28 C
Dhaka
Saturday, June 28, 2025

৭ টি উপায় প্রতি সপ্তাহে স্মার্ট হয়ে উঠুন!

Must read

ভাষান্তর: জুবায়ের রহমান

ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য চটকদার মানসিকতা দরকার; যা দ্রুত কোনো কিছুর প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম। সেইসাথে আপনাকে সকল বিষয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পারদর্শী হয়ে উঠতে হবে যাতে করে যেকোনো কিছু খুব সহজেই উপলদ্ধি করতে পারেন। বলতে গেলে একটা মানুষ কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করে ব্যক্তির স্মার্টনেসের উপর ভিত্তি করে। আর আমাদের সমাজের যে যতবেশি দক্ষ, আক্ষরিক অর্থে সে ততবেশি স্মার্ট। তার জানার পরিধি, তার আচরণ অন্যান্য যেকোন কারো চাইতে বেশি, সুন্দর ও মার্জিত।

যদি কেউ নিয়মিত কোন অনুশীলনের মধ্যে থাকে তবে সে তার ঐ অনুশীলনের জ্ঞানের ভিত্তি মজবুত করতে পারে। তার বুদ্ধিমতায় তীক্ষ্ণতা আসে ও নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করতে পারে। মানুষের জ্ঞানের ক্ষমতা বাড়ানো ও তার মানসিকতাকে বৃদ্ধি করতে অনেক উপায় আছে। নতুন কোনকিছু শিখতে পারা জ্ঞানের ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। শিখার মধ্যদিয়ে মানুষ ভালো বুঝতে পারার ক্ষমতা অর্জন করে, মস্তিষ্ক দ্রুত কাজ করে। এছাড়াও নতুন করে কোন কিছুর তৃষ্ণা তৈরি করবে। আর এভাবেই মূলত মানুষ স্মার্ট হয়ে উঠে।

যেসব কাজের মাধ্যমে আপনি স্মার্ট হয়ে উঠতে পারেন, আসুন তেমন ৭টি উপায় সম্পর্কে জেনে আসি-

১. প্রতিদিন পড়াশোনায় সময় ব্যয় করুন
মন আমাদের মাংসপেশীর মতো। এটিকে যত বেশি ব্যবহার করা যায় তত শক্তিশালী হয়ে উঠে।  মনের বিকাশের জন্য পড়াশোনা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ এটি আমাদের জ্ঞান অর্জন এবং শেখার একটি মৌলিক উপায় হিসেবে কাজ করতে পারে।

নতুন কিছু জানার মধ্যদিয়ে অনেক কিছুই আবিষ্কার করা যায়, যেকোন বিষয়ে অভিজ্ঞ হওয়া যায়। যে যতবেশি পড়াশোনা করে তার চিন্তার জগত ততবেশি বিকাশ ঘটে। কারণ মানুষ যখন একটি শব্দ নিয়ে ভাবে তখন সেই শব্দের সুতো ধরে কল্পনার জগতে চষে বেড়াতে পারে, যা তার অস্তিত্বকে নির্দেশ করে।

কেউ যদি তার জ্ঞানের পরিধি খুব দ্রুত বৃদ্ধি করতে চায়, তাহলে অবশ্যই তার পড়ার গতি বৃদ্ধি করতে হবে। বেশিরভাগ মানুষ প্রতি মিনিটে ২৫০ টির মতো শব্দ পড়তে পারে। সে অনুসারে এখানে তার ৬ মিনিট সময় লাগতে পারার কথা। কিন্তু যে দ্রুত পড়তে পারে সে সময়টিকে অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারে। এতে করে তার সময়ও কম ব্যয় হবে, এবং যেকোন শব্দ খুব দ্রতই তার মাথায় কাজ করবে। এতে অনেক জটিল লিখাগুলো সময় নিয়ে ভাবার পরিবর্তে তাড়াতাড়ি আত্মস্থ করতে পারবে।

২. কোনো তথ্যের গভীরতা খুঁজতে থাকা
আমরা মনে করে থাকি যে যার কাছে যতবেশি তথ্য সেই ততবেশি শক্তিশালী। তবে সে বিষয়ে ভাল বোঝাপড়া তৈরি করতে না পারলে কাযত কোনো তথ্যসমৃদ্ধ ব্যক্তি নিজেকে মেলে ধরতে পারে না। একজন সফল ব্যক্তি অন্যদের খুব দ্রুত ছাড়িয়ে যাওয়ার কারণ তারা খুব সহজেই নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করতে পারে।  ফলে যেকোন পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ-খাইয়ে নিতে পারে। এতে সে ব্যক্তিগত কাজ হোক আর টিমের কাজ হোক সব জায়গায় নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে।

একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি তার কাজের ক্রুটি সহজে ধরতে পারে। তার সমাধানের পথও জানা থাকে। জ্ঞানের গভীরতা না থাকলে সে সমস্যা নির্ধারণও করতে পারে না,  সমাধানের পথও খুঁজে পায় না।

জ্ঞানের গভীরতা তৈরির লক্ষ্যে দুর্বল বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া আবশ্যক।  প্রথমে ছোট ছোট মৌলিক জ্ঞানের বিষয়ে শিখতে থাকুন ও আস্তে আস্তে তা বৃদ্ধি করতে থাকুন। কারণ জ্ঞান তৈরি হয় ধীরে ধীরে। মানুষের অভ্যস্ততার সাথে এটা অনেকটা সম্পর্কিত। তাই আমাদের কোনো কিছু ঠিক করার আগে কোন বিষয়টি কীভাবে কাজ করে তা আমাদের দৃঢ়ভাবে উপলব্ধি করতে হবে। প্রত্যকটি মানুষেরই প্রকৃতি প্রদত্ত জ্ঞানের প্রশস্ততা থাকতে পারে, তবে কঠিন এবং জটিল সমস্যাগুলিকে বুঝতে হলে গভীর বোঝাপড়া অবশ্যই তৈরি করতে হবে।

৩. ক্রমাগত প্রশ্ন করুন এবং ব্যাখ্যা করুন-

একজন ব্যক্তি স্মার্ট হয়ে উঠার ক্ষেত্রে তার প্রশ্ন করার দক্ষতা একটি বড় ব্যাপার হিসেবে কাজ থাকে। মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা প্রকাশ পায় তার প্রশ্ন করার উপর ভিত্তি করে। কারণ প্রশ্ন করা বিষয়ে মানুষের ব্যাপক কৌতুহল থাকে। প্রশ্ন করার মাধ্যমে আমাদের মনের সীমাবদ্ধতা দূরীভূত হয়। মনের মধ্যে কৌতুহল প্রতিনিয়ত কাজ করে।

শুধু প্রশ্ন করাই মুখ্য বিষয় নয়; আপনার খুব সূক্ষ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা উচিত যা অনুমানের বৈধতা পরীক্ষা করে, যুক্তি বিশ্লেষণ করে এবং অজানা অন্বেষণ করে। এমন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার অভ্যাস করুন যা একটি বিষয়ের গভীরে আঘাত করে এবং উত্তরের জন্য মনের মধ্যে চাপের সৃষ্টি হয়।

অন্য যেকোনো কিছুর মতো, এই দক্ষতা বিকাশ করতে সময় এবং কঠোর পরিশ্রম লাগে। আপনি যখন কাজ করছেন, পড়ছেন বা ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত হচ্ছেন, তখন যেকোন কিছুর সাথে আপনার জড়িত থাকা সমস্ত কিছু সম্পর্কে মনে আসা প্রশ্নগুলি চলমান রাখুন। কিছু স্পষ্ট না হলে ব্যাখ্যা চাইতে কখনোই ভয় পাবেন না।

৪. আপনার দিনকে বৈচিত্র্যময় করে তুলুন:

আপনি আপনার মস্তিষ্ককে বিভিন্নভাবে কাজে লাগাতে পারেন। নতুন নতুন কাজের মাধ্যমে আমরা আমাদের পরিবর্তন আনতে পারি। হঠাৎ কোন এক দুপুরে খাবারের জন্য নতুন কোন স্থানে যাওয়ার মতো কাজগুলো আপনাকে বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করে তুলবে। এভাবে যেকোন কাজের ক্ষেত্রেই আপনি আপনার জীবনকে বৈচিত্র্যময় করে তলেন। এতে নিজের মধ্যে সৃষ্টিশীলতা তৈরি হবে, নতুন কাজে আগ্রহ তৈরি হবে।

এছাড়াও এক ধরণের কাজ করতে করতে আমাদের মনে একঘেয়েমি কাজ করে থাকে। নতুন ধরণের কাজ আমাদের ভালো লাগাতে সাহায্য করে। নতুন কোনো কাজ করতে গেলে আমাদের মনে তীক্ষ্ণতা আসে ও কাজে মনোযোগী হওয়া যায়। এটি মষ্কিস্ককেও শান্তনা দিয়ে থাকে।

৫. শিখে নেওয়া বিষয়গুলোকে পুনরায় আলোচনা করুন:

কোনো কিছু শিখার পর আমরা যদি সেটার চর্চা না রাখি তাহলে আমাদের ভুলে যেতে বেশিদিন সময় লাগে না। দেখা যায় যা শিখেছি তার খুব অল্পই আমরা মনে রাখতে পারি। অন্যথায় সে যাই কিছুই হোক না কেন, আমাদের স্বভাবগত অভ্যাসই হলো ভুলে যাওয়া। তাই মনে রাখতে হলে মাঝেেই শিখে নেওয়া যেকোন বিষয়ের চর্চা রাখতে হয়। আর চর্চা রাখলে সেই বিষয়ে খুব ভাল হয়ে যাওয়া যায়।

এজন্য আমাদের পড়োশোনায় কোনো কিছু শিখতে হলে অবশ্যই নোটের ব্যবহার করতে হবে। ছোট ছোট কাগজের এসব নোট আপনাকে অনেক বেশি এগিয়ে রাখবে  বোঝাপড়ার ক্ষেত্র তৈরি করবে। শিখে নেওয়া কাজের চর্চা আপনাকে সবসময় এগিয়ে রাখবে।

৬. কাজের আইডিয়া ধরে রাখুন:

কোনো কাজের ধারণা আপনার মনে সৃষ্টি হলে সেটিকে ধরে রাখতে হবে। একেরপর এক কাজ করতে থাকলে একসময় দেখা যাবে আপনি প্রায় সকল বিষয়েই অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছেন। এতে আপনার জ্ঞানের ভিত্তি যেমন মজবুত হবে, তেমনি মনের প্রসারের সাথে সাথে বুদ্ধিও বাড়তে থাকবে। একটা সময়ে এসে আপনিই হয়ে উঠবেন আইডিয়ার একটি মেশিন। ফলে সেই ছোট ছোট ধারণাগুলো আপনাকে ভালো ও বড় কোনো ধারণার দিকে এগুতে সাহায্য করবে।

বলে রাখা ভালো, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। অনেক মানুষ প্রতিভাবান হয়েও যখন তার আইডিয়াকে কোন কাজে দিতে না পারে তখন সে ভালো চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে শুরু করে। বড় কোন কিছু করতে চাইলে ছোট দিয়েই শুরু করতে হয় এবং ক্রমাগত কাজের মাধ্যমে সেটির বিকাশ রাখতে হয়।

আমরা অনেক সময় কাজে যখন সফলতা পাই না তখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। কিন্তু যারা লেগে থাকে আর একটা সময়ে এসে সফলতা পেয়ে যায় তখন তার জীবন বদলে যেতে শুরু করে। সুতরাং নিজের কাজের গতি বৃদ্ধি চলমান করুন ও নিজের আইডিয়াগুলোকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়ে আপনিও স্মার্টদের কাতারে যোগ দিন।

৭. নিজেকে পরিবর্তন করতে শিখুন:

আমরা এটি উপলব্ধি করি বা না করি, কখনও কখনও আমরা অনেক নিজেকে অপ্রচলিত বা ভ্রান্ত ধারণার কারণে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারি না। অনেক বুদ্ধিমান মানুষেরাও নিজেকে পরিবর্তন করতে পারে না। ফলে অনেক সত্য ধারণার কাজেও নিজেকে যুক্ত রাখা যায় না। সত্যিকারের বুদ্ধিমান হওয়ার জন্য, আপনাকে অবশ্যই নিজেকে ভুল করার অনুমতি দিতে হবে, ঝুঁকি নিতে হবে এবং সুযোগ লুফে নিতে হবে এবং অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। নিজেকে পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত আপনাকে জ্ঞানের নতুন পথকে উন্মুক্ত করে দিতে কাজ করে। নিজেকে যখন নতুন জ্ঞানের সাথে পরিচিত করা যায় তখন জ্ঞানের উৎসের উন্মুক্ত করা যায়, আপনার মনকে নতুন জিনিস শেখার জন্য চাপ দেওয়ার মাধ্যমে, আপনি শেষ পর্যন্ত আপনার কিছু পুরানো ভিত্তিগত চিন্তাভাবনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেন। আপনি দেখতে পারেন যে আপনার কিছু উপলব্ধি বন্ধ ছিল, বা আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবে ভিত্তি করে ছিল না।

নতুন নতুন ধারণাগুলিকে চ্যালেঞ্জ করতে শিখুন, আলোচনা করুন, শুনুন, বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করুন। নিজের অবস্থান পরিবর্তন করার পর নিজেকে জায়গা দেওয়া উচিত ও জ্ঞান অন্বেষণের পথে চালিয়ে যান। কাজের মাধ্যমে আপনি যত বুদ্ধিমান হবেন, যত পরিবর্তন আনবেন, ততই সাফল্য আসবে।
শিক্ষার্থী: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article