ইয়াছিন আরাফাত
সমসাময়িককালে বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ অর্থনীতি মন্দা মোকাবেলা। এর সাথে বেকারত্বও একটি বড় সমস্যা। দেশে বেকারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ২০১৮ সালের তুলনায় অনেক বেশি।
২০১৯ সালের শেষে করোনার প্রকোপে এর সংখ্যা আরো ব্যাপক হারে বেড়েছে। দেশীয় প্রেক্ষাপটে একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনা শেষ করার পর তার প্রথম অগ্রাধিকার থাকে একটি সরকারি চাকরি। অন্য অর্থে একটি স্থায়ী কর্মসংস্থান নির্বাচন করা।
তবে আমাদের দেশে প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের পাশ করে বের হওয়ার পরিমাণের সাথে চাহিদামত কর্মসংস্থানের যোগান খুবই নগন্য। আবার সরকারি কর্মসংস্থানের বাহিরে যদি বেসরকারি চাকরির দিকে নজর দেয়া হয়, সেখানেও ব্যাপক প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ দক্ষতার সন্ধান করে সে অনুযায়ী প্রার্থীদের যুগোপযোগী দক্ষতা না থাকার কারণে খুব ভালো অবস্থানে নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।
তাই দক্ষ জনশক্তি না পাওয়ায় কোম্পানিগুলো বিদেশী কর্মীদের মাধ্যমে কোম্পানি পরিচালনা করার দিকে ঝুঁকছে। ফলে প্রতি বছর এসকল বিদেশি কর্মীদের পরিচালনায় কয়েকশো কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ বাহিরের দেশে চলে যাচ্ছে। এই ব্যায়ের সিংহভাগই যাচ্ছে ভারতে। এ অবস্থায় আমাদের দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে গুরুত্ব দিতে হবে।
এরসাথে আমাদের তরুণ সমাজকে চাকরির পিছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হবার জন্য উৎসাহী করতে হবে। আমরা যদি চীন ও ভারতের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো তাদের মতো বিপুল জনগোষ্ঠীর দেশে বেকারত্ব মোকাবেলায় উদ্যোক্তারা একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু আমাদের দেশে সেই সংখ্যা খুবই কম।
এর পিছনে যে কারণগুলো দায়ী তারমধ্যে-
প্রথমত বাংলাদেশে উদ্যোক্তা হবার সংস্কৃতি তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি। আবার দেশের বিপুল সংখ্যক গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীরা প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানার্জন শেষে সরকারি চাকুরির জন্য বছরের পর বছর বসে থাকার প্রবণতা অন্যতম কারণ। অনেকের চাকুরি হয় আবার অনেকের হয় না। যাদের হয় না তারা আবার বেসরকারি চাকরির পিছনে ছুটে। বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ছাড়া চাকরি পাওয়া খুবই কঠিন। ফলে অনেকে ৩০ বা ৩১ বছর বয়সেও অল্প বেতনে চাকরি করছে।
দ্বিতীয়ত ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা না থাকা। নতুন উদ্যোক্তারা অনেকে ঝুঁকি আছে জেনে পরিকল্পনা গ্রহণ করেও তা বাস্তবায়ন করতে পারে না।
তৃতীয়ত ব্যাংক ঋণের সহজলভ্য না থাকা। তরুণ যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের বড় অংশই নিম্নবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। কিন্তু ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জামানত, গ্যারান্টার দেখাতে হয়। যার ফলে ঋণ সুবিধা অনেকটা জটিল হয়ে যাওয়ায় তরুণদের উদ্যোক্তাদের মনোবল হারাতে হয়। সুতরাং সরকারকে এ বিষয়ে নজর রাখতে হবে যাতে করে তরুণ-যুবকরা সহজে উদোক্তা হয়ে উঠতে পারে।
বেসরকারি সেক্টরে বেশির ভাগ কোম্পানিগুলোই বিদেশি। ফলে ব্যাবসায়িক কার্যক্রমে মুনাফার একটি বড় অংকের অর্থ বাহিরের দেশে চলে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা যদি তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতে গুরুত্ব দেয় তবে তারা নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে অবদান রাখতে পারবে। একইসাথে দেশের অর্থ দেশেই থেকে যাবে।
আমরা যদি সম্পদের সংজ্ঞা দেখি তাহলে দেখবো একটা সময় যার বেশি জমি ছিলো সেই ছিলো সম্পদশালী। তারপর একটা সময় যারা ইন্ডাস্ট্রির মালিক তারা সম্পদশালী ছিলো। আর এখন গুগল, ফেইসবুক এর মালিক তারা সম্পদশালী। তার মানে সময়ের সাথে সম্পদের সংজ্ঞাটা পরিবর্তন হচ্ছে। সুতরাং আগামী দিনের সম্পদের সংজ্ঞা কি হবে সেটা তরুণরাই ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারবে। তাই তরুণদের যদি প্রশিক্ষিত করে উদ্যোক্তায় রুপান্তর করা যায় তাহলে একটা সময় এসকল তরুণ উদ্যোক্তারাই হয়ে উঠবে অর্থনীতির চালিকাশক্তি।
লেখক: হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।