আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা অর্জনে আমাদের করণীয়

মো. আজহারুল ইসলাম ভুঞা

বর্তমান শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষায় রূপদান করার যে মহতী উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেছে তা খুবই প্রশংসনীয়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা সমন্বিতভাবে অর্জিত হলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগামী প্রজন্ম যোগ্য হিসেবে গড়ে উঠবে। সেজন্য নতুন আঙ্গিকে বাস্তবমুখী শিক্ষার অফুরন্ত সম্ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামে।

বর্তমান সরকার শিক্ষাকে ঢেলে সাজানোর জন্য ইতোমধ্যেই অনেক পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন। যুগোপযোগী, গবেষণাধর্মী ও আন্তর্জাতিক মানের এই কারিকুলাম শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত শক্তির মেধার বিকাশ সাধন করে তাকে শারীরিক, মানসিক, আত্মিক ও বুদ্ধিভিত্তিক শিক্ষার উন্নয়ন ঘটিয়ে গতানুগতিক বইয়ের বোঝা ও পরীক্ষার চাপ অনেকটাই নিরসন করবে। তবে চলমান শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে সরকারের পাশাপাশি এই নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। আমরা সবাই চাই শিক্ষা হোক আন্তর্জাতিক মানের। সেজন্য সরকার, জনগণ ও বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তাদের সমন্বয় দরকার। তাছাড়া যেকোনো শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। সেজন্য শিক্ষাক্রম  বাস্তবায়নে আমার কিছু ব্যক্তিগত মতামত ও করণীয় উল্লেখ করেছি।

প্রয়োজনীয় করণীয় সমূহ হলো:

১. কোচিং ও প্রাইভেট বাণিজ্যের মূলোৎপাটন (কোচিং বাণিজ্য অনুসরণ-২০১২)

২. কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা ব্যবস্থা হ্রাসকরণ।

৩. সমকালীন প্রেক্ষাপট এর নিরিখে শিক্ষার্থীর বয়স, মেধা, বুদ্ধি, চাহিদা ও পারঙ্গমতা অনুযায়ী কারিকুলাম সাজানো হয়েছে কি না তা বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের দ্বারা যাচাই-বাছাই করণ।

৪. নতুন কারিকুলামে মনোবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন আছে কি না তা বিশেষজ্ঞদের দ্বারা মনিটরিং করণ।

৫. প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় শিক্ষার সবল ও দুর্বল দিক চিহ্নিত করার জন্য কর্মশালার আয়োজন করা ও পরে নিরাময়মূলক ব্যবস্থা করণ।

৬. ভৌত অবকাঠামোগত পরিবর্তন ঘটিয়ে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি নিশ্চিতকরণ।

৭. সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করণ। উল্লেখ্য, যে কোনোক্রমেই প্রশিক্ষণ বিহীন শিক্ষক শিক্ষকতা পেশায় নিয়োগ না দেওয়া।

৮. শিক্ষক প্রশিক্ষণ দুই বছর হওয়া বাঞ্ছনীয়। এক বছর থিওরিটিক্যাল এবং এক বছর হবে ইন্টার্নি বা প্র্যাক্টিক্যাল। তাতে সরাসরি বিভিন্ন স্কুলে পাঠ দান করে যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জন করে শিক্ষকতা পেশায় আসবে।

৯. কোনোক্রমেই শিক্ষকতা পেশাদারি ব্যক্তির অন্য পেশায় অন্তর্ভুক্ত না হওয়া।

১০. পেশাগত পারদর্শিতা অর্জনের জন্য শিক্ষকদের মান উন্নত করণের লক্ষ্যে বিষয় ভিত্তিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করণ। প্রয়োজনে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭০ বা ৮০ নম্বর পেলে তাকে ইনসেনটিভ দেওয়ার ব্যবস্থা করণ।

১১. নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন করতে হলে শিক্ষক নিয়োগ ডাবল করতে হবে।

১২. শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১: ৩০এ উন্নীতকরণ।

১৩. বছরে দুইটি ত্রৈমাসিক মূল্যায়ন থাকা দরকার। সামষ্টিক ষান্মাসিক মূল্যায়নের তিন মাস পূর্বে ১টি যা বিদ্যালয় ২০/৩০ নম্বরের একটি পরীক্ষা নিয়ে সেই নম্বরটি একটি বা দুইটি P I এ অন্তর্ভুক্তকরণ।

১৪. গ্রন্থাগার উন্নয়ন করে প্রত্যেক শিক্ষার্থী মাসে ১০ ঘণ্টা বা ২০ ঘণ্টা লাইব্রেরি ওয়ার্ক লিপিবদ্ধ করে তা P I এ সংযুক্তিকরণ।

১৫. শিক্ষকদের গবেষণাধর্মী মনোভাব তৈরির ব্যবস্থা করণ এবং শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ।

১৬. প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য অন্তত ছয়মাস বা এক বছর পরপর মেডিকেল চেকআপের ব্যবস্থা করন।

১৭. অবশ্যই বিষয় বিশেষজ্ঞদের দ্বারা শিক্ষকদের কারিকুলাম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করণ।

পরিশেষে সময়ের সাথে যুগের চাহিদার সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে বর্তমান প্রজন্ম যেন কর্মহীন হয়ে না পড়ে সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে কারিকুলামের বাস্তবায়নই হবে উন্নত বাংলাদেশের একমাত্র হাতিয়ার।

বর্তমানে যে শিক্ষা কারিকুলাম নেওয়া হয়েছে তা আন্তর্জাতিক মানের। এখন প্রয়োজন আন্তর্জাতিক মানের ভবন। লাগবে আন্তর্জাতিক মানের মাঠ ও শিক্ষা উপকরণ। রাখতে হবে শারীরিক কসরতের ব্যবস্থাও। তদারকি ও পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। বাড়াতে হবে শিক্ষা বাজেটও। অন্যথায় দুঃসাধ্য হয়ে উঠবে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা অর্জন।

লেখক: প্রধান শিক্ষক, পীরযাত্রাপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বুড়িচং কুমিল্লা।

- Advertisement -

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version