সাবের হোসেন সৌরভ

আমাদের সমাজে প্রচলিত একটা কথা রয়েছে ‘man cann’t live alone’ অর্থাৎ মানুষ একাকী বসবাস করতে পারে না। বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল বলেছেন, ‘যে মানুষ সমাজে বাস করে না, সে হয়ত ঈশ্বর নয়তো পশু’। সুতরাং বলা যায় আমাদের জীবনে বন্ধু বা সাথী প্রয়োজন। এখন প্রশ্ন হলো আপনি কি ধরনের বন্ধু তৈরি করবেন বা রাখবেন। অথবা ভালো বন্ধু কেন প্রয়োজন? এক্ষেত্রে হজরত মুহাম্মদ (স.)- এর একটি দেখানো পথ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘তোমরা বন্ধু নির্বাচনে সাবধান থাকবে, কারণ ব্যক্তি তার বন্ধুর চরিত্রে চরিত্রবান হয়ে থাকে’। আপনার জীবনের অধিকাংশ সফলতা নির্ভর করে, আপনি কেমন সমাজ বা কেমন মানুষের সাথে চলাফেরা করেন।

ছাত্রজীবন থেকেই যদি আমরা ভালো বন্ধু গড়তে পারি, তাহলে আমাদের জীবনের অনেক জটিল বিষয় সহজ হয়ে যায়। পৃথিবীর বিখ্যাত মানুষরা তাদের জীবনে ভালো বন্ধু পেয়েছিল। উদাহরণ হিসেবে আমরা তিন গ্রিক দার্শনিক, সক্রেটিস, প্লেটো এবং এরিস্টটল কথা বলতে পারি। সক্রেটিসের খুব কাছের ছাত্র ছিল প্লেটো এবং প্লেটোর খুব কাছের ছাত্র ছিল এরিস্টটল। তাদের মধ্যে যে শুধু শিক্ষা নিয়েই ভালো সম্পর্ক ছিল তা নয়, তারা একে অপরের ভালো সাথীও ছিল বটে।

একজন ছাত্র জীবনের প্রথম থেকেই ভালো এবং সৎ বন্ধুর সাথে সময় কাটানো প্রয়োজন। এতে তার জীবনের লক্ষ্য ঠিক পথে পরিচালিত হবে। কারণ, সে তার বন্ধুর করা ভালো কাজগুলো করতে চাইবে। এখন যদি তার বন্ধু অসৎ হয় তাহলে সেও একই কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। যদি আরো একটি উদাহরণ দেওয়া যায়, মাইকেল এইচ হার্ট এর বিখ্যাত বই, ১০০ মনীষীর জীবনীতে দেখা যায় তিনি সর্বপ্রথম যার নাম দিয়েছেন তিনি হলেন হজরত মুহাম্মদ (স.)। যিনি ছিলেন সকল ভালো গুণের অধিকারী। তিনি শুধু নিজেই সৎ মানুষ ছিলেন না, তার বন্ধুরাও তার মত সৎ ছিলেন। তার বন্ধু বা সাথীদের বলা হয় সাহাবা, যারা শুধু হজরত মুহাম্মদ (স.) সাথে থেকেই পরবর্তীতে বিখ্যাত হয়েছেন।

আমাদের স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে ভালো ও সৎ বন্ধু থাকলে আপনাকে জীবনের ভুলগুলো ধরিয়ে দিবে শুধু তা নয়, সে আপনাকে সৎ পথে পরিচালিত করার জন্য চাইবে। আর এটাই তার আদর্শ। আমাদের জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে ভালো সাথীর প্রয়োজন।

প্রয়োজনীয়তাবাদ বলে একটি নীতি রয়েছে, যায় মূল কথা হলো আমাদের জীবনে যা প্রয়োজন তার জন্য হ্যাঁ বলি, আর যা প্রয়োজন নই তার না বলি। এখন কোন বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সেটা আমাদের বুঝতে হবে আগে। দুর্ভাগ্য আর সুভাগ্য যেটাই বলি, এখন আমরা যে সমাজ বা দেশে বসবাস করি সেখানে ভালো মানুষের অনেক অভাব। আর গুটিকয়েকজন আছেন যারা সমাজে অপমান জনকভাবে বেঁচে আছেন। কারণ, ভালো মানুষদের এখন মূল্য দেওয়া হয় না।

একটা কথা রয়েছে, যে সমাজে শিক্ষিত মানুষের মূল্য নেই ঐ সমাজে শিক্ষিত মানুষের জন্ম হয় না। দেখা গেছে, আপনি যদি ভালো মানুষের সাথে চলাফেরা করেন, তাহলেও সমাজের কিছু লোক আছে যারা এটাকেও ভালো চোখে দেখবে না। এটাই এখন নীতি হয়ে উঠেছে। কারণ, তারা জানে না আপনি যার সাথে চলাফেরা করছেন সে কেমন। যদি আপনি ঐ ভালো মানুষের সাথে থেকে জীবনে সফল হয়ে একদিন আপনার পরিবার আর সমাজকে দেখান, তাহলে তারা বুঝবে আপনি কেমন মানুষের সাথে চলাফেরা করতেন।

ভালো বন্ধু শুধু সমবয়সী হবে তা ঠিক না। একজন শিক্ষক, বড় ভাই, বড় বোনও ভালো বন্ধু হতে পারে। ভারতের মিসাইল ম্যান নামে খ্যাত ড. এপিজে আব্দুল কালাম বলেছেন, ‘অসৎ মানুষের সাথে থাকার চেয়ে একা থাকা অনেক উত্তম’। আপনি ভালো মানুষ না পেলে একা থাকুন। তথাপি খারাপ মানুষ থেকে দূরে থাকা ভালো।
জেমস হগা নামে এক ব্যক্তি বলেছেন, ‘যে বন্ধুহীন জীবনযাপন করে এবং যার মৃত্যুর সময় প্রিয়জন কাছে থাকে না তার মতো দুর্ভাগা কেউ নেই। সৎ বন্ধু প্রয়োজনে জন ওজেল বলেছেন, ‘আমি গর্বিত এই জন্য যে, আমার বন্ধুরা দরিদ্র হলেও সৎ’। অর্থাৎ তিনি সৎ বন্ধু পেয়ে অনেক ভালো ছিলেন জীবনে। সুতরাং জীবনে ভালো বন্ধুর প্রয়োজনীয়তা আমাদের অনেক অভাব মিটিয়ে দেয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়