28 C
Dhaka
Saturday, June 28, 2025

একঘেয়েমির কারণ এবং তার প্রতিকার

Must read

ভাবানুবাদ: জুবায়ের রহমান

একঘেয়েমি মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের একটি অনুভূতি। এটি সময়ে সময়ে মানুষের মধ্যে তাড়না দিয়ে থাকে। তবে একঘেয়েমি বলতে দৈনন্দিন কাজেকর্মে মানুষের অনাগ্রহ সৃষ্টি হওয়া, বিরক্তি চলে আসা, কাউকে বিশ্বাস করতে না পারা ইত্যাদিকে বিশেষভাবে অবহিত করে। আমরা অতিরিক্ত কাজ করতে গিয়ে বেশিরভাগ সময়ে হাঁপিয়ে উঠি। কখনও তীব্র কাজের চাপে ক্লান্তি অনুভূত হয়। এসকল কিছুই একঘেয়েমির লক্ষণ।

তবে লক্ষনীয়ভাবে আমরা যখন একঘেয়েমির মধ্যে হারিয়ে যাই, তখন নিজেদের ভিতরে থাকা উদ্যোমকে আর কাজে লাগাতে পারিনা। তবে এ বিষয়টি আমাদের শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়।

একঘেয়েমির লক্ষণগুলো কী কী?
একঘেয়েমিকে শূন্য অনুভূতি বা হতাশা বলা যেতে পারে। মানুষের আশেপাশে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো একজন হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে থাকে। চারপাশে কি ঘটছে তাতে কোনো মনোযোগ থাকে না। আগ্রহ নেই বললেই চলে। উদাসীনতা, ক্লান্তি চেপে বসা, স্নায়ুবিকচাপ বোধ করা ইত্যাদি একঘেয়েমির লক্ষণ।

একঘেয়েমির কারণ কি?
একেকজন একেকভাবে একঘেয়েমিকে ব্যাখা করে। একঘেয়েমির অনুভূতি যেমন ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে, সনাক্ত করার ক্ষেত্রেও এটি হয়। তবে কিছু সাধারণ কারণ আছে যা প্রায় সবক্ষেত্রে একই। এগুলো হলো;

  • প্রয়োজনীয় বিশ্রাম ও পুষ্টির অভাব,
  • মানসিক উদ্দীপনার ঘাটতি,
  • দৈনন্দিন কার্যকলাপে নিজের পছন্দকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা,
  • বৈচিত্রতা ও বিনোদনের অভাব,
  • কোনো বিষয়কে ভালভাবে উপলদ্ধি না করা।

কাজে বিরক্তি আসার কারণ    

• আগ্রহ না থাকা,
• কাজে বিভ্রান্তিকর নির্দেশনা,
• ভুল করার ভয়,
• একাধিক সময় একই কাজ করা,
• নতুনত্ব না আনতে পারা ও নতুনত্ব না থাকা।

একঘেয়েমির কারণে মানসিক সাস্থ্যের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবও ফেলতে পারে। একঘেয়েমির নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। তবে এগুলো দূর করার জন্য অনেক সমাধান রয়েছে। যেমন নতুন কিছু করার প্রবণতা একজন ব্যক্তির একঘেয়েমিকে দূরে রাখতে সহায়তা করে।

আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করে থাকি। অনেকেই সেখানে যুক্ত হওয়ার আহবানও করে থাকে। যেমন রিডিং ক্লাবে যুক্ত হওয়া, নিয়মিত ব্যায়ামকারীদের সাথে উঠাবসা, চ্যারিটি সংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে কাজ করা ও যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে নিজের একঘেয়েমিকে দূরে ঠেলে দেওয়া সম্ভব হয়।

শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের অভিযোগ শোনার প্রবণতা নিজেদের মধ্যে তৈরি করতে হবে এবং ভালমন্দের প্রশ্ন না করে অন্যদিকে উৎসাহিত করতে হবে। তাদের একঘেয়েমির কারণ উদঘাটন করতে তাদেরকে সময় দেওয়া উচিত, যা একজন ব্যক্তিকে একঘেয়েমির সমাধানে সৃজনশীল করে তুলবে।

ভাল ফলাফলের জন্য আমরা যা করতে পারি-

  1. শিশুদের এমন কোন প্রশ্ন করা যাবে না, যাতে তারা বিরক্তিবোধ করে।
  2. বিরক্তিকর অভিযোগ শোনার সময় উত্তেজিত হওয়া যাবে না। বরং সময় নিয়ে কথাগুলো শোনা উচিত
  3. সংকোচ না রেখে খোলামেলা প্রশ্ন করা উচিত। এতে তাদের ভিতরের চাহিদা ও সমাধানের পথ সামনে চলে আসবে।
  4. সন্তানদের সহযোগিতা করা উচিত আসলে তার কোন সমস্যা বা অনুভূতির কারণে একঘেয়েমি নিমজ্জিত রয়েছে।
  5. সন্তানদের কাজকর্মে নিজে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে সমাধানের উপায় খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

একঘেয়েমি মানুষের জীবনে সমস্যার একটি বিরাট অংশ! যেমন বিষন্নতা। তাই মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলা উচিত। কারণ সর্বোত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি তারাই ভালো বলতে পারবে।

একঘেয়েমি প্রতিরোধের উপায়!

আপনি বা আপনার সন্তান কোন পরিস্থিতিতে বিরক্ত হয় তার একটি রেকর্ড তৈরি করুন। একঘেয়েমির আগের দিনের সময়, স্থান এবং কার্যক্রম নোট করুন, যাতে সেই পরিস্থিতিগুলি এড়ানো যায় এবং ভবিষ্যতে একঘেয়েমিকে প্রতিরোধ করা যায়। এইক্ষেত্রে পছন্দের কাজগুলো প্রতিদিন করতে দেয়া উচিত। নতুন নতুন কিছু যোগ করতে হবে। বড় ধরণের কাজগুলোকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিয়ে করতে হবে। এইক্ষেত্রে পরিবেশ উপযোগী স্থান বেছে নিতে হবে, সময়, কাযক্রম ও বেছে নিতে হবে।

কেন আমরা সহজে বিরক্ত হয়ে যাই?

মানসিক উদ্দীপনা হ্রাস বা দৈনন্দিন জীবনের কার্যকলাপের উপর নিয়ন্ত্রণের অভাব সহ বিভিন্ন কারণের কারণে আমাদের সহজেই বিরক্তি চলে আসে। মজার বিষয় হল, গবেষণা বলছে কিছু মানুষ একঘেয়েমির প্রবণতা অনুভব করতে চাই। তারা ইচ্ছা করেই কোনো কাজে মনোযোগ না দিয়েই নিজেকে নিজেকে অসহায় প্রমাণ করতে চাই। আত্নসম্মান ও আত্ন-নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণেও এমন হয়ে থাকে।

একঘেয়েমি সুবিধা কি?

কিছুক্ষেত্রে, একঘেয়েমি উপকারী হতে পারে। বিরক্ত বোধ মানুষকে নতুন কিছু করার সাহস জোগায়। নতুন কোনো শখ বা আগ্রহের বিষয়ে খুঁজে পেতে পারে। একঘেয়েমির কারণ খুঁজতে গেলে কিংবা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে গেলে নিজের মধ্যে উদ্ভাবনী শক্তি খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article