জুবায়ের রহমান
যারা অনেক বেশি দাপ্তরিক কিংবা ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত থাকে তাদের কাছে মিটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ছোটবড় যেকোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা মিটিংকে এড়িয়ে যেতে পারেন না। ফোর্বসের দেয়া তথ্যমতে, গড় হিসাবে উচ্চপদস্থ একজন ব্যবস্থাপক তার মোট অফিস সময়ের প্রায় অর্ধেক সময় বিভিন্ন মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকেন। আর অধিক সময় নিয়ে মিটিং করার কারণে কর্মীদের চোখে মুখে বিরক্তির ভাব স্পষ্ট হয়ে উঠে। কারণ অতিরিক্ত মিটিং মানুষের শরীরে একঘেঁয়েমি এবং নিদ্রা ভাব নিয়ে আসে। ফলে আলোচনায় মন বসে না, ক্লান্তি বাড়ে, কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় এবং আলোচনার বিষয়বস্তু হারিয়ে ফেলাসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়।
বিভিন্ন সময় দেখা যায় অনেক উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিবর্গরাও আলোচনা সভা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘুমিয়ে পড়েন। যা মানুষের ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে সামগ্রিক কার্যক্রমেও প্রভাব ফেলে। তবে কম সময়ের আলোচনা সভা বা মিটিং এসব সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে কার্যকরী হয়ে উঠে। সেক্ষেত্রে ৩০ মিনিট বা তাঁর কমবেশি সময়ের আলোচনা সভা কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে।
গবেষণা বলছে, আলোচনার বিষয়টি যদি ব্যক্তির পছন্দের হয় তাহলে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় আলোচনায় মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন। আর যদি অপছন্দের হয় তাহলে সেটি ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় হতে পারে। তবে ২ ঘণ্টা মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব হবে যদি ২০ থেকে ৩০ মিনিট বিরতি দেওয়া হয়।
কর্ন ফেরির প্রতিষ্ঠান অরগানাইজেশনাল কনসালটিং ফার্মের একটি সমীক্ষায় বলা হয়, ৬৭ শতাংশ কর্মীরা জানিয়েছেন যে, মিটিংগুলো অধিক সময় ব্যয় করার কারণে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা প্রভাবিত হয়েছে। মিটিংয়ে অত্যধিক সময় ব্যয় করার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ৩৭ বিলিয়ন ডলারের মতো ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। সেজন্য অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের মিটিংগুলোকে ৩০ মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। আবার অনেকেই ৫ থেকে ১৫ মিনিটের সময়ের কথাও বলেছেন।
অল্প সময়ের আলোচনা করার বেশ কয়েকটি ইতিবাচক দিক রয়েছে। যা মূলত কাজের গতি বাড়িয়ে দেয় এবং কর্মীদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করে। অল্প সময়ের মিটিংগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায় সভার আলোচ্যসূচি আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হয়। এক্ষেত্রে কাজের পূর্বপ্রস্তুতিও গ্রহণ করা হয়। ফলে কাজে সক্রিয়তা বাড়ে ও মিটিংয়ের আলোচনার বিষয়ে সবাই আগে থেকে অবগত থাকেন। মূল আলোচ্য বিষয়গুলোকে নিয়ে শুধু আলোচনা করার কারণে খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়। অন্য কোনদিকে মনোনিবেশ করা যায় না। ফলে সময় নষ্ট করার কোনো সুযোগ থাকে না। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, সময় কম হওয়ার কারণে অংশগ্রহণকারীদের মনোযোগ নষ্ট হয় না।
তবে একজন ব্যবস্থাপক হিসেবে মনে রাখা উচিত খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মিটিংয়ের আয়োজন না করাই ভালো। আবার কোনো সময়ে কর্মীদের সর্বোচ্চ সেবা পাওয়া যাবে সেটিও লক্ষ রাখতে হবে। কারণ দুপুরের সময়ে মিটিং আয়োজন করা হলে কর্মীরা ক্লান্ত থাকে। সেক্ষেত্রেও অল্প সময়ের মিটিংয়ে স্থান ও সময় কোনো খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে না।
লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।