28 C
Dhaka
Saturday, June 28, 2025

তিনি জীবনমান বদলে দেন

Must read

বদলে দেওয়া মানুষের একজন শাহরিয়র আহমেদ। গত কয়েক বছরে কয়েক হাজার মানুষের লাইফস্টাইল বদলে দিয়েছেন। অন্ধকারে জ্বালিয়েছেন আলো। শিক্ষার্থীদের করেন জ্ঞানের আলোয় আলোকিত, আর দুর্গম এলাকার মানুষের জন্য সৌর থেকে আলো নিয়ে তাদের জীবন থেকে অন্ধকার দুর করেছেন। তার বদলে দেওয়ার গল্প শুনেছেন মুতাসিম বিল্লাহ নাসির

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর অ্যানার্জি রিসার্চের পরিচালক শাহরিয়র আহমেদ চৌধুরী। গবেষণা তার ধ্যান-জ্ঞান। দূর্গম এলাকায় আলো জ্বালানো তার নেশা। পরিবেশ বান্ধব জীবন গড়তে তার টিম নিয়ে করে যাচ্ছেন একের পর এক গবেষণা। ক দিন আগে উদ্ভাবন করেছেন স্মার্ট ভিলেজ ন্যানোগ্রিড। উৎপাদিত সৌর শক্তি নিজের ঘরের চাহিদা মিটিয়ে যাতে অন্যের চাহিদাও পূরণ করে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতে পারে সেটিই ছিলো উদ্দেশ্যে। এজন্য তৈরি করেছেন সোলবক্স মিটার নামের একটি বিশেষ ধরনের যন্ত্র। আর তার এ উদ্ভাবন তাঁকে এনে দিয়েছে জার্মানি থেকে ইন্টার সোলার অ্যাওয়ার্ড। ইন্টারসোলার অ্যাওয়ার্ড কে সোলার ইন্ডাস্ট্রিজে নোবেল অ্যাওয়ার্ড বলে। এ গবেষণা প্রকল্প মারাক্কেসে জাতিসংঘের ২২তম বিশ্ব জলবায়ুতে তাকে এনে দিয়েছে ‘মোমেন্টাম ফর চেঞ্জ পদক’। সেই সঙ্গে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংস্থা ইউএনএফসিসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এ ধরনের উদ্যোগ সারা বিশ্বের জন্য একটি অনুকরণীয় হতে পারে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ উপলক্ষ্যে শাহরিয়র আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে করা আরেকটি গবেষণা প্রকল্প বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ইন্টার ইউনিভার্সিটি প্রজেক্ট কম্পিটিশন এ ফাস্ট রানার আপ পুরস্কার জিতেছে। মাটির আর্দ্রতা পরিমাপ করে স্বয়ংক্রিভাবে সেচ পরিচালনা ছিলো এ প্রকল্পের থিম। এটি নিয়েও দারুন আশাবাদি এ গবেষক।

মানুষের জীবন মান পরিবর্তনের অংশ হিসেবে মানিকগঞ্জ, নোয়াখালী, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, নরসিংদী, রাজশাহীর গ্রামগুলোতে তিনি তার প্রকল্প চালু করেছেন। ইউকলের আর্থিক সহায়তায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার পারতলী ইউনিয়নে সৌরশক্তি ব্যবহার করে ১৪১ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে, দিন-রাত পাঁচ শর বেশি বাড়িঘর, দোকানপাটে আলো জ্বলছে। রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের পলাশী-ফতেহপুর গ্রামও ১৪১ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে, দিন-রাত পাঁচ শর বেশি বাড়িঘর, দোকানপাটে আলো জ্বলছে। রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের পলাশী ফতেহপুর গ্রামও ১৪১ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। ভোলায় মনপুরা উপজেলায় বাংলাবাজার, মাস্টার হাট ও আশপাশের এলাকায় সোলার ইলেক্ট্রো বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রকল্পের মাধ্যমে ১৭৭ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে। ৬৬১ জন গ্রাহজ এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাড়ি, দোকানপাট, দুটি বাজার আলোকিত রাখবেন, একটি বরফকল চলবে।

এমন আরও প্রকল্পের কথা বলতে গিয়ে শাহরিয়র আহমেদ বলেন, ভোলার মনপুরাতে কোনোদিন বিদ্যুৎ যেত না। সেখানের মানুষ সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে যেতেন। এখন যদি যান দেখবেন ‘রাত ১০-১১টা পর্যন্ত মানুষ বাজারে আছে। দোকানদার বিক্রি করছে। সেখানে নতুন নতুন ব্যবসা গড়ে ওঠছে। আগে মানুষ সরিষা ভাঙ্গানোর জন্য নৌকায় নদী পার হয়ে অনেক কষ্ট করে দূর থেকে ভাঙ্গিয়ে নিয়ে আসত। কিন্তু এখন এর সেই কস্টের দিন নেই। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিদ্যুৎ পাচ্ছে। শিশু-কিশোররা আলোতে জীবন যাপন করতে পারছে। এতটুকুই চেয়েছিলাম। তার চেষ্টায় এখন দূর্গম এলাকার মানুষের জীবন মান বদলিয়েছে। কৃষকরা সুবিদা পাচ্ছে। থেকে নেই তার কাজ। মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নে ‘সুপারস্টার’ প্রকল্পের মাধ্যমে ৮৭৫জন গ্রাহক ২৪০ কিলোওয়াট সৌরবিদ্যুৎ পেয়েছেন। ১৫টি পাম্প খটখট জমিতে পানি পৌছে দেবে, স-মিল কাঠ কাটবে, ১২টি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় ভালোভাবে লেখাপড়া হবে। এ বছরে শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরীর ডিজাইন করা ২০টি সৌরবিদ্যুৎ মিনিগ্রিড প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫-২০ হাজার পরিবার, গ্রাম্য বাজার ও ছোটখাটো কলকারখানা চলবে।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article