যে কৌশলে কোটিপতি বিল গেটস

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, তাঁর এই কৌশল/দক্ষতাকে যে কোন বিষয়ে সফলতার চাবিকাঠি।

অনুবাদক: সাইয়্যেদ নুরসী

আশাবাদ ও নৈরাশ্যবাদ অত্যন্ত জটিল দুটি প্রত্যয়। এ দুটি প্রত্যয়ের সমন্বয় করা অত্যন্ত কঠিন। হতাশা আমাদের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে রাখে। তা মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতির তাগিদ দেয়। তাই টিকে থাকার জন্য হতাশার গুরুত্ব অনন্য। আবার সফলতার জন্য আশাবাদী হওয়াও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

কোন স্পষ্ট প্রমাণ না থাকার পরও কোন কিছু থেকে ভালো কিছু লাভ করার আশা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কোনো কিছুই নিশ্চিত না। তাই “আশা” রাখলে অনিশ্চিত বিষয় থেকেও কিছু পাওয়া যায়। এই বিশ্বাস থেকেই দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করা যায়।

আশাবাদ ও নৈরাশ্যবাদ দুটি বিপরীতমুখী বিষয়। সাধারণত মনে করা হয় এই দুটি জিনিস একসাথে যায় না। তাই, হয় আশাবাদী হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে, নয়তো নিরাশায় হাল ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু অসাধারণ ব্যক্তিরা এই দুটির মাঝে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেন এবং এই প্রক্রিয়ায় কিছু অর্জন করে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। এই সকল মানুষ সফলদের অন্তর্ভুক্ত।

এই ভারসাম্য রক্ষার দক্ষতা কতটা কার্যকর তা বোঝার জন্য বড় উদাহরণ বিল গেটস এর কর্মজীবন। তিনি যখন মাইক্রসফট নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন কিন্তু ১২ মাসে একটি পয়সাও লাভ হয়নি। ঐ সময়ে কোম্পানি বাঁচিয়ে রাখতেই তিনি তার সব পুঁজি ব্যয় করেছেন।

১৯৯৫ সালে শার্লি রোজ বিল গেটসকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি কেন বেশি বেশি নগদ অর্থ হাতে রাখতেন? জবাবে বিল গেটস জানান, “প্রযুক্তিখাতে দ্রুত পরিবর্তন আসছে, তাই পরবর্তী বছরে ব্যবসা নিশ্চিত। মাইক্রোসফটও এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই আছে”।

২০০৭ সালে তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করার দিকে আমি খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কারণ আমার জন্য যারা কাজ করছিলেন, তারা আমার চেয়ে বয়সে বড় এবং তাদের সন্তান ছিল। তাই ভাবতাম বেতন না পেলে আমাদের কি হবে? আমি কি তাদের পাওনা মেটাতে সক্ষম হবো?”

এখানেই আশাবাদ ও বিশ্বাসের সাথে হতাশার গভীর মিশ্রন হয়েছে। বিল গেটস এর কাছ থেকে যে শিক্ষাটা নেয়া যায় তা হল- আপনাকে পরিমিত হতাশার মাঝে স্বল্প সময় টিকে থাকার লড়াই করতে হবে। এর মাধ্যমে দীর্ঘ সময়ের জন্য আপনি আশাবাদী হতে পারেন। অর্থাৎ স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারবেন।

একজন সত্যিকারের আশাবাদী হয়ে উঠতে আপনার কেন চেষ্টা করা উচিত?

একটা বিষয় জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ- আর তা হল হতাশা ও নৈরাশ্য একই স্থানে বিদ্যমান। অর্থাৎ যেখানে নিরাশা বা শঙ্কা আছে সেখানেই আশা বা স্বপ্ন রয়েছে।

কিছু মানুষ শুধু আশাবাদী। শঙ্কা বা ঝুঁকি গায়ে মাখে না। তারা মনে করে অসাধারণ সবকিছু সবসময় অসাধারণই হবে। তারা কোনো কিছু নেতিবাচকভাবে দেখাকে চারিত্রিক ত্রুটি মনে করে। এই ধারণা ইগো বা অহংবোধের কারণে তাদের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে থাকে। তারা নিজের ওপর অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী। এ কারণে কোনো কিছুর ক্ষতির সম্ভাবনা আন্দাজ করতে পারে না। ফলে হঠাৎ মহাবিপদে পড়ে।

আবার যারা শুধু নৈরাশ্যবাদী তারা মনে করে খারাপ সবকিছু সবসময় খারাপই হবে এবং সবকিছু ইতিবাচক মনে করাকে চারিত্রিক দুর্বলতা মনে করে। এই বিষয়টাও ইগো বা অহংবোধের কারণে হয়। এই ধরনের ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস অত্যন্ত কম। তারা মনে করে সবকিছু থেকেই ভালো কিছু আশা করা যায় না ঝুঁকি না নিয়ে কম্ফোর্ট জনে থাকতে নিরাপদ বোধ করে। এই ধরনের মানুষ আশাবাদীদের ঠিক উলটো এবং তাদের চিন্তা-চেতনা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে।

এই দুটি বিষয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বনের মাঝেই রয়েছে সফলতার চাবিকাঠি। যাকে বলা যায় সত্যিকারে আশাবাদী। এই তত্ত্ব অবলম্বনকারীরা মনে করে ইতিহাস হল সমস্যা, হতাশা ও বাধার ধারাবাহিক সমন্বয়। কিন্তু তারপরও তারা আশায় বুক বাঁধে কারণ তারা জানে কোনো বাধা চূড়ান্ত অর্জনের পথ আটকাতে পারে না।

আপাতত দৃষ্টিতে তাদের ভণ্ড ও পল্টিবাজ মনে হতে পারে, তবে তারাই ঝুঁকি নিতে ও তা জয় করতে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকে।

সুতরাং আপনি যে কোন কাজই করেন না কেন তাতে অর্থায়ন, ক্যারিয়ার ভাবনা ও সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্য হতে পারে স্বল্প মেয়াদি সমস্যার বিরুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই। আর এই কৌশলের উদ্দেশ্য হবে দীর্ঘ মেয়াদি প্রবৃদ্ধি বা উন্নতি লাভ করা।

এখানে দুটি কথা মনে রাখতে হবে

এক, হতাশাবাদী হয়ে সঞ্চয় করো, বিনিয়োগ করো আশাবাদীর মত।

দুই, হতাশাবাদীর মত পরিকল্পনা করো, স্বপ্ন দেখো আশাবাদীর মত।

এই বিপরীতধর্মী বিষয় দুটির সমন্বয় সাধন করতে হয় অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। সহজাতভাবেই আমরা ধরে নেই আমাদের হয় আশাবাদী হতে হবে নতুবা নৈরাশ্যবাদী। ফলে এই বিষয় দুটিকে একই সময় ও স্থানে চিন্তা করারই কঠিন। কিন্তু প্রায় সব সফল ব্যক্তিদের চেষ্টার মাঝেই এই সমন্বয়ের বিষয়টা বিদ্যমান।

মূল লেখক: মর্গান হাইসেল।

- Advertisement -

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version