নাঈমুর রহমান রিজভী
মুসলমানদের জীবন চরিত্র পরিবর্তনের জন্য রমজান একটি মোক্ষম সময়। মহামান্বিত এই মাস মুসলমানদের কার্যক্রম ও সময়সূচিতে পরিবর্তন আনে। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত না খেয়ে থাকা, মাদকাসক্তি থেকে দূরে থাকা, নিষেধাজ্ঞামূলক কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখাসহ বিভিন্ন পাপ ও নিন্দনীয় কাজে থেকে নিজেদের সংযত রাখে। এসব পুণ্য কাজের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের আত্মশুদ্ধি অর্জন ও গুনাহ মাফের ফরিয়াদ জানায়। আর এই কাজগুলো যারা সঠিকভাবে পালন করতে পারে তাদের ভিতর থেকে পরিবর্তন আসে। যা আমাদের জীবনধারা, চরিত্র, দৃষ্টিভঙ্গি, কথোপকথন এবং নিয়মিত অভ্যাসকে ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন করে।
রমজানে এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে আসতে বেশকিছু কার্যকরী কৌশল রয়েছে। এগুলো হলো;
১. খারাপ অভ্যাস শনাক্তকরণ:
নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনতে চাইলে খারাপ অভ্যাস ও কার্যক্রমগুলো প্রথমে শনাক্ত করতে হবে। অন্যথায় নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনা সম্ভব না।
২. একটি ভালো অভ্যাস বেছে নেওয়া;
খারাপ কাজগুলো চিহ্নিত করার পর আপনি এমন একটি কাজকে বেছে নিন যাতে করে আপনার একটি ভালো অভ্যাস তৈরি হয়। কারণ প্রতিটি ভালো কাজের প্রভাব মানুষের সামগ্রিক জীবনে প্রভাব ফেলতে সক্ষম। আর এজন্য অবশ্যই নিজেকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। অন্যথায় জীবনের আশানুরূপ ফল পাবেন না।
৩. পরিকল্পনা করা:
নিজের অভ্যাসগত পরিবর্তন আনতে প্রয়োজন একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা। বলা হয়ে থাকে একটি সুন্দর পরিকল্পনা কাজের অর্ধেক হিসেবে কাজ করে। কারণ এটি লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে দেয় ও পরিকল্পনাকারী অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালায়। একইসাথে নিজেকে পরিমাপও করতে পারে ব্যক্তির সীমাবদ্ধতা, যোগ্যতা ও অপূর্ণতা কোথায়?
৪. পরিবেশ পরিবর্তন করুন:
মানুষের ওপর পরিবেশের প্রভাব সবচেয়ে বেশি কাজ করে। মানুষ যা দেখে, যার সাথে সঙ্গ গড়ে তুলে তাঁর মতো করেই জীবনকে পরিচালনা করতে চায়। আর পরিবেশ পরিবর্তন করতে বন্ধুর সঙ্গ পরিবর্তন একটি বড় বিষয়। খারাপ বন্ধুদের সঙ্গ পরিবর্তন করে ভালো বন্ধুদের সাথে সময় ব্যয় করা নিজের পরিবর্তনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়াও নতুন পরিবেশ মানুষকে নতুন করে শেখাতে সাহায্য করে।
৫. আধ্যাত্মিকতার চর্চা:
কোরআন, হাদিস ও ইসলামিক সাহিত্য অধ্যয়ন, সিয়াম, জিকিরের মধ্যে আধ্যাত্মিক শান্তি বিরাজ করে। এসব পাঠ ও অধ্যয়নের পর মানুষের ভিতরগত কাজে শান্তি অনুভব হয়। তেমনিভাবে আল্লাহর পথে দান, সদকা, জাকাতের মতো কাজগুলোও আধ্যাত্মিক শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই অধ্যাত্নিকতার চর্চা মানুষের খারাপ অভ্যাস দূর করতে সাহায্য করে, অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে এবং নিন্দনীয় কাজ থেকে বিরত রাখে।
৬. নিজেকে একজন পরিবর্তিত, ভিন্ন, নতুন ব্যক্তি হিসেবে ভাবুন:
পরিবর্তন আনতে চাইলে নিজেকে অন্যান্যদের চাইতে পরিবর্তিত, ভিন্ন নতুন একজন হিসেবে ভাবতে হবে। যা আপনার পরিবর্তনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে, ব্যক্তিত্বকে উৎকর্ষ করে তুলবে। এই নতুন একজনকে খুঁজে পেতে খারাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা, ভালো কাজের সাথি হওয়া, নিজেকে অন্যান্যদের চাইতে বুদ্ধিদীপ্ত করে শক্তিশালী রূপে হাজির হতে হবে।
৭. সাহায্য নিন:
আপনি আপনার নিজেকে পরিবর্তনের জন্য কারো সাহায্য নিতে পারেন। যে আপনাকে ভালো পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। এমন বই পড়ুন যা আপনাকে পুণ্যের কাজ করতে সাহায্য করবে। আপনার মসজিদের কুরআন ও হাদিসের তাফসীরে যোগ দিন।
৮.মৃত্যুর স্মরণ:
জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে মৃত্যুর কথা স্মরণ করুন। মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখে, জীবনে গতি আনে, ভালো কাজে উৎসাহী করে তুলে।
৯. আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করুন:
একটি খারাপ অভ্যাসকে বাদ দেওয়ার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করুন। আল্লাহ সর্বদা সাহায্য করতে এবং আমাদের প্রয়োজনে সাড়া দিতে ইচ্ছুক। আমরা যদি আল্লাহর কাছে বিনয়ের সাথে প্রার্থনা করি, তিনি আমাদের নিরাশ করবেন না।