নাঈমুর রহমান রিজভী:
আফ্রিকা মহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশের নাম ‘দক্ষিণ আফ্রিকা’। যেখানে সাদা চামড়ার লোকেরা পরিধান করত দামি কাপড় আর খেত দামি খাবার। আর কালো চামড়ার লোকেরা ছিল অবহেলিত, শ্রমজীবী এবং দারিদ্র্য। যাদেরকে রোজ তাড়া করতো পুলিশ। তাঁদের এই দৈন্য অবস্থা, জরাজীর্ণ পোশাক আর দীনহীন জীবনমান দেখে একটি লোকের মনের মধ্যে আক্রোশ জন্ম নিল। ছাত্র অবস্থাতেই সাদাকালোর এই ভেদাভেদ যাকে উৎপীড়িত করত। তিনিই ইতিহাসে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। যার সংগ্রামী জীবনের জয়গান পুরো বিশ্বকে বিস্মিত করেছে।
আজ তাঁর জন্মদিন। ১৯১৮ সালের আজকের দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার উমটাটায় কৃষ্ণাঙ্গ রিজার্ভ ট্রান্সকিই শহরের রাজধানীতে মুভিজোর নামক গ্রামে পিতা হেনরি গাডলা ও মাতা নোসিকেনি দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ তাকে ভালোবেসে ‘মাদিবা’ নামে ডাকে। ২০১০ সালের আজকের দিনটি জাতিসংঘ নেলসন ম্যান্ডেলা আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে নানা আয়োজনে পালন করে।
ম্যান্ডেলা ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র শিক্ষিত যুবক। স্কুলে পড়ার সময় তাঁর এক শিক্ষক নেলসন নামটি রাখেন। ছাত্র অবস্থাতেই সাদা কালোর ভেদাভেদ তাকে পীড়িত করে। তার জীবন ছিল জনগণের জন্য উৎসর্গকৃত।
ম্যান্ডেলার জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু দুর্ভোগ ও প্রাপ্তি
১৯৫৮ সালের ১ আগস্ট তার বিরুদ্ধে প্রিটোরিয়ার আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয়। ১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট তাকে রবিনসন দ্বীপের একটি কারাগারে পাঠানো হয়। বন্দি জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন রোবন দ্বীপে। ১৯৬৪ সালের ১২ জুন বর্ণবৈষম্য বিরোধী সংগ্রামে সক্রিয় আন্দোলন, অঅন্তর্ঘাতসহ নানা অপরাধে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দ্বীপ থেকে দ্বীপান্তরে, কারাগার থেকে কারাগারে নির্যাতন ও কারাদণ্ড ভোগ করলেও ম্যান্ডেলা কখনো বর্ণবাদের সঙ্গে আপস করেননি।
দীর্ঘ ২৭ বছর কারাগারের প্রকোষ্ঠে বন্দি থেকে কঠোর নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করেছেন তিনি। এসব আন্দোলনের জন্য শুধু তাকেই নয়, তার স্ত্রী উইনি ম্যান্ডেলাকেও কারাবরণ করতে হয়েছে এবং তা কন্যাদেরকে শেতাঙ্গ স্কুলে ভর্তিতে বাঁধা প্রদান করা হয়েছে। অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকার শেতাঙ্গ প্রেসিডেন্ট এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্ক ১৯৮৯ সালে বর্ণবৈষম্যের অবসান ঘটান। ১৯৯০ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় এবং ওই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ম্যান্ডেলা মুক্তি পান। পরবর্তী সময়ে তিনি তার দলের পক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকায় সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে ১৯৯৪ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ম্যান্ডেলা ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করে সেচ্ছায় রাজনীতি থেকে অব্যাহতি নেন।
শান্তির সপক্ষে কাজ করা এবং আফ্রিকার নবজাগরণে ভূমিকা রাখার জন্য গত চার দশকে তিনি ২৫০ টিরও অধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পান। ১৯৯৩ সালে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর এই মহান নেতার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। বিশ্ব প্রাণ ভালোবাসার মৃত্যু নেই। মৃত্যু নেই ম্যান্ডেলার। জন্মদিনে এই মহান নেতার প্রতি অভিনন্দন ও শ্রদ্ধা।