নাঈমুর রহমান রিজভী
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট তার বিখ্যাত একটি উক্তিতে বলেন, ‘আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত একটা জাতি দিব।’ মায়ের পরে আমাদেরকে আচরণ, শিষ্টাচার, ভাষা ও বর্ণমালা শিক্ষার আঁতুরঘর হলো বিদ্যালয়। যেখানে শিশুর মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ ও পড়ালেখার আনুষ্ঠানিক হাতেখড়ি।
কিন্তু বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিকিকরণের দিকে ঝুঁকে যাওয়ায় ও গৎবাঁধা বইয়ের মুখস্থ করার নামে সেই শিক্ষা দিনদিন ব্যাহত হচ্ছে। স্কুল পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের অবহেলায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাড়ছে অনিয়ম। কোথাও নেই কোলাহলমুক্ত, মনোরম পরিবেশ; যা শিশুদের শিক্ষার জন্য আকৃষ্ট করবে। মজার ছলে শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করে তুলবে।
তবে সেরকম এক স্কুল রয়েছে কুমিল্লা জেলার কোটবাড়ি নিকটস্থ শালমানপুরে। নাম শালমানপুর উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। আমার সোনার বাংলা গানে শুরু হওয়া বিদ্যালয়টিতে শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের জন্য রয়েছে গান, আড্ডা, ছবি আঁকা, নৃত্য, কবিতা ও খেলাধুলার জায়গা। বিনোদন প্রিয় শিক্ষার্থীরা এসবের জন্য হলেও নিয়মিত আসা যাওয়া ও পাঠদান করছে বলে মন্তব্য করেছেন এখানকার স্থানীয়রা।
সম্পূর্ণ ব্র্যাকের অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে। কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার শালমানপুরে ব্র্যাকের আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম (পিইডিপি-৪) এর একটি প্রকল্প এটি। বিনা অর্থায়নে পাঠদান করানোর পাশাপাশি এখানকার শিক্ষার্থীদের নিয়মিত দিয়ে আসছে বই, খাতা, কলম, ব্যাগ, স্কুল ড্রেস, রাবার, শার্পনার, পেন্সিলসহ আরও অনেক শিক্ষা উপকরণ। দেয়া হয় উপবৃত্তিও।
দুই শিফটে চলে বিদ্যালয়টি। প্রথম শিফটে ক্লাস চলে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত। পরের শিফটে ২টা থেকে শুরু হওয়া ক্লাস শেষ হয় বিকেল ৫টায়। প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা এখানে শিক্ষার সুবিধা নিতে পারে।
সপ্তাহে পাঁচদিন পড়ানো হয় আবশ্যিক পাঠের বিষয়গুলো। তবে বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়টির ক্লাব ডে। এই দিনে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা, নাচ-গান, ছবি আঁকা, দুর্যোগ বিষয়ক সচেতনতাসহ নানা কার্যক্রমে মেতে উঠেন। বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মাসিক ৩০০ টাকা করে ছয় মাস অন্তর অন্তর উপবৃত্তি প্রদান করে ব্র্যাক। এই উপবৃত্তি শিক্ষার্থীদেরকে পড়ালেখায় আগ্রহ প্রদান করে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়টির পরিচালক আমেনা আক্তার।
১৮ বছর যাবত ব্র্যাকের সাথে যুক্ত আমেনা আক্তার বলেন, এটা ব্র্যাকের একটা শিখন কেন্দ্র। আমি এখানে আগত শিক্ষার্থীদের সবসময় শেখানোর চেষ্টা করি। তারাও আগ্রহ সহকারে শেখার চেষ্টা করে। বিদ্যালয়টি প্রথম যখন শুরু করি তখন এলাকার অনেকেই বিপক্ষে ছিল। পাশে কিন্ডারগার্টেন থাকায় ওইখানকার শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যালয়ে চলে আসে। পরে এলাকার কিছু মানুষ এই বিদ্যালয় নির্মাণে বাঁধা দেয় এবং সমালোচনা শুরু করে।
মীম আকতার নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, বিদ্যালয়ের পরিবেশ অনেক সুন্দর। আমরা এই বিদ্যালয়ের পড়ালেখা অনেক উপভোগ করি। আমাদের শিক্ষিকা অনেক আন্তরিক। আমরা এখানে বর্ণমালা থেকে শুরু করে সবকিছু শিখি।
লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।