নাজমুস সাকিব
ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা) এ অধ্যয়নরত প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সকাল সাড়ে ৯ টায় ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখলাম বাস ইতোমধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আগারগাঁও। ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রাস্তা ধরে চলতে শুরু করলো ইউডা-র বাস। বাসের ভিতরে গান গান গাইতে গাইতে পৌঁছে গেলাম মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে।
আমাদের সাথে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা) এর রেজিস্ট্রার ইফ্ফাত কায়েস চৌধুরী স্যার, দিকনির্দেশনা দিয়েছেন হায়দার ফারুক স্যার, সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন আবু সাইদ মুহাম্মদ মাহমুদুল হক চৌধুরী স্যার কৌশিক স্যার।
জাদুঘরের মূল সিঁড়ি দিয়ে উঠেই সামনে গোল আকৃতির জলাধার যার মাঝখানে আগুনের শিখা জ্বলছে। সকলে সিঁড়ি বেয়ে নিচতলায় এসে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মিলনায়তনে গেলাম। তবে অনুমান করলাম মিলনায়তনটির অবস্থান আসলে মাটির নিচে। সেখানে আমরা তথ্যচিত্র সহ মুজিবনগর সরকার কোথায় কীভাবে গঠিত হয়, যৌথবাহিনীর প্রধান কে, শরণার্থী শিবিরের করুণ চিত্রের একটা ডকুমেন্টারি দেখলাম আমাদের সাথে অন্য এক স্কুলের শিক্ষার্থীরা ছিল।
এবারে গ্যালারি পরিদর্শনের পালা। গ্যালারি ১-এ রয়েছে ‘আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম’। এখানে ব্রিটিশ আমলের মূর্তি, মসলিন কাপড় ও ব্রিটিশ শাসনের বিভিন্ন ইতিহাসের নানা নিদর্শন রয়েছে। পলাশীর যুদ্ধ সম্পর্কে আঁকা ছবি ও বর্ণনা রয়েছে। দেশভাগ হয় ১৯৪৭ সালে, ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় জন্ম নেয় দুই ভূখণ্ডের পাকিস্তান। তারপর ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জনগণ স্বাধীনতা লাভ করে।
গ্যালারি ২-এ আছে ‘আমাদের অধিকার, আমাদের ত্যাগ’, এ গ্যালারিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীসহ আরো অনেক ব্যক্তির পোশাক, টুপি ইত্যাদি জিনিস ছিল যারা মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন। এরকম ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য। এ গ্যালারিতে একটি জিপ গাড়িও রয়েছে যা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা ব্যবহার করেছে।
গ্যালারি ৩-এ রয়েছে ‘আমাদের যুদ্ধ, আমাদের মিত্র’। এখানে রয়েছে ১৯৭১ সালে ব্যবহার করা একটি গাড়ি। তবে গাড়িটি কার সেটা জানা যায়নি। আরো রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহার করা একটি রেডিও ট্রান্সমিটার যা ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন রেডিও স্টেশনের খবর শুনে উল্লেখযোগ্য খবরগুলো বাছাই করে তা বাংলাদেশ বেতারে প্রচার করা হতো।
এছাড়া রয়েছে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর কিছু ছবি। কনসার্ট ফর বাংলাদেশের একটি রেকর্ডও রয়েছে। এ কনসার্ট ১৯৭১ সালে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয়। এখানে অনেক শিল্পীরা বাংলাদেশের জন্য গান গেয়েছিলেন, যেমন জর্জ হ্যারিসন। কিছু শিল্পী বাজিয়েছিলেন বাদ্যযন্ত্র ।
গ্যালারি ৪-এ রয়েছে ‘আমাদের জয়, আমাদের মূল্যবোধ’। এখানে নৌ-কমান্ডো শাহজাহান সিদ্দিকীর ব্যবহার করা নৌকা রাখা আছে। আছে তার পরিচয়পত্র এবং পোশাক। বিলোনিয়া নামে একটি জায়গার যুদ্ধের প্রস্তুতিমূলক মানচিত্র আছে। ৭.১২ এমএম সেমি-অটোমেটিক রাইফেলসহ আরো নানা ধরনের বন্দুক। প্যারাসুটও বাদ নেই। আছে বঙ্গবন্ধুর পাঞ্জাবি ও কোট।
আমরা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ক্যাফেটেরিয়ায় হালকা খাবার খেয়ে আড্ডা দেই, হঠাৎ হায়দার ফারুক স্যার কোন এক ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের বকাবকি করছে কিন্তু কোন ডিপার্টমেন্ট ঠিক জানি না।
গল্পে আড্ডায় আর গানে গানে আবার চলে আসলাম ইউডা ক্যাম্পাসে। ভালোলাগার মত শিক্ষা সফর ছিল এবারের আয়োজন। মনে হল মাঝে মধ্যেই এমন ভ্রমণের আয়োজন হওয়া উচিত। কারণ এতে অনেক কিছু শিখা যায়, জানা যায়। পাশাপাশি সময়টাও ভালো কাটে।
লেখক, শিক্ষার্থী আইন বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ( ইউডা)