28 C
Dhaka
Saturday, June 28, 2025

বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কী প্রতিষ্ঠা হচ্ছে?

Must read

আনিসুর রহমান:

বাংলাদেশে নতুন করে আরো দুটি ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে আদৌও কি এত এত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন আছে?

আমাদের দেশে সংখ্যা ও অবস্থানগত দিক দিয়ে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের মান খুবই নিম্ন। সেগুলোতে নেই পড়াশোনার সঠিক পরিবেশ, নেই গবেষণা, নেই মুক্তবুদ্ধি চর্চা, নেই প্রশ্ন করার অধিকার। আসলে আমাদের দেশে নতুন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হচ্ছে মানে দেশে সার্টিফিকেট অর্জনের উদ্দেশ্যে আরো কিছু শিক্ষিত গরু উৎপাদনের ফার্ম খোলা হচ্ছে। কথাটি খুব বাজে শোনালেও সত্যি।

বর্তমানে বাংলাদেশে অর্ধশতকের ওপরে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। কিন্তু এর মধ্যে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও ওয়ার্ল্ডের সেরা ১০০০ এর মধ্যে রয়েছে কয়টি? কিন্তু আমাদের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও ভারতের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় সেরা ৫০০ এর মধ্যে আছে। তো বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই সিরিয়ালে আসতে পারছে না কেন? কারণ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অ্যাকাডেমিক খ্যাতি, চাকরির বাজারে সুনাম, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত, শিক্ষকদের গবেষণা সহ আন্তর্জাতিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতের সূচকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

এর কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা খাতে সরকারের দেওয়া স্বল্প বাজেট। দ্বিতীয়ত, সরকার যে বাজেট দেয় তার বড় একটা অংশ উধাও হয়ে যায়। তৃতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে হস্তক্ষেপ। এগুলো হলো বৃহৎ অর্থে।

এছাড়াও আরো কিছু কারণ রয়েছে। যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার পরিবর্তে চর্চা হয় মুখস্থ বিদ্যার। আবার শিক্ষকদের রাজনীতি, শিক্ষক-ছাত্র দ্বন্দ্ব কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে দ্বন্দ্ব। অন্যদিকে সরকারি দলের রাজনীতির একটা প্রভাব তো আছেই।

বর্তমান সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা খাবার সমস্যার পাশাপাশি আরো কত যে সমস্যার সম্মুখীন হয় তার কোনো ইয়ত্তা নেই। শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত টিউশন ফি, সেশনজট, শিক্ষার্থীর সংখ্যার তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট্ট ছোট্ট শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষকের অভাব, শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষকের অভাব, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসৌজন্যমূলক আচরণ, আবাসন সমস্যা, গণরুম বা গেস্টরুমের সংস্কৃতি, হলগুলোতে অপর্যাপ্ত রিডিং রুম ও অস্বাস্থ্যকর শৌচাগারসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়। এত এত সমস্যা থাকলে সেখানে বিদ্যা উৎপাদন হবে কীভাবে?

প্রতিবছর অসংখ্য শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে বেকার অবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসেবে দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ। এই বেকারদের মধ্যে ১৬ লাখ ৭০ হাজার পুরুষ আর আট লাখ ৩০ হাজার নারী। এই পঁচিশ লাখ বেকারের মধ্যে দেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর শকতরা ৪৭ ভাগ বেকার। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) রিপোর্ট অনুযায়ী বেকারদের মধ্যে ৭৮ শতাংশ শিক্ষিত তরুণরা মনে করেন গুণগত শিক্ষার অভাবে তারা চাকরি পাচ্ছেন না।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা জরুরি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সঠিক মান নিশ্চিত করা আরো বেশি জরুরি। একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার পর তার যথাযথ মান নিশ্চিতকরণ সম্ভব না হলে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দরকার নেই। যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রয়েছে তার মান উন্নয়ন করা উচিত। কারণ এ দেশে শিক্ষিত গরুর আর প্রয়োজন নেই।

লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article