জুবায়ের রহমান
লাল মাটি আর সবুজ ঘাস ক্যাম্পাসের চিরচেনা রুপ। তাঁর সাথে ভিন্নতা যোগ করেছে উঁচু-নিচু টিলা আর পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত ইট-পাথরের তৈরি চকচকে ভবনগুলো। ঋতুচক্রে এই ক্যাম্পাস সাজে বাহারি সাজে। শরতে কাশ, বর্ষায় ঘন সবুজ ঘাস, বৈশাখে ফলের উৎসব আর বাহারি ফুলের ছটা, আর শীত জুড়েই যেন মলিন ক্যাম্পাসে ঘন কুয়াশার আস্তরণ। তবে সময়ের পরিক্রমায় ক্যাম্পাসে বেশি পর্যটকের দেখা মেলে শরতে এবং শীতের শুরু থেকে বসন্তের সুখ পর্যন্ত।
বলছিলাম দেশের মধ্য-পূর্বাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। শিক্ষা সফর, শীতকালীন ছুটি, গ্রীষ্মকালীন অবকাশ আর শরতের সাদা কাশফুলের দিনগুলোতে বন্ধ ক্যাম্পাস ভিন্ন রুপ নেয়। এদিকে কৃচ্ছ্রসাধন নীতির আওতায় বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম। একটানা তিনদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই বাড়িতে চলে যায়। ফলে বন্ধের দিনগুলো হয়ে উঠে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের।

এদিকে ক্যাম্পাসের পাশেই রয়েছে ঐতিহাসিক শালবন বৌদ্ধ বিহার। আর এটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনেক ব্যক্তিমালিকানাধীন বিনোদন কেন্দ্র, রিসোর্ট, হোটেল সহ বহুমাত্রিক আয়োজন। আর এই সময়টিতে ব্যস্ততা বাড়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও অটোচালকদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘেঁসে চলে যাওয়া রাস্তায় ভিড় লাগে পর্যটক বাসের। আর এই সময়ে ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসতে না পারা যেন এক অতৃপ্ততা পর্যটকদের কাছে। আক্ষেপ ঘোচাতে ক্ষণিকের জন্য হলেও ক্যাম্পাসে এসে ঘুরে যান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য, গোল চত্বর, কাঁঠাল তলা, মুক্তমঞ্চ, অ্যাকাডেমিক ভবন সমূহ, শহিদ মিনার, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া, খেলার মাঠ, লালন চত্বর জুড়ে ঘুরাঘুরি আর নিজেকে ক্যামেরা বন্দি করার আসর জমে। পাহাড় থেকে পাহাড়ে ছুটে চলার এক স্বর্গীয় সুখ কাজ করে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীর কাছে। স্কুল-কলেজে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে এখানে চলে আসে। এছাড়াও বিভিন্ন ট্যুরিস্ট গ্রুপ, বিভিন্ন কোম্পানির কর্মী, বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে এখানে আসতে দেখা যায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পরিবারসহ ঘুরতে এসেছেন আবু বকর সিদ্দিক। একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন তিনি। তিনি বলেন, মৌসুমটা ঘুরাঘুরির। কুমিল্লা প্রাচীন একটি জায়গা। ঐতিহাসিকভাবেই জায়গাটি বিখ্যাত। আর বিশ্ববিদ্যালয়টি কাছে হওয়ার কারণে ভাবলাম ঘুরে যায়। অন্যান্য জায়গার চাইতে এখানে একটু বেশিই প্রশান্তি।

চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা সফরে আসেন ৩ শতাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠানটির গণিতের শিক্ষক বিধান চক্রবর্ত্রী বলেন, কোটবাড়ির ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরতে এসেছি। তাঁর ফাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসা ও ক্যাফেটেরিয়াতে খাওয়া-দাওয়া করতেছি। পড়াশোনায় যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য বৃহস্পতিবার আসা। ক্যাম্পাস ঘুরে ভালোই লাগছে।

পর্যটকদের এখানে আসার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, বন্ধের দিনগুলোতে পর্যটকরা এখানে আসা যাওয়া করলে নিজ ভূমে নিজেকে পরবাসী মনে হয়। বন্ধের একেকটি দিনে এখানে কয়েক হাজার পর্যটক আসে। স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা আসলে কখনো সাদা পোশাক, কখনো নীল, কখনো নেভি-ব্লু সহ রঙে ক্যাম্পাস রঙিন হয়ে উঠে। নতুন ক্যাম্পাস তৈরি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যটক সংখ্যা আরোও বৃদ্ধি পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈন বলেন, পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে কথা বলেছি। বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা প্রদান করেছি যাতে করে চত্বর নির্মাণ, অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে মনোযোগ দেওয়া যায়। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পাবে, শিক্ষার সুন্দর পরিবেশও তৈরি হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।