বই। দুই অক্ষরের এই শব্দটির সাথে আমরা ছোটবেলা থেকেই পরিচিত হই। একাডেমিক একঘেয়ে বইয়ের আড়ালে ঠাকুর মার ঝুলি, গোপাল ভাঁড়, তিন গোয়েন্দা, ফেলুদা, হ্যারি পটার পড়ার আবছা স্মৃতি আমাদের প্রায় সবারই শৈশবের-কৈশরের সাথে জড়িয়ে আছে। বই আমাদের কল্পনার রাজ্য বিস্তৃত করে ও আমাদের সৃজনশীল করে গড়ে তোলে। শুধু বিনোদনের জন্যই নয়, বই আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, শিল্প ও সাহিত্যের পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে সাহায্য করে। যারা বই ভালোবাসে ফেব্রুয়ারি তাদের জন্য এক উৎসবের মাস। শুধু বইপ্রেমীদের জন্য নয়, ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির ইতিহাসে গৌরবময় ও ঐতিহ্যপূর্ণ একটি মাস।

১৯৫২ সালের এই মাসেই সালাম,জব্বার, বরকতসহ আরও হাজারো শহিদের প্রাণের বিনিময়ে আমাদের মাতৃভাষা ভাষা বাংলাকে আমরা অর্জন করেছিলাম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে। তবে অমর একুশে বইমেলার গোড়াপত্তন হয় স্বাধীন বাংলাদেশে। বায়ান্নর ভাষা শহিদদের স্মরণে ১৯৭২ সাল হতে এই মেলা বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে পালন করা হয়। এছাড়া পুরো মাস জুড়েই গ্রাম, মফস্বল ও শহরগুলোতে ছোট-বড় পরিসরে আয়োজন করা হয় অনেক বইমেলা। বর্তমানে জাঁকজমকতার সাথে প্রত্যেক বছর এই উৎসব পালিত হয়।

তবে কুমিল্লার শালবনবিহার ঘেঁষা লাল মাটির ক্যাম্পাসখ্যাত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বছর প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয়েছে একুশে বইমেলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের আয়োজনে আল রাফি লাইব্রেরির সৌজন্যে ছোট বড় মোট ১১ টি স্টলের সমন্বয়ে তিনদিনব্যাপী আয়োজিত এই বইমেলা ঘিরে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস দেখা যায় লক্ষ্য করার মতো। মেলায় বাংলা সাহিত্যের গল্প, কবিতা, উপন্যাস, শিশুতোষ গ্রন্থ এবং ইসলামিক বইয়ের পাশাপাশি আরও ছিল ইংরেজি সাহিত্যের বিভিন্ন বই। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র, জীবনানন্দ, বিভূতিভূষণ, হুমায়ূন আহমেদসহ আরও অনেক নবীন কবি-সাহিত্যিকের গল্প-উপন্যাস বই কিনতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। বইয়ের পাশাপাশি মেলায় আরও ছিল স্টেশনারি ও ফুড স্টল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে এই মেলা হচ্ছে। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেলায় আসছে, বই কিনছে দেখে খুব ভালো লাগছে। আমি মনে করি এই একুশে বইমেলা এর মতো মহান উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান পিঁপাসাকে ত্বরান্বিত ও সমৃদ্ধ করবে বলে মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী তানিয়া আক্তার।

বইমেলা নিয়ে অনুভূতি জানাতে গিয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আশশিফা আক্তার বলেন, বন্ধু বান্ধব সবাই একসাথে বইমেলায় বই কিনতে পেরে অনেক আনন্দ লাগছে। বাংলা একাডেমির বই মেলায় এবার যেতে পারিনি দেখে মন খারাপ ছিল কিন্তু নিজের ক্যাম্পাসেই বইমেলার আয়োজন হচ্ছে দেখে খুব ভালো লাগছে। আশা করি সামনের বছর গুলোয় আরও বৃহৎ পরিসরে একুশে বইমেলা উদ্‌যাপিত হবে কুবি ক্যাম্পাসে।

 

আমরা যা আশা করেছিলাম সবার কাছ থেকে তারচেয়েও বেশি সাড়া পেয়েছি। বই, স্টেশনারি সব মিলিয়ে বিক্রি অনেক ভালো হয়েছে। সবার আগ্রহ দেখে মনে হয়েছে এই ধরনের মেলা ক্যাম্পাসে আরও বেশি আয়োজন হোক তারা চায়। তাই ভবিষ্যতে এর চাইতেও বড় পরিসরে এই মেলা আমরা আয়োজন করতে পারবো আশা করি বলে মন্তব্য করেন লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম।

বর্তমান ডিজিটালাইজেশনের যুগে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিমুখতার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে তীব্র ভাবে। স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, গ্যাজেটের বিশ্বে কাগজের বই পড়ুয়াদের এখন খুব একটা আর দেখা যায় না। অথচ বই আমাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু। বইয়ের সাথে এই বন্ধুত্ব অটল রাখতে বইমেলার কোনো জুড়ি নেই। তাই শিক্ষার্থীদের বইমুখী করতে আরও বেশি বই মেলার আয়োজন করতে হবে।

 

লেখক, ফারিহা জাহান, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here