‘পদ্মাসেতু’ এবং একটি স্বপ্নের দ্বার উন্মোচন

নাঈমুর রহমান রিজভী:

যোগাযোগ এবং উন্নত প্রযুক্তির অভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো দীর্ঘদিন রাজধানী থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সাথে তৈরি হলো নতুন মেলবন্ধন। দীর্ঘদিনের অবহেলিত দক্ষিনাঞ্চলের প্রায় ৪ কোটি মানুষের সাথে অর্থনৈতিক ও  সামাজিক বন্ধন আরো সুদৃঢ় হয়েছে।  উন্মোচিত হয়েছে নতুন স্বপ্নের দ্বার।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, পদ্মায় সেতু নির্মিত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সমগ্র দেশের যে সংযোগ স্থাপিত হবে এবং অর্থনৈতিক যে উন্নয়ন সাধিত হবে তাতে দেশের মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১.২% এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জি আরডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৩.৫% বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি অনেক মানুষ পাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ। এর সঙ্গে যোগ হবে  পদ্মা সেতুর ফলে ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়া পরিবহন খরচ।

২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশ সরকার প্রকল্পটি অনুমোদন করেন এবং একটি জাতীয় অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে দ্রুত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেন। ২০১১ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এর অর্থায়নে এই সেতুর ডিজাইন প্রণয়ন করা হয়। ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর এ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর আববাহিকায় ৪২টি পিলারের ওপর ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থের দেশের সবচেয়ে বড় এই সেতু এখন প্রস্তুত। এটির প্রয়োজনে অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৯১৮ হেক্টর জমি।

পৃথিবীর দ্বিতীয় খরস্রোতা নদী পদ্মা, যার নিচে বালু ও ভূপৃষ্ঠের গতিপ্রকৃতি অত্যন্ত জটিল ও ঝুকিপূর্ণ। সেই নদীর বুকে এতো বড় সেতু নির্মাণ বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। পদ্মা সেতুকে প্রকৌশল জগতের এক বিস্ময় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে ১০০ বছরের স্থায়িত্বের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এই সেতু। যেখানে ব্যবহৃত হয়েছে বিশ্বের এ যাবৎকালের সর্বদীর্ঘ পাইল, সম্পাদিত হয়েছে তীর সংরক্ষণের জন্য নদীশাসন সংক্রান্ত সর্বোচ্চ মূল্যমানের একক চুক্তি এবং ভূমিকম্প প্রতিরোধে যুক্ত হয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং।

দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশী প্রকৌশলীসহ চার হাজার প্রকৌশলী। বিদেশি উপকরণের পাশাপাশি এখানে  দেশীয় উপকরণও ব্যবহৃত হয়েছে। স্প্যান, পাইলিং ও পিলার তৈরিতে সম্পৃক্ত বাংলাদেশী প্রকৌশলীরা পেয়েছে নতুন অভিজ্ঞতা।  তাদের তথ্য অনুযায়ী, আয়তন ও নির্মাণ ব্যয়ের দিক থেকে পদ্মা সেতু দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। দ্বিতল সেতু হওয়ায় এর উপর তলায় চলবে মোটরযান এবং নিচের তলায় চলবে মিটার গেজ ও ব্রড গেজ উভয় ধরনের ট্রেন।

দেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। পদ্মা সেতু শুধু মাত্র একটি অবকাঠামো নয়, এটা দেশের সক্ষমতার প্রতীক, আত্মমর্যাদার প্রতীক। আমাদের অন্যতম অহংকার ও গৌরবের প্রতীক। আত্মমর্যাদা সম্পন্ন বাঙালির গর্বের আরেকটা নতুন সংযোজন পদ্মা সেতু।
লেখক: শিক্ষার্থী, লোক প্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

- Advertisement -

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version