28 C
Dhaka
Saturday, June 28, 2025

মোহাম্মাদ আলীর ইসলাম গ্রহণের প্রকৃত কারণ

(টাইমস ম্যাগাজিন ও ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে)

Must read

সাইয়্যেদ নুরসী

১৯৬৪ সালে বক্সিং-এ হেভিওয়েইট চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা জয় করেন মোহাম্মাদ আলী। চারদিকে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পরে। ঠিক তখনই খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগ করেন তিনি। প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন ইসলাম গ্রহণের। একই সাথে ঘোষণা দেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতার। তিনি বলেন, “আমি মহান আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমি শান্তিতে বিশ্বাসী। আমি শ্বেতাঙ্গ প্রতিবেশীর কাছে যাই না। কোন শ্বেতাঙ্গ নারীকে বিয়েও করতে চাই না। আমাকে ১২ বছর বয়সে ব্যাপটাইজ (খ্রিষ্টান ধর্মে দিক্ষিত) করা হয়। কিন্তু এই ধর্ম কি, আর ধর্মীয় কি কাজ করতাম তা জানি না। আমি আজ থেকে আর খ্রিষ্টান নই। আমি সত্যের সন্ধান পেয়েছি। এটাই আমার গন্তব্য। তোমাদের ইচ্ছামতো আমি আর চলছি না। আমি মুক্ত। এটাই আমার আকাঙ্ক্ষা।”

এই ঘোষণার পেছনে যে ঘটনা তা হয়েছিল এর তিন বছর আগে ১৯৬১ সালে। তিনি একটি রচনায় সে বিষয়ে লিখেছেন। রচনা লেখার পেছনেও আছে একটা মজার ব্যাপার। একবার মোহাম্মাদ আলী স্ত্রী বেল্ডিার সাথে তুমুল ঝগড়ায় জড়িয়ে পরেন। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যা তা বলা শুরু করেন। তখন তার মাঝে মানবিকতার লেশ মাত্র ছিল না। ভাব দেখে মনে হচ্ছিল তিনি নিজেই খোদা। তার অহংকারে পানি ঢালেন স্ত্রী বেলিন্ডা। বলেন আল্লাহকে ভয় করো। তিনি সর্বময় ক্ষমতার মালিক, তুমি নও।

এতে আলী কিছুটা শান্ত হন। স্ত্রী বেলিন্ডা স্বামীর মেজাজ ঠান্ডা করতে একটা কৌশল নেন। আলীকে খাতা কলম ধরিয়ে দেন এবং তার ইসলাম গ্রহণের কারণ নিয়ে একটি রচনা লিখতে বলেন। বাস্তবে সেই রচনায়ই উঠে এসেছে মোহাম্মাদ আলীর খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগের প্রধান কারণ।

চিঠিটি সংগ্রহ করেছেন আলীর জীবনী লেখক জনাথন এইগ। এটি ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব আফ্রিকান আমেরিকান হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এখানে সেটির তুলে ধারা হলো:

ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব আফ্রিকান আমেরিকান হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার যাদুঘরে সংরক্ষিত কপি।

“আমি তখন লুইভিলে থাকি। এক রাতে বাসায় ফিরছিলাম। আসার পথে ব্রডওয়ে স্ট্রিটের স্কেটিং জোনে একটু দাঁড়িয়েছিলাম। সেখানে প্রায় ৪০০ মানুষের সমাগম হয়ে‍ছিল। সবাই কৃষ্ণাঙ্গ। অন্যদের মত আমিও কথা বলার জন্য একজন সুন্দর রমণী খুঁজছিলাম। ঠিক সেসময় এক ভাই আমার দিকে এগিয়ে আসল। তার গায়ে ছিল স্যুট ভেতরে সাদা জামা ও কালো টাই। সে পত্রিকা বিক্রি করছিল। পত্রিকার নাম “মুহাম্মাদ স্পিকস”। এটি আগে কখনো দেখিনি। আমাকে জিজ্ঞাসা করল, ভাই পত্রিকা কিনবেন নাকি? আপনার নিজ জাতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। জানতে পারবেন আপনার সঠিক ইতিহাস ও ধর্ম সম্পর্কে। আর দাস হিসেবে শ্বেতাঙ্গদের দেয়া নামের আগে আপনার কি নাম ছিল।

সেইদিন রাত ৮টায় ব্রডওয়ে স্ট্রিটে ন্যাশন অব ইসলামের একটি সভা হয়। পত্রিকা বিক্রয়কারী আমাকে সভায় যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। আমি তাতে সম্মতি জানিয়েছিলাম। তবে যেতে মন সায় দিচ্ছিল না। তবে একটি পত্রিকা কিনেছিলাম। কারণ একটি কার্টুন চিত্র আমার নজর করেছিল। যে চিত্রের বিষয়বস্তু ছিল আমেরিকায় আসা দাসদের দুর্দশার ঘটনা। চিত্রে দেখা যাচ্ছে একজন দাস কাবার দিকে মুখ করে আরবি ভাষায় প্রার্থনা করছেন। তার শ্বেতাঙ্গ মনিব তা দেখে রেগে গেলেন। ক্ষিপ্ত ও বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করছেন, তোমাকে আমার ধর্ম শিখিয়েছি। তুমি তা বাদ দিয়ে বিধর্মী ভাষায় কি প্রার্থনা করছো? বলতে বলতে, দাসটিকে চাবুকের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করছে। আর দাসকে তার নিজস্ব সংস্কৃতি, ধর্ম ও ভাষা ত্যাগ করতে বলছে। বাধ্য করছে মনিবের সংস্কৃতি, ধর্ম ও ভাষা গ্রহণ করতে। শেষে দাসটি বলছে, স্যার আমি আপনার জেসাস, আপনার দেবতার প্রার্থনা করব, আমি আপনার জেসাসের প্রার্থনা করবো। এক কথা শুনে মনিক সন্তুষ্টচিত্তে হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছেন। কার্টুন চিত্রটি আমি পছন্দ করেছিলাম। এটি আমার মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। আমাকে অনেক বড় ম্যাসেজ দিয়েছিল।“

মোহাম্মাদ আলী ১৯৬১ সালের এই ঘটনার পর থেকে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে থাকেন। ইসলামের প্রতি আগ্রহ, শ্বেতাঙ্গ ও খ্রিষ্টান ধর্মের প্রতি বিদ্বেষের সূচনা তখনই শুরু হয়। তিনি ন্যাশন অব ইসলামের আদর্শে প্রভাবিত হন। কৃষ্ণাঙ্গ তথা নিজ পূর্ব পুরুষদের কষ্টের ইতিহাস জানেন। ধর্মের কাহিনি শোনেন। কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর শ্বেতাঙ্গদের বর্বরতার ঘটনা জানেন।

১৯৬৪ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর নিজের নাম রাখেন মোহাম্মাদ আরী। তার আগের নাম কেসিয়াস ক্লে। স্ত্রী বেলিন্ডার বর্তমান নাম খলিলাহ ক্যামাকো-আলী। মোহাম্মাদ আলী ধর্ম ও নাম পরিবর্তন করায় বেশ তেপের মুখে পরেন। সংবাদ সম্মেলনে তাকে কেসিয়াস ক্লে নামে সম্বোধন করলে ক্ষেপে যেতেন। মোহাম্মাদ আলী নামে না ডাকলে উত্তর দিতেন না। এমনকি বক্সিং রিং-এ কেউ তাকে কেসিয়ান ক্লে নামে ডাকলে উত্তেজিত হয়ে যেতেন এবং প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠতেন। ২০১৬ সালে ৭৪ বছর বয়সে এই কিংবদন্তি ইন্তেকাল করেন।

“মুহাম্মাদ স্পিক্স” পত্রিকায় ১৯৬১ সালে প্রকাশিত কার্টুন।

 

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article