27.8 C
Dhaka
Saturday, June 28, 2025

হরেক দেশে হরেক নিয়মের কোরবানির ইদ

Must read

নাঈমুর রহমান রিজভী

ঈদুল আজহা মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। এ উৎসবে মুসলমানরা কোরবানি করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য এই দিনে কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানির বিধি-বিধান এক হলেও বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নিয়মে এটা করা হয়। আজকে আমরা বিশ্বের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দেশে ঈদুল আজহা উদ্‌যাপনের  নিয়ম নিয়ে আলোচনা করবো।

সৌদি আরব

সৌদি আরবে ওই দেশের জনগণের পাশাপাশি হজ পালন করতে আসা হাজিরদের আনাগোনায় থাকায় ইদুল আজহা ভিন্ন রূপ লাভ করে। এখানে ইদের নামাজের পর খুব সকালে পরিবারের সবাই মিলে পশু কোরবানি করে। কোরবানির পশু হিসেবে এখানে উট, দুম্বা, ভেড়া, মেষ, ছাগল ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। দেশটিতে কোরবানির পশুর মাংসকে বরকতময় খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সংযুক্ত আরব আমিরাত

এখানে ঈদের নামাজের পর পশু কোরবানি করা হয়। গরু, ভেড়া, দুমরী, খাসি ও মেমনা সহ অন্যান্য পশু দ্বারা তারা কোরবানি করে থাকে। ৩ থেকে ৪ দিন ধরে সেখানকার মানুষেরা নিজের বাড়িতে পশু জবাই করে ইদ উদ্‌যাপন করে। তাঁরা বাড়ির আশপাশ যেন দূষিত না হয় সেজন্য নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য অপসারণের জন্য কসাইখানার ব্যবস্থা করেন।

ইরান

ইরানে খুব ভোরেই কোরবানি দেওয়া হয়। কোরবানির জন্য গরু, বাকলা, ছাগল, মেষ, উট, বকরি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। সকলে কসাইখানা থেকে মাংস সংগ্রহ করার পরে নতুন পোশাক পরে ঈদের নামাজ আদায় করে। এরপর মাংস খেয়ে প্রিয়জনদের সাথে ইদ উদ্‌যাপন করে। এখানে কসাইখানার বাইরে কোরবানি করা বেআইনি।

তুরস্ক

তুর্কি ভাষায় ঈদুল আজহাকে কুরবান বায়রামি বলে। এ দেশের মানুষেরাও নামাজের পর বাড়ি ফিরে আল্লাহর নামে পশু (সাধারণত ভেড়া) কোরবানি দেয়। পাশাপাশি গরু, ছাগল, বাকরি এবং খরগোশও ব্যবহার করা হয়।

এ দেশেও কসাইখানা ছাড়া অন্য কোথাও পশু কোরবানি করা বেআইনি। তবে এ দেশের মানুষেরা পশু কোরবানি দেওয়ার পরিবর্তে তার সমমূল্যের অর্থ দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করতে পারেন।

পাকিস্তান

এখানেও ঈদের নামাযের পরে বাড়ি ফিরে গরু, ছাগল, ভেড়া বা উট কোরবানি করা হয়। তবে এখানে তারা পালিত পশু কোরবানি করার চেষ্টা করেন। সে লক্ষ্যে অত্যন্ত এক মাস আগে তারা পশু কিনে নিজের যত্নে বড় করেন।

ইন্দোনেশিয়া

ইন্দোনেশিয়ায় ঈদুল আজহা উদ্‌যাপনের রীতিনীতি অনেকটা পাকিস্তানের মতোই। ঈদের নামাজের পরে তারা রাস্তায় কোরবানি করে।

মিশর

মিশরে জিলকদ মাসের শেষের দিকে ঘরবাড়ি সাজানো এবং গ্রাম ও মরু অঞ্চল থেকে কোরবানির জন্য পশু শহরে নিয়ে আসার মধ্য দিয়ে ঈদুল আজহার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। মিসরে কোরবানির জন্য প্রধানত গরু, ছাগল, ভেড়া, বাকরি এবং খরগোশ ব্যবহৃত হয়। ঈদের নামাজের পর নারীরা একটি ঘরে সবাই একত্রিত হয়ে বাচ্চাদের উপহার, সালামী ও বিভিন্ন মুখরোচক খাবার দিয়ে থাকেন। মাগরিবের নামাজের পর আবার সবাই সমবেত হয় এবং দস্তরখানা বিছিয়ে রাতের খাবারে অংশগ্রহণ করেন।

তাজিকিস্তান

তাজিকিস্তানে ঈদের নামাজের পর শিশুরা প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে যায়। সেখানে  তাঁদের জন্য পুরস্কার ও মিষ্টির ব্যবস্থা করা হয়। এরপর পুরুষরা পশু কোরবানির জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

এখানেও নির্দিষ্ট স্থান ব্যতীত কোরবানি দেওয়ার নিয়ম নেই। মাংস নিয়ে বাড়িতে নিয়ে রান্না করার পরে শিশুরা তা পরিবেশন করে। অতিথিকে প্রথমে ফল, পেস্ট্রি ও বিস্কুট নাস্তা দেওয়া হয়। তারপরে মাংসের বাহারি পদ দিয়ে খাবার সম্পন্ন করার পর সবাই মিষ্টি মুখ করে। তাজিকিস্তানে পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় এবং প্রতিবেশীরা অবাধে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যেতে পারে।

ভারত

ভারতে ঈদের নামাজের জন্য নির্ধারিত এলাকা রয়েছে। এই দেশে যেহেতু গরুকে পবিত্র মনে করা হয় তাই এখানকার মুসলমানরা ছাগল বা ভেড়া কোরবানি করে থাকেন। কোরবানির পর মাংস বাড়িতে এনে রান্নার জন্য প্রস্তুত করা হয়।

আফ্রিকান নেশনস

সমগ্র আফ্রিকার বেশিরভাগই মুসলিম দেশে ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন শুরু হয় ঈদের নামাজ আদায় করার মধ্যদিয়ে। ভেড়া, ছাগল বা মেষের মতো পশুই তারা বেশি কোরবানি দেয়। এরপর পরিবার নিয়ে মজাদার সব পদের স্বাদ উপভোগ করেন।

যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যে ঈদের নামাযের পর শুরু হয় কোরবানি। এখানে সবচেয়ে বড় ইদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় জামাইকা মুসলিম সেন্টারে। এখানে কোরবানির জন্য গরু, মহিষ, ভেড়া, খাসি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।  নির্দিষ্ট পশুর খামারে কোরবানি করে সেখানে কোরবানি দাতার নাম, বাবার নাম এবং অর্থ দিয়ে আসলে তারাই কোরবানির মাংস প্যাকেট করে রাখেন।

অষ্ট্রেলিয়া

ঈদুল আযহার দিন অস্ট্রেলিয়ায় সরকারি ছুটি থাকে না। মুসলিমরা মসজিদে নামাজ আদায় করার পর কোরবানি দিয়ে গোশত এবং চামড়ার টাকা গরিবদের মাঝে দান করেন। কোরবানি করার জন্য প্রধানত গাধা, ভেড়া, ও গরুই ব্যবহৃত হয়। অস্ট্রেলিয়াতে গাধার একটি প্রজাতি হল কামেল। যা প্রধানত উত্তর আফ্রিকা থেকে আনা হয়। ভেড়া এবং গরুগুলি এখানে স্থানীয় প্রজাতি হিসেবে পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়ার মুসলমানরা এ দিনে বাকলাঙ্গা এবং লোকুম নামক দুটি তুর্কিশ ডিম রান্না করেন।

এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের ইয়েমেন থেকে সিরিয়া অঞ্চলগুলোতে ঈদের দিন উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি তৈরি করা হয়। তা এখানকার খাবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর মধ্যে স্থানীয় বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী খাবার রয়েছে। উৎসবের দিনগুলো কেবল তাই তৈরি করা হয়। মানামা থেকে শুরু করে লিবিয়ার ঘোড়সওয়ার সবার কাছে ঈদের সময় পাগড়ি ও দীর্ঘ জালাবিয়া জামা খুবই জনপ্রিয়। এদিকে এশিয়ার পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ধূপ থেকে শুরু করে মশাল জ্বালানোর ঐতিহ্য রয়েছে। আর পাকিন্তান, আফগানিন্তান ও অন্য অঞ্চলগুলোতে ঈদের রাতে হাতে মেহেদি দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। শিশু, কিশোরী থেকে তরুণী, বৃদ্ধাসহ সব বয়সী নারীদের দুহাত মেহেদি রাঙা থাকে। আইভরি কোস্ট থেকে কেনিয়া ও অন্যান্য মুসলিম দেশে প্রকাশ্যে পশু জবাই করা হয়। অনেক সময় পশু জবাই দেখতে শিশু-কিশোর দর্শকদের ভিড় লাগে। 

লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article