কেমন ভিসি চাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

সাবের হোসেন সৌরভ

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বিভিন্ন সময় ক্ষমতাশীল দলের আধিপত্য বেশি দেখা যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় আমরা ভিন্ন ভাবে চিন্তা করতেছি। সত্যিকার অর্থে আমরা কখনো আহমদ ছফার  গাভী বৃত্তান্ত  উপন্যাসের আবু মোহাম্মদ জোনায়েদ কে ভিসি চাই না। ভিসির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিসি। আমরা এখন এমন একটি সময় দাড়িয়ে আছি, যখন একটি সিদ্ধান্ত নিতে আগের থেকে দশবার বেশি চিন্তা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ যে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে প্রায় সব গুলোতে ভিসির মত গুরুত্বপূর্ণ আসনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিকে চিনতে হবে, জানতে হবে এমন কোনো কথা নয়। ভিসি অপরিচিত হতেই পারে। আমাদের ভিসি হবে সকলের জন্য সমান৷

ভিসি যদি বাসভবনে যাওয়ার পরে আর না আসতে চায় তাকে ভিসি হিসেবে আমরা চাই না। ভিসির বাড়িতে শিক্ষকদের প্রমোশন নিয়ে আলোচনা কেন হবে। কেন তারা ভিন্ন ভিন্ন দলের হতে হবে। ভিসি পদটি শুধু এক কথায়  বললে ম্যানেজমেন্ট ছাড়া  আহামরি আর কিছু বলে আমরা মনে করিনা।

একজন ভিসির প্রধান কাজ হলো বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞানগর্বে, শিক্ষা-গবেষণা, সাহিত্য-সংস্কৃতি,আইন-কানুন,প্রশাসন,প্রতিযোগি-তা,ইত্যাদি কাজ গুলোকে বেশি ফোকাস করা।বিশ্ববিদ্যালয় যদি আন্তর্জাতিক ভাবে প্রতিযোগী না হতে পারে তাহলে আমরা এমনেই পিছিয়ে যাবো।সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া অত্যাবশ্যক।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর অধঃপতন হয়েছে।এই পিছিয়ে পড়া বিশ্ববিদ্যালয়কে শক্ত হাতে সামনে নিতে হলে  একজন ভালো  ভিসির প্রয়োজন। প্রত্যেক জিনিসের একটা কেন্দ্র বিন্দু  থাকে বা অভিভাবক আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত আমরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এখন ভিসি শূন্য রয়েছে।

একজন আদর্শ,  নৈতিক, উচ্চতর গবেষক, সৎ মানুষকে এমন পদে আমরা দেখতে চাই। সে যে কোনো ধর্ম, বর্ণ, জাত- বিজাত এবং মতাদর্শের হতে পারে।

এই পদে এসে সিংহাসনের মত বসে থাকতে হবে না। এটি কোনো সিংহাসন নয়। শুধু একটি সম্মানের এবং ম্যানেজমেন্টের পদ। কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চলবে, কি কি কাজে অবদান রাখবে এগুলো হলো ভিসির আসল কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো হবে এমন কাজ করবে এটাই আমরা চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে যদি  তার মেয়াদের পূর্বে পালিয়ে যেতে হয় তাহলে তিনি এই পদের জন্য যোগ্য নয়।শুধু শিক্ষিত হলে চলবে না, নৈতিকতাও থাকা জরুরি।  এই সকল যোগ্যতার বলে যেকোনো জায়গা থেকে ভিসি নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের  আমুল পরিবর্তনের জন্য এমন ভিসি প্রয়োজন আমাদের।বিশ্বিবদ্যালয়ের প্রশাসনকে তাদের সকল কাজের জন্য জবাব দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে ভিসিকে তার পদে থাকতে হবে। কোথায় কেমন গবেষণা হচ্ছে, কোথায় কত ব্যয় হচ্ছে বা কি করলে ভালো ব্যয়ের মধ্যে উন্নত কাজ করা যাবে।এসব দিক বিবেচনা করতে হবে।

আমাদের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যেন এমন না দেখতে হয় যে,  ভিসি স্যার অনেক গুলো বাড়ি – গাড়ির মালিক। আহমদ ছফা তার বিখ্যাত উপন্যাসে লিখেছেন, “সতির ভাগ্যে পতির জয় হয়েছে”। এখানে তিনি বুঝাতে চাচ্ছেন  ভিসি যদি নিজেও না জানে তিনি  একজন ভিসি, তাহলে কেমন কেমন লাগে। এবং ভিসির পদের জন্য যদি ভিসির পতির ভাগ্যের প্রয়োজন হয় তাহলেও তিনি ভিসি হতে পারবেন না। ভিসিকে দেখতে হবে যেন, ফুটন্ত গোলাপের মত তাজা টগবগে তরুণেরা শিক্ষক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার  পরে হনন কারখানার ধারে কাছে বাস করতে করতে নিজেরাই বুঝাতে পারেন না কখন যে তারা হনন কারখানার কারিগরদের ইয়ার দোস্তে পরিণত হয়েছেন, এমন যেন না হয় ।একজন তরুণ শিক্ষককে কোন ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষকের রদ্দি মার্কা কাজটি পেতেও জুতোর সুকতলা ক্ষয় করে যেন না হয় তাও দেখতে হবে ভিসিকে।

পৃথিবীতে নিরীহ মানুষের সংখ্যাই অধিক। এমনকি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও আছে এমন মানুষ। তারা যেন আরো নিরীহ না হয়, এটাও ভাবতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যদি বিদেশ থেকে প্রাতঃভ্রমণ করার পর শূন্য হাতে  বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে তাহলে এটারও জবাব দিতে হবে। উপাচার্যের সিংহাসনে আরোহণের ব্যাপারটি সদ্য স্বাধীনদেশের সবচাইতে বড় মজার কান্ড যেন না হয়। ভিসির পদ নিয়ে আন্ডাপাড়া মুরগির মত চিৎকার করতে হবে কেন। ভিসির বাড়িতে  বিশ্ববিদ্যালয়ের হলুদ, ডোরাকাটা, বেগুনি দলের নির্বাচন নিয়ে তর্ক জুড়ে দেয় বা কার প্রমোশন হবে কার হবে না এমন   আলোচনা করে তাহলে ডিসির পদ বেহাত হবে। আমরা দেখেছি সাবেক সরকারের আমলে একটি র্নিদিষ্ট দলের শাসন চলেছিলো, এখন যেন আরেকটি দলের শাসন না হয় সেটাও সুনির্দিষ্ট করতে হবে। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় দাবি।

লেখক পরিচিতিঃ শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

- Advertisement -
Exit mobile version