আবু শামা:
সকালে পাখির কূজনের সাথে সাথে কোলাহলপূর্ণ হয় ময়দান। যুবক, বৃদ্ধ, আবাল-বনিতার পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে চারপাশে। ইট পাথরের শহরে যেখানে নিঃশ্বাস নেওয়ার নেই কোন স্থান, সেখানে খোলা মাঠ যেন একটি মুক্ত প্রাঙ্গণ। বলছিলাম বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের সিরাজউদ্দৌলা রোডের পশ্চিম পাশে অবস্থিত চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের মাঠে প্যারেড ময়দানের কথা।
ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রাম কলেজের উত্তর পাশে যে বিশাল খালি ময়দান রয়েছে, এক সময়ে সেখানে গোরা বাহিনী নিয়মিত প্যারেড বা কুচকাওয়াজ করত। পরবর্তী সময়ে এই কর্মযজ্ঞের কারণে মাঠটি ‘প্যারেড ময়দান’ নামেই পরিচিত হয়ে ওঠে।
২০১৩ সালে মাঠের উন্নয়নের লক্ষ্যে ও চারপাশের মানুষের জন্য ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াকওয়ে, লোহার বেড়াসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে মাঠটি প্রতিদিন ভোর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। তবে মাঠে কোনো সভা, সমাবেশ, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে চাইলে চট্টগ্রাম কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়।
নগরীর ব্যস্ততম এলাকা চকবাজার কে ঘিরে রয়েছে এই প্যারেড ময়দান। তার পাশেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে, মহসিন কলেজ, কাজেম আলী কলেজ, ল্যাবরেটরি স্কুল, বিভিন্ন কোচিং সেন্টারসহ আরও অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে এলাকাটিকে বলা হয় চট্টগ্রামের জ্ঞানের কেন্দ্র। তবে মোদ্দাকথা হলো এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনোটিরই নিজস্ব কোনো মাঠ নেই। ফলে ক্লান্ত বিকেল কিংবা বন্ধুদের আড্ডায় এই প্যারেড ময়দানই তাদের শেষ ভরসা। স্কুল ছুটি শেষে যেন হয়ে যায় এক কচি-কাচাদের মেলা।
প্রতিদিন এই মাঠে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে একইসাথে চলে ক্রিকেট, ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন। নিয়মিতই খেলাধুলা করে প্রায় ২০ থেকে ২৫টি দল। এছাড়াও রয়েছে বেশ কয়েকটি প্র্যাকটিস নেট। সকাল ও সন্ধ্যায় বেড়ে যায় উৎসুক মানুষের আনাগোনা। শরীরের ফিটনেস ধরে রাখা কিংবা নিজেকে সুস্থ রাখতে আশেপাশের মানুষের কাছে এই মাঠ যেন এক স্বস্তির নিঃশ্বাস। চার দেয়ালের আবদ্ধ জীবন ছেড়ে প্রাণভরে শ্বাস নেওয়ার যেন শেষ আবদার। চায়ের দোকানগুলোতে গরম ধোঁয়ায় ভরে উঠে চারপাশ, রাজনৈতিক যুক্তি তর্কে একে অপরকে পরাস্ত করার যেন শেষ বাসনা।
শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। এখানে জন্ম নেয় হাজারো হতাশা ও সফলতার গল্প। মাঠের একপ্রান্তে কারও চোখের অশ্রু যেন ভেঙ্গে দিয়ে গেল প্রেমিক যুগলের প্রণয়। বিদায় ঘটে স্মৃতিময় মধুর সম্পর্কের। অন্যপ্রান্তে গোলাপের সুরভি ছড়িয়ে ঘটে নতুন সম্পর্কের পথচলা। কেউ কাঁদে হতাশায়, কেউ হাসে সফলতায়। কেউ পায় সান্ত্বনার বাণী, অন্যজন শুনায় আশার বাণী। এভাবেই চলছে এখানকার জীবন। অতঃপর দূর থেকে দূরে চলে যাওয়ার পর এখানকার গল্পরাও গল্প করে বেড়ায় সেখানে প্রতিক্ষণ। স্মৃতিরা ঘুরে বেড়ায় নতুন কোনো স্থানে।
শিক্ষার্থী: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।