29.1 C
Dhaka
Friday, June 27, 2025

মোদি সরকারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যুব কর্মসংস্থান তৈরিতে ব্যর্থ; তবু কেন আবার জয়ী হচ্ছেন তিনি?

Must read

অনুবাদ: জুবায়ের রহমান

ভারতের নতুন নির্বাচন শুরু হচ্ছে আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে। চলবে আগামী জুন পর্যন্ত। লোকসভার ৫৪৩ জন সাংসদ নির্বাচন করতে এবারে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৯৫০ মিলিয়ন।

অনেকেরই ধারণা আবারও ফের পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসছেন নরেন্দ্র মোদী। এক দশক ক্ষমতায় থাকা মোদী এখনও ভারতে যে পরিমাণ সমাদৃত, সেটার ধারে কাছেও নেই বিরোধিরা।

অর্থনৈতিক ধীর বৃদ্ধি ও কম চাকরি

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির তেমন উন্নতি না থাকা এবং তরুণদের কর্মসংস্থানের তেমন সুযোগ তৈরি করতে না পারায় ভারতে যে পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে সেটি মোদীকে অদ্ভুতভাবে আঘাত করতে পারে। মোদী সরকারের অর্থ ব্যবস্থাপনা অনেক ভোটারকে হতাশ করতে পারে। তবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, ভারত সরকার ভোটারদের এ কথা বলতে পারে যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের চাইতে অনেক বেশি এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু বিজেপি দশ বছর আগে সরকারে এসে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।

আরও খারাপ বিষয় হল যে, চাকরি পেতে লক্ষ লক্ষ তরুণদের প্রতিনিয়দ লড়াই করতে হচ্ছে। সমালোচকরা বিজেপি সরকারের অর্থনৈতিক ত্রুটিগুলোকে নিয়ে সমালোচনা করেছেন, যেখানে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান কে বাধাগ্রস্ত করেছে। এই বিষয়গুলো হলো;

  • ২০১৬ সালে ভারতের কাগজের অর্থের ৮৫% আকস্মিক প্রত্যাহারের ফলে ধাক্কা লেগেছিল, স্পষ্টতই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য।
  • কৃষি খাতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সংস্কারে চরম বিশৃঙ্খলার প্রবর্তন
  • এবং অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি প্রতিযোগিতা থেকে ভারতের বড় শিল্পগোষ্ঠীর চলমান সুরক্ষা।

সমালোচকদের অভিযোগ, এই ভুলগুলি অনেকের কাজে বিপজ্জনক করে ফেলেছে এবং উৎপাদনে বিনিয়োগ আটকে দিয়েছে। যা অনেক লোকের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারত।

একটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী ঘাঁটি তৈরি করা

তাহলে কেন এত ভারতীয় এখনও মোদী সরকারকে সমর্থন করে? এর কিছু উত্তর লুকায়িত আছে বিভিন্ন এলাকায় বিজেপির ক্ষমতার মধ্যে। ভারতকে শাসন করতে হলে প্রয়োজন ভোটারদের জোট কিংবা দলগুলোর মধ্যে জোট। ভারতের বিজেপি সরকার মূলত দুটো কাজই করে থাকে। তারা সংসদের ছোট ছোট দলগুলো দ্বারা সমর্থিত।

তাদের শাসনব্যবস্থার সাথে হিন্দুত্ববাদ জড়িয়ে থাকার কারণে তারা এটাই প্রচার চালায় যে, ৮০ ভাগ হিন্দুর দেশ তাদের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছার প্রতিফলন করা উচিত।

কয়েক দশক ধরে তারা প্রচারণা চালিয়েছে যে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের তারা অযৌক্তিকভাবে সুরক্ষা দিয়ে আসছে। যার মধ্যে তাদের ধর্মীয় উপসনালয়, বিবাহ বিচ্ছেদ ও শিশু সুরক্ষা আইনের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়াও জম্মু ও কাশ্মীর যে স্বায়ত্তশাসন দাবি করে আসছে সেটির বিরুদ্ধেও ভারত সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। ধাপে ধাপে গত এক দশকে মোদি সরকার এসব দাবির অনেকগুলো পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে বিজেপির হিন্দু জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছে।

২০১৯ সালে ভারত সাংবিধানিক সংশোধনী প্রত্যাহার করে। ফলে কাশ্মীরকে কীভাবে শাসন করা হবে তা নির্ধারণ করার জন্য নয়াদিল্লির অধিকার সীমিত করা হয়। এছাড়াও বছরের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদী ১৯৯২ সালে অযোধ্যায় হিন্দু জাতীয়তাবাদী কর্মীদের দ্বারা ভেঙে ফেলা একটি মসজিদের জায়গায় নতুন হিন্দু মন্দিরের উদ্‌বোধনী অনুষ্ঠানেও সভাপতিত্ব করেছিলেন।

সরকার ঘোষণা করেছে শীঘ্রই একটি নতুন আইন কার্যকর হবে। যা হিন্দু, শিখ এবং অন্যান্যদেরা যারা প্রতিবেশী মুসলিম দেশ থেকে পালিয়ে এসেছে তাদের তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু পালিয়ে আসা মুসলিমদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে নির্বাসনের অনুমতি দিতে পারে।

অনেকে বিশ্বাস করেন যে একটি “ইউনিফর্ম সিভিল কোড” সবার জন্য করা হবে এবং ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল ভারতীয় নাগরিকের উপর সাধারণ বিবাহ, ভরণপোষণ এবং হেফাজতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নারী ও শহুরে, মধ্যবিত্ত ভোটারদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল

হিন্দু জাতীয়তাবাদ ভারতের অভ্যন্তরে অনেক শক্তিশালী। কিন্তু ভারতকে শাসন করার জন্য বিজেপি প্রয়োজনীয় আসন পাওয়া তাদের একার পক্ষে সম্ভব না। সেজন্য তারা শহরের মধ্যবিত্ত ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করেছে দলটি। কারণ এই গোষ্ঠীটি সাংস্কৃতিক বিষয়গুলিতে খুব কম আগ্রহী। পাশাপাশি সুশাসনের ক্ষেত্রে সারাবিশ্বে ভারতের যে অবস্থান সেটি নিয়ে তারা বেশ উদ্বিগ্ন।

গত দুটি নির্বাচনে বিজেপি সরকার দুর্নীতি দমন, দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি, উন্নত পরিকাঠামো নির্মাণ এবং জাতীয় গর্ব পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। একইভাবে এবারও তাদের এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেদের ভোটারদের ধরে রাখার চেষ্টা করছে। যা বিশ্বাসযোগ্য বিকল্পের অভাবে এমন হয়ে আসছে।

একই সময়ে বিজেপি গ্রামের দরিদ্র এবং মহিলাদের সমর্থন পেতে চেষ্টা করবে। যাদের একটি অংশ কখনোই ভোট দিতে কেন্দ্রে যায় না এবং আরেকটি অংশ হলো বামপন্থিদের সমর্থন দিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তাদের কাছে ভোট পাওয়ার জন্য মোদি সরকার গ্রামীণ আয়ের গ্যারান্টি স্কিমের জন্য তহবিল দ্বিগুণ করেছে। পাশাপাশি স্কুলের শিশুদের মধ্যাহ্নভোজ সরবরাহ করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি চালু করেছে। এছাড়াও মহিলাদের লক্ষ লক্ষ ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুবিধা দিয়েছে। যা গ্রামীণ পর্যায়ে নারীদের স্বাবলম্বী করতে সহযোগিতা করেছে। গ্রামের লক্ষ লক্ষ বাড়িতে টয়লেট এবং রান্নার গ্যাসের বোতল সরবরাহ করেছে। যা নারীদের মনে মোদি আলাদা অবস্থান করে নিতে সহযোগিতা করবে।

এই কাজগুলো মোদিকে এখনো সুবিধাজনক অবস্থানে রেখেছে। সাম্প্রতিক সময়ের নির্বাচনগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় গ্রামে দরিদ্র মহিলারা বিজেপিকে আগের চেয়েও আরও বেশি ভোট দিয়েছে।

এবার দলটি বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে সমর্থন জোগাড় করতে চেষ্টা চালাচ্ছে। নতুন জেন্ডার কোটায় পাশের মাধ্যমে ২০২৯ সাল থেকে লোকসভার এক তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করতে হবে।

বিভক্তি ও দুর্বল বিরোধী

নির্বাচনে জয়লাভ করার ক্ষেত্রে মোদী সরকারের সাফল্য চিত্তাকর্ষক। তবে এটি অবশ্যই লক্ষ করা উচিত যে বিজেপি কখনও জাতীয় নির্বাচনে ৪০% এর বেশি জনপ্রিয় ভোট অর্জন করতে পারেনি। যদি এই নির্বাচন ঐক্যবদ্ধ এবং কার্যকর বিরোধিতার মুখোমুখি হয় বিজেপি, তবে এটি সরকারে জয়ী হওয়ার জন্য লড়াই করতে পারে।

বিজেপির জন্য আনন্দের বিষয় এই যে, ভারতের বিরোধী দলগুলোর মধ্যে রয়েছে চরম বিভক্তি ও দুর্বল গঠন। যদি তারা জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে আসতে পারে এবং  পৃথক জেলায় বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে একক শক্তিশালী প্রার্থী দাঁড় করাতে পারে তবে তারা অনেক বেশি আসনে জয়লাভ করতে পারবে। তবে এই কাজ করার জন্য আলোচনার টেবিলে সবাইকে এক করা একটি কঠিন কাজ। আরও খারাপ বিষয় হল যে, ভঙ্গুর বিরোধী জোট এখনও প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে পারেনি।

কংগ্রেস পার্টির নেতা রাহুল গান্ধী, নেহেরু-গান্ধী পরিবারের বংশধর যিনি স্বাধীনতার পরে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন; তাকে অকার্যকর বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি হিসেবে ভাবনা হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সফল আঞ্চলিক রাজনীতিবিদদের নিজেদের রাজ্যের বাইরে সীমিত নাগাল রয়েছে।

এদিকে মোদির ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তার শালীন পটভূমি এবং ব্যক্তিগত ক্যারিশমা এখনও তরুণ এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষীদের কাছে আবেদনময়ী। যদি কোনো অঘটন না ঘটে তবে মোদির মতো এমন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে নির্বাচনে পরাজিত করা সত্যিই কঠিন যাবে।

(কনভারসেশন থেকে অনুবাদিত। মূল লেখক: ড. ইয়ান হল, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়।)

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest article