রাখা হতো `B’ দিয়ে। এভাবে ক্রমানুসারে চলত। এর কিছু বছর পরে নারীদের নামে এটার নামকরণ করা হতো। নার্গিস, তিতলি, ক্যাটরিনা, বিজলি, রেশমি ইত্যাদি ঘূর্ণিঝড়গুলোর নাম সর্বজনবিদিত। কিন্তু শুধু নারীদের নামেই কেন এর নামকরণ করা হয় এ বিষয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়লে ৫০-৬০ এর দশকে নারীদের প্রতিবাদের প্রভাবে পুরুষদের নামেও এর নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বর্তমানে পাঁচটি আঞ্চলিক বিশেষায়িত আবহাওয়া দপ্তর (আরএসএমসি) ও ৬টি ট্রপিক্যাল সাইক্লোন ওয়ার্নিং সিস্টেম (টিসিডব্লিউএস) এর নামকরণে ভূমিকা রাখছে। ২০০০ সালে ওমানে ‘বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা’র একটি অধিবেশনে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেসময় ৮টি দেশ ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য ৬৪টি নামের প্রস্তাবনা দেয়। দেশগুলো হলো-বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড।
২০০৪ সালে তাঁদেরও প্রস্তাবিত নাম শেষ হয়ে গেলে ২০২০ সালে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার অধিবেশনে ইরান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেনসহ আরও পাঁচটি দেশ যুক্ত হয়। এই ১৩ টি দেশ থেকে ১৬৯টি নামের তালিকা চূড়ান্ত করেছে এই সংস্থাটি।
নামকরণের ক্ষেত্রে দেশগুলোকে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয় তা হলো- নামটি সর্বোচ্চ ৮ অক্ষরের হতে হবে। নামটি যেন কোন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সাথে সাংঘর্ষিক এবং অপমানসূচক না হয়। পাশাপাশি যে নামটি একবার ব্যবহৃত হয়েছে তার যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।