মাসুম শাহরিয়ার:
মচমচে সিঙ্গারা সবারই প্রিয় খাবার। ত্রিকোণ বা পিরামিড আকৃতির এই খাবার সবার কাছেই ভীষণ লোভনীয়। একটু খিদে মেটাতে দুপুরের আগে বা বিকেলে সিঙ্গারা অসম্ভব এক তৃপ্তি আনে। কিন্তু বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এই কালে মাত্র ‘এক টাকা’ দামের একটা সিঙ্গারা পাওয়াতো বিস্ময়করই বটে। এমনই এক বিস্ময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরবর্তী ত্রিবেণী বাজারে। এক বন্ধুর সাথে গিয়েছিলাম সেই ‘এক টাকার’ সিঙ্গারা খেতে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ত্রিবেণী বাজারের দূরত্ব প্রায় আড়াই কিলোমিটার। ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার ১নং ত্রিবেণী ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত বাজারটি। ভ্যানে করে গেলে ১০ টাকা গাড়ি ভাড়া। হঠাৎ একদিন বন্ধু রাসেলকে নিয়ে চলে গেলাম সিঙ্গারা খেতে। প্রায় ৩০টির মতো সিঙ্গারা খেতে পেরেছি আমরা।
এদিকে দাম এক টাকা হলেও হলেও সিঙারার স্বাদে কমতি নেই। আটা, আলু ও বিভিন্ন মশলা দিয়ে এ সিঙারা বানানো হয়। ত্রিবেণী বাজারের ৩টি দোকানে ভাজা হয় এই সিঙ্গারা। প্রতিদিনই দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন সিঙ্গারা খেতে। একটু দেরি হলেই সব শেষ হয়ে যায় সিঙারা খাওয়া আর হয় না।
সিঙ্গারা খেতে থেকে কথা হয় এক টাকায় সিঙ্গারা বিক্রেতা মোশাররফ হোসেনের সাথে। তিনি জানান, দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে এ বাজারে সিঙারা বিক্রি করেন তিনি। পূর্বে ১ টাকায় ২টি সিঙারা বিক্রি করতেন তিনি। বছর ছয়েক আগে থেকে ১ টাকায় ১টি সিঙারা বিক্রি করছেন তিনি। সিঙারা বিক্রির পাশাপাশি চাষাবাদও করেন। এভাবে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়েকে মানুষ করেছেন৷ মেয়েকে স্নাতকোত্তর পাশ করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেকে বেশি দূর পড়ালেখা করাতে পারেনি তিনি। পরে বাজারে একটু মুদির দোকান করে দিয়েছেন।
প্রতিদিন বেলা ১২ টা থেকে শুরু হয় সিঙ্গারা ভাজা। প্রায় ২ হাজার পিচ সিঙ্গারা বিক্রি করেন তিনি। বিকেল ৫ টা বাজতে বাজতে সিঙারা সব শেষ হয়ে যায়। বিকেল ৪টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভীড় জমে এখানে। এছাড়াও বিভিন্ন দূরদূরান্ত হতে মানুষ এসে কেউ ৫০টা, ১০০ টা করে নিয়ে যান।
দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির বাজার সব মিলিয়ে সিঙ্গারায় লাভ কেমন হয় কেমন জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন জানান, দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ থাকে তার। বাড়ির লোকজন সিঙারা প্রস্তুত করে দেয় বিধায় বাড়তি খরচ হয় না। এজন্য টিকে আছেন তারা৷ পূর্বে লাভ হত বেশি এখন কম হয়। গ্রামের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এক টাকায় সিঙারা বিক্রি করে যেতে চান জীবনভর।
কথা হয় সিঙারা কিনতে আসা একজন জানান, আমার বাড়ি পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া জেলায়। ১০০ পিচ সিঙারা কিনছেন তিনি। তার পরিবারের সবাই এই ১ টাকার সিঙারা খুব পছন্দ করেন। এজন্য এদিকে আসলে সিঙারা নিতে ভুলেন না তিনি।
ফেরার সময় আমরাও ২০টা সিঙারা নিয়ে ফিরে আসলাম…।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।