28 C
Dhaka
Saturday, June 28, 2025

ঘন্টার ইতিহাস ও নানান দেশে এর গুরুত্ব

Must read

মুতাসিম বিল্লাহঃ
কখন কিভাবে ঘন্টা আসল? তার গভীরে যাওয়া হয়নি হয়ত অনেকেরই। তবে ঘন্টা নিয়ে বেশ মজার কাহিনী আছে। পৃথিবীর অনেক মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গেও মিশে আছে ঘন্টা। ঘন্টার বর্তমান আকৃতি হয়ে ওঠতে পার হয়েছে অনেকগুলো পর্যায়ের। নির্মাতাদেরও হয়ে ওঠতে হয়েছে দক্ষ।

শুরুতে ঘন্টা ছিলো মাটির। তামা, ব্রোঞ্জ ও লোহার ধাতু দিয়ে ঘন্টা নির্মাণে নির্মাতাদের লেগেছে অনেক বছর। তাদেরকে হয়ে উঠতে হয়েছে দক্ষ। ঘন্টার সঙ্গে মিশে আছে অনেক মজার ইতিহাস। প্রত্নতাত্ত্বিকরা শুরুতে মাটির ক্ল্যাপার ঘন্টা তৈরির আলামত পান পশ্চিম এশিয়াতে। তারা সবচেয়ে প্রাচীন ঘন্টার সময়কাল নির্ধারণ করেন খ্রিঃ পূঃ ১০০০ অব্দে। প্রাচীন ঘন্টাগুলোর মধ্যে ১টি পাওয়া গেছে তাওশী নামক প্রত্নস্থান থেকে। খ্রিঃপূঃ ২০০০ অব্দ সময়কালের ৪টি ঘন্টা পাওয়া গেছে ইরলিটু প্রত্নস্থান থেকে।

এ্যাসিরিয় সভ্যতার অধিবাসীরা ঘন্টার ব্যবহার করত। স্যার অষ্টিন হেনরি লেয়ার্ড নিমরুদ প্রত্নস্থান খননে ৮০টি ব্রোঞ্জের ঘন্টা পেয়েছেন বলে জানা যায়। যেগুলো তামার ক্যালড্রোনে প্রোথিত ছিলো। মিশরের মমি কেসেও পাওয়া গেছে ঘন্টা। এগুলো ব্রোঞ্জ নির্মিত ছিল যা তাদের সমাধিগুলোতে পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্য থেকে কিছু ঘন্টার মিল পাওয়া যায় এ্যাসিরীয়ানদের ঘন্টার সাথে।

এছাড়াও প্রাচীন মিশরের অলঙ্করণে মেয়েদের নেকলেস এ স্বর্ণ এবং রৌপ্যে ক্ষুদ্রাকৃতির ঘন্টা ব্যবহৃত হতো। ৪৬ শতক থেকে চীনারা ঘন্টার সঙ্গে পরিচিত হয়। চীনে ধাতু নির্মিত সবচেয়ে প্রাচীন ঘন্টা পাওয়া গেছে। চায়নাতে পাওয়া প্রাচীন ঘন্টার সময়কাল পাওয়া গেছে নিউলেথিক সময়কালের। যা চীনের ইয়াংশু সংস্কৃতিকে তুলে ধরছে।

খ্রিঃ যুগের আগ পর্যন্ত এশিয়াতে বৌদ্ধরা ঘন্টা ব্যবহার করত তাদের ধর্মীয় উপাসনার কাজে। চীনের প্রায় সবগুলো বৌদ্ধ মন্দিরে ভিক্ষুরা সকালে ও সন্ধ্যায় ঘন্টাধ্বনি বাজাত। তারা ঘন্টা ধ্বনিকে আত্নার প্রশান্তি ও বৌদ্ধদের নরকের যন্ত্রনা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে দেখত। তারা মনে করত ঘন্টার কম্পনের ফলে যে শব্দ উৎপন্ন হয় তা অপদেবতার প্রধানকে স্বাভাবিক থাকতে না দিয়ে উন্মাদ করে রাখে। চীনারা ঘন্টাকে ব্যবহার করত ঈশ্বর অথবা তার সমকক্ষ কারো সাথে কথা বলতে। জাপানীরা তাদের মন্দিরে ব্যবহৃত ঘন্টাকে মনে করত বুদ্ধের কন্ঠ। তারা আরো মনে করত জাপানের ঘন্টাগুলো তাদের মন্দিরের ও বিভিন্ন সময়ের কল্পকাহিনীগুলোকে সংরক্ষণ করে। মিয়ানমারে প্রত্যেক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও বার্মিজের হৃদয়ের সাথে ঘন্টার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের কাছেই ঘন্টা খুব প্রিয়।

মন্দিরগুলোতে অসংখ্য ঘন্টা এবং মন্দিরের বাইরের দানবাকৃতির ঘন্টা হলো বার্মিজ বিশ্বাসের একটি প্রমান যার মুলকথা হলো ঘন্টা দান করা। ঘন্টা দান করাকে জনকল্যানমূলক কাজ হিসেবে তারা বিবেচনা করে। একে তারা নির্বাণ লাভের উপায় বলেও মনে করে। নির্বান হলো এমন একটি অবস্থা যা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করে এবং ভবিষ্যতে পুরস্কৃত করে থাকে।

তিব্বতের ভিক্ষুরা ঘন্টার সাথে বজ্র্য ব্যবহার করে। তাদের মতে ঘন্টা হলো নারীর প্রতীক আর বজ্র্য হলো পুরুষের প্রতীক। তাদের উপাসনার সময় বাম হাতে থাকে ঘন্টা আর ডান হাতে থাকে বজ্র। দুইয়ে মিলে সাম্যবস্থা প্রদর্শন করেন তারা। বৌদ্ধ বজ্রযান মতাবলম্বীদের মতে ঘন্টা তৈরি করা হয় পঞ্চধাতুর সংমিশ্রণে। এই পঞ্চধাতু পঞ্চতথাগতকে প্রদর্শন করে। অর্থ্যাৎ তামা প্রদর্শন করে অমিতাভ, টিন করে অমোঘসিদ্ধি, জিংক করে অক্ষোভ্য, লোহা করে রত্নসম্ভব এবং সীসা বৈরচনকে প্রদর্শন করে বলেই তাদের বিশ্বাস।

ভারতীয় উপমহাদেশে ঘন্টার ব্যবহার মেগালিথিক সংস্কৃতির সময়কাল থেকে, অর্থ্যাৎ খ্রিঃ পূঃ ১০০০ অব্দ থেকে খ্রিঃপূঃ ৭০০ অব্দ এই সময়কালে। মহারাষ্ট্রের খুপা এবং নাগারকুন্ড থেকে ডোমিক্যাল আকৃতির তামার ঘন্টা পাওয়া যায়। মধ্য প্রদেশের মাহুরঝারি থেকে তামার ১৭টি ঘন্টা পাওয়া গেছে। কর্ণাটকের হানুর, মহারাষ্ট্রের জুনাপানি, ভিদর্বা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের কুন্ডিনায়াপুর, মাওলাআলী, হাইতিপামলা এবং রাজগির এর মেগালিথিক বারিয়াল (মৃতদের সৎকার) থেকে ঘন্টা পাওয়া গেছে।

খ্রিঃ পূঃ ৩য়-২য় শতক অব্দতে রাজস্থানের রাইর থেকে লোহার এবং পাকিস্তানের পাঞ্জাব এর টেক্সিলা থেকে ব্রোঞ্জ, কপার এবং সিলভারের ঘন্টা পাওয়া যায়।

পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় ঘণ্টার নাম টজার বেল। সেটি আছে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর ক্রেমলিনে। রাশিয়ার গল্পকথা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সব কিছুর সঙ্গে মিশে আছে এসব ঘণ্টার অস্তিত্ব। মজার ব্যাপার হলো এ ঘণ্টাটি কাঠের তৈরি। এর উচ্চতা ৬ দশমিক ১৪ মিটার, ওজন ২০০ টনেরও বেশি। তবে ঘণ্টাটি কখনো বাজানো যায়নি।

বিশালাকার আরেকটি ঘণ্টা রয়েছে মিয়ানমারে। যা দ্যা গ্রেট সুনকেন বেল নামে পরিচিত। এটি তৈরিতে ২৯৩ দশমিক ৪ মেট্রিক টন কপার ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়াও স্বর্ণ, রুপা ও টিন ব্যবহার করা হয় ঘণ্টাটি তৈরি করতে।

মিয়ানমারে দ্যা গ্রেট মিঙ্গাম বেল নামে আরেকটি ঘণ্টা আছে এর উচ্চতা ১৩ ফুট ও ওজন ৯০ দশমিক ৫৫ টন। পৃথিবীর বড় পাঁচটি ঘণ্টার একটি হচ্ছে বিগ বেন। এটি লন্ডনের একটি বিখ্যাত ঘণ্টা।এর ওজন ৩৩ টন। চীনে তৈরি আরেকটি বিশালাকার ঘণ্টার হলো বেল অব বেইজিং যার ওজন ৬০ টন।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article