জুবায়ের রহমান:
সময়ের পরিবর্তনে মানুষের কাজের ক্ষেত্র ও পরিধির ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। যা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায়না। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে একজন ম্যানেজার হিসেবে নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এমন কিছু দক্ষতা অর্জন করতে হবে যা অতীতে কখনোই প্রয়োজন ছিলো না। জেনে রাখা ভালো যে, সময়ের পরিবর্তনে যে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারে না, সে কখনো সফলতাও ভোগ করতে পারে না।
সময়ের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন এবং প্রতিযোগিতার জন্য একজন দক্ষ ম্যানেজারকে ৫টি নতুন দক্ষতা অর্জন করতেই হবে। তবেই সে সফলতার শীর্ষে পৌঁছাতে পারবে। নিচে সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
ফ্রিল্যান্সারদের পরিচালনা করা
বর্তমান বিশ্বে ঘরে বসে চাকরির সুবিধা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ বিশেষ করে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে যাদের নিয়মিত আনাগোনা ও ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে জড়িত, তারা ঘরে বসে চাকরির সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে বেশ অবগত।
এক্ষেত্রে একজন ম্যানেজারকে প্রযুক্তিগত জ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। অনলাইন যোগাযোগের বিভিন্ন প্লাটফর্ম, বিশেষ করে টেলিগ্রাম, স্কাইপি, গুগলের বিভিন্ন অনুষঙ্গের মতো অন্যান্য প্লাটফর্মের ব্যবহার জানা প্রয়োজন। এতে কর্মীদের তদারকি করা বেশ সহজ হয় ও ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতার কোনো বাধা থাকে না। পুরো বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিতে এইরকম যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর উত্তম ব্যবহার জানা প্রয়োজন।
সফট স্কিল
কারিগরি ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা সবসময়ই আমাদের সমাজে বেশ সমাদৃত। সত্যিকারার্থে একজন ব্যাক্তির কারিগরি ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা তার ব্যক্তিগত, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সফলতাকে ইঙ্গিত করে। আমাদের সমাজও টিকে থাকে কতিপয় এসকল ব্যক্তির তুলনাহীন দক্ষতার মাধ্যমে।
যেমন একজন মানুষের টাইপ স্পিড, সফটওয়্যার ব্যবহারের দক্ষতা এসব ব্যক্তিকে সবসময় এগিয়ে রাখে।
কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে শুধু এসব স্কিল দিয়ে একজন মানুষ দক্ষ ম্যানেজার হয়ে উঠতে পারেননা। এজন্য আবেগ নিয়ন্ত্রণ, সহানুভূতির আচরণ প্রদর্শন, মেজাজ ঠিক রাখা, পরিস্থিতি বুঝে ব্যক্তির সাথে বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজকর্ম পরিচালনা করতে পারার দক্ষতা ব্যক্তিকে অনন্য স্থান নিয়ে যাবে।
আমাদের চলাফেরায় প্রায়ই শুনতে পাই, ওমুক ব্যক্তি কাজে বেশ পারদর্শী, কিন্তু আচার-ব্যবহার, কর্মী পরিচালনার দক্ষতা কিংবা প্রশাসনিক দক্ষতায় বেশ খারাপ। এই কথাগুলোই বলে দেয় বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন হলেও মানুষগুলোর প্রশাসনিক সফট স্কিল ছাড়া নিজেকে মেলে ধরতে পারে না।
ক্রিটিক্যাল থিংকিং দক্ষতা
একজন ম্যানেজার হিসেবে ব্যক্তিকে জটিল সব চিন্তাভাবনার মধ্যে দিয়ে কাজের সমালোচনা করতে হবে। কারণ একজন প্রশাসক সারাদিন অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, যেখানে অনেকগুলো বিকল্প থাকে। সঠিক অপশনটি বাছাই করে নিতে জটিল চিন্তাভাবনার কোন বিকল্প নেই।
এইক্ষেত্রে ব্যক্তিকে বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোমন্দ বিচার করার ক্ষমতা থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণা করতে সক্ষম হতে হবে। ব্যাখা করার উপায় জানা থাকা লাগবে। সর্বশেষ দ্রুত যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্তে আসার সক্ষমতা থাকতে হবে।
আমাদের সমাজে অনেক ব্যক্তিকে আমরা “খুব চালু” শব্দটি ব্যবহার করে থাকি। মূলত তারা তাদের চিন্তাভাবনার খুব সহজ প্রয়োজন প্রয়োগ করতে পারে।
দলগত কাজের পরিবেশ ঠিক রাখা
একই দক্ষতা সম্পন্ন লোকদের নিয়ে গ্রুপ ভিত্তিক কাজ করালে কাজের গতি ও প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন অধিক হয়ে থাকে। কারণ একসাথে কাজ করলে কাজের সমন্বয় হয়। ভুল-ক্রটি থাকলে ধরিয়ে দেওয়া যায়। ভালো কাজ করলে সেখান থেকে শেখা যায়। একে অপরের সাথে মতবিনিময় করার সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং একে অপরকে সাহায্য করতে হয়।
এতে দলে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে সম্মানবোধ জাগ্রত হয় ও অধস্তনতার সাথে দল পরিচালিত হয়। সেখানে গ্রুপ লিডার হিসেবে নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করা সম্ভব হয়।
বর্তমান সময়ে একজন ম্যানেজারের জন্য দল গঠন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা, যা শুধুমাত্র কর্মীদের সাহায্য করে না বরং সামগ্রিক কোম্পানির উত্পাদন ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক অনেক কাজ দলভিত্তিক করতে হয়। এতে গ্রুপের সবার সমন্বয়ে কাজটি সম্পন্ন করতে হয়। একজন না পারলে অপরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হয়। দিনশেষে একটি বৃহৎ কাজ স্বল্প সময়ে খুব সহজেই করে ফেলা সম্ভব হয়।
মেন্টরশিপ
প্রতিটি ব্যক্তিই তার ক্যারিয়ারে একটি বৃহৎ পরিকল্পনা নিয়ে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে থাকে। বিশেষ করে আমরা প্রমোশনের কথা বলতে পারি। তাদের সেই লক্ষ্য ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একজন ম্যানেজার হিসেবে অবশ্যই সুযোগ করে দেওয়া উচিত।
এতে কোম্পানির কর্মীদের আনুগত্য বৃদ্ধি পাবে, কর্মে চঞ্চলতা আসবে। কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও কর্মীকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ দেওয়া যায় এবং তারা সহজেই সেটি গ্রহণ করতে পারে। এছাড়াও টার্নওভার কমে আসবে।
সর্বোপরি ব্যক্তির দক্ষতার যত বৃদ্ধি ঘটবে, যেকোনো সংগঠন কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ততই মুনাফার দিকে অগ্রসর হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
