গুণগত শিক্ষার জন্য প্রয়োজন মেধাবী, দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক

মানুষ সারাজীবনই শিক্ষা গ্রহণ করে। তবে দুনিয়ায় বেঁচে থাকার জন্য যে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয় সে শিক্ষার কথা মনে পড়লে কাজী কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ কবিতার কথা। সেইদিন দিল্লির বাদশা শিক্ষককে উদ্দেশ্যে করে বলেছিলেন, ”শুনুন জনাব তবে, পুত্র আমার আপনার কাছে সৌজন্য কি কিছু শিখিয়াছে? বরং শিখেছে বেয়াদবি আর গুরুজনে অবহেলা।” শিক্ষকদের সম্মান জানিয়ে ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এদিন বিশ্বব্যাপী শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করা হয়। বাংলাদেশে এবারেই প্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘শিক্ষক দিবস’ পালিত হতে যাচ্ছে। শিক্ষকতার বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের সহকারী অধ্যাপক আমেনা বেগম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবু শামা।

বিডিফিচার: আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবসে আপনাকে শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা। কেমন আছেন?

আমেনা বেগম: ধন্যবাদ, আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?

 

বিডিফিচার: আমিও ভালো আছি। আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

আমেনা বেগম: শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আর শিক্ষার মেরুদণ্ড হলো শিক্ষক সমাজ।শিক্ষকরা স্বমহিমায় বিশুদ্ধ জ্ঞান, মানবিক আর নৈতিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত এবং দীক্ষিত করে গড়ে তুলেন দেশের যোগ্য নাগরিক। শিক্ষকদের সেই অবদানকে স্মরণ করার জন্য পালন করা হয় আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস। দিবসটিকে তথাকথিত নিয়মে পালন না করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের নিয়ে সমাবেশ করা যেতে পারে। দেশ, জাতির সেবায় নিয়োজিত শিক্ষকদের নিয়ে শিক্ষার রূপরেখা প্রণয়ন বিষয়ক সেমিনার এবং তথ্য- প্রযুক্তি নির্ভর ট্রেইনিং আয়োজন করা যেতে পারে।

বিডিফিচার: শিক্ষকদের মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয়—আমাদের শিক্ষকরা সেই বহুল কাঙ্ক্ষিত আলোকিত মানুষ কতটা তৈরি করতে পারছেন?

আমেনা বেগম: শিক্ষকতা পেশা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন পেশাগুলির মধ্যে একটি। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় অনেক সময় শিক্ষকরা শত চেষ্টা করলেও সেই বহুল আলোকিত মানুষ তৈরি করতে পারছেন না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক এবং প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলের অভাব, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা সরঞ্জামের অপ্রতুলতা, অভিভাবকের উদাসীনতা ইত্যাদি অন্যতম কারণ। এছাড়াও দরিদ্রতা, সামাজিক প্রভাব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চার অভাব, রাজনৈতিক অস্থিরতা, শিক্ষকদের হেয় ও লাঞ্ছিত করা, শিক্ষা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী বান্ধব অবকাঠামোগত অনুন্নয়ন কারণে কাঙ্ক্ষিত আলোকিত মানুষ গড়ে তুলতে পারছে না।

বিডিফিচার: শিক্ষক জীবনের প্রত্যাশা-প্রাপ্তি মেলবন্ধন আসলে কতদূর?

আমেনা বেগম: একজন শিক্ষকের শিক্ষকতা জীবনের প্রত্যাশা অনেক এবং সেই সাথে প্রাপ্তির খাতাটাও ভারী দেখতে চান। তবে তার জন্য করতে হয় নিরলস, নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা, হতে হয় সৎ, উদ্যমী, আদর্শবান। তাই প্রত্যাশা-প্রাপ্তি নানাবিধ কারণে অনেক সময় সমপরিমাণ হয় না।

বিডিফিচার: শিক্ষক হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে আপনার স্বপ্ন কী, প্রাপ্তি কতখানি?

আমেনা বেগম: ব্যক্তিগত স্বপ্ন হলো প্রতিটি কর্মদিবসে শিক্ষার্থীদের এতোগুলো উৎসুক চোখের মধ্যে নিজেকে উজাড় করে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশ জাতির উন্নয়নে কাজ করার মতো মেধা-মননে অনন্য তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। স্বপ্নের সাথে আমার প্রাপ্তিটাও কম নয়। ইতোমধ্যেই আমার শিক্ষার্থীরা দেশের সর্বক্ষেত্রে সম্মান, যোগ্যতা এবং মেধার স্বাক্ষর রেখে কাজ করছে। বিদেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।

বিডিফিচার: এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘The teachers we need for the education we want: The global imperative to reverse the teacher shortage’ অর্থাৎ, ‘কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা পেতে যেমন শিক্ষক চাই: শিক্ষক সংকট ঠেকাতে বৈশ্বিক উদ্যোগ।’ প্রতিপাদ্যটি কি সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক? আপনার মন্তব্য কী?

আমেনা বেগম: প্রতিপাদ্যটি সময়ের সঙ্গে খুব প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছি। গুণগত শিক্ষার জন্য প্রয়োজন মেধাবী, দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে মেধাবীরা এ পেশায় আসতে খুব একটা আগ্রহী নন। তার কারণ, অন্যান্য পেশার মতো এ পেশায় সামগ্রিক নিরাপত্তা এখনো আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। শিক্ষকরা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সুষ্ঠুভাবে জীবন জীবিকা নির্বাহ না করতে পারলে যাবতীয় বেতন- তা সুবিধা নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হলে শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত সাফল্য কখনই অর্জন সম্ভব নয়। তাছাড়া শিক্ষক সংকট দূরীকরণ, যথাসময়ে পদোন্নতি দেয়া , টাইম স্কেল জটিলতা নিরসন, আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক- কর্মচারীদের পাহাড়সম বৈষম্য দূরীকরণ, ঝুঁকি ভাতা প্রণয়ন,বিশেষ ঋণ সহায়তা, বিভিন্ন বীমা, বদলি ব্যবস্থার সমাধান না করতে পারলে ভবিষ্যতে আমরা ভালো শিক্ষক সংকটে পড়তে হবে।

বিডিফিচার: দেশের শিক্ষকরা বেতন-মর্যাদায় পিছিয়ে আছে বলে শোনা যায়-সেটা কতটুকু প্রাসঙ্গিক? এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?

আমেনা বেগম: বর্তমান সময়ের সঙ্গে জীবন- জীবিকা বিবেচনা করলে দেখা যায়, দেশের শিক্ষক সমাজ বেতন-মর্যাদায় পিছিয়ে আছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খরচ। সেই সাথে বাড়ছে না আয়। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্তরে প্রমোশন জটিলতা অনেক। প্রমোশন না হলে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজে গতিশীলতা কমে যাচ্ছে। ফলে শিক্ষিত সমাজের একটা বড় অংশ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। তবে বর্তমানে আশার বাণী হলো- এসব সমস্যার অনেকটাই সমাধান করা হচ্ছে এবং এতো বাঁধা বিঘ্ন থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকরা হাসিমুখে দেশ জাতির কল্যাণে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

বিডিফিচার: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আমেনা বেগম: আপনাকে ও বিডিফিচারকে ধন্যবাদ

- Advertisement -

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version