স্বপ্ন পূরণ হলো না কুবির সেরা গোলকিপারের

২০২৩ বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তঃবিভাগ ফুটবলের সেরা গোলকিপারের পুরস্কার পেয়েছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মিরহাম রেজা। তার গোলকিপার হয়ে উঠার পিছনের গল্প শুনেছে বিডিফিচার। গল্পটি তুলে ধরেছেন আবু শামা।

বিডিফিচার: অভিনন্দন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য।

মিরহাম: ধন্যবাদ, আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসা ছিল বলেই সম্ভব হয়েছে।

বিডিফিচার: আপনি এত ভালো গোলকিপার হওয়ার পিছনের গল্পটা যদি একটু বলতেন?

মিরহাম: আমি গ্রামেই বড় হয়েছি। গ্রামের খেলাতে খুব ভালোই গোলকিপিং করতাম। এতে আস্তে আস্তে আগ্রহটা বাড়তে থাকে। তাছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলের গোল কিপার আনিসুর রহমান জিকুর বাড়িও আমাদের গ্রামে। আমার একটা স্বপ্ন ছিল আমিও বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলবো কিন্তু বিধিবাম যথাযথ সাপোর্টের কারণে আমি বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারিনি। আমি এলাকা, উপজেলা, ও জেলাভিত্তিক ফুটবল খেলেছি।

বিডিফিচার: আপনার গোলকিপার হওয়ার পিছনে কার অবদান রয়েছে?

মিরহাম: আমার গোলকিপার হয়ে উঠার পিছনে একমাত্র অবদান আমার বড় ভাই মাস্টার হাবিবউল্লাহ। যিনি আমার পড়াশোনা এবং খেলাধুলার প্রতি খুব সতর্ক ছিলেন। এমনকি ভাইয়া আমাকে বিকেএসপিতে ভর্তি করানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলো। আর্থিক অবস্থা এবং লিংক আপের কারণে আমার স্বপ্নটা পূরণ হলো না।

বিডিফিচার: আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ার পরও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কীভাবে?

মিরহাম: আমার খেলার একমাত্র অনুপ্রেরণা হচ্ছে মানুষের ভালোবাসা। গ্রামের সবাই আমার গোলকিপিং খুব পছন্দ করতো। সবাই আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতো আমি ভবিষ্যতে অনেকদূর এগিয়ে যাবো। আমিও ভালো গোলকিপার হয়ে উঠার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। তাছাড়া আমার বড় ভাইয়ের আগ্রহ আরও তীব্র ছিল…। সবকিছু মিলিয়ে খেলার অনুপ্রেরণা একটু বেশি ছিল।

বিডিফিচার: ফুটবল খেলার জন্য পরিবার থেকে সাপোর্ট পেয়েছেন কী না?

মিরহাম: আমাদের পরিবারের অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। যার কারণে আমার আব্বু আমাকে ফুটবল থেকে দূরে রাখার জানা আব্বুর মুদির দোকান দেখাশোনা করতে হতো। পরবর্তীতে আমার ভাই মাস্টার হাবিবউল্লাহ আমাকে ফুটবল খেলতে অনেক সাপোর্ট দেন। আমাকে ফুটবল খেলায় মনোযোগ দিতে বলেন। সত্য কথা বলতে বাংলাদেশে গ্রাম, শহরে অনেক মেধাবী ফুটবলার আছে, যারা আমার মতো যথেষ্ট সাপোর্টের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে।

বিডিফিচার: খেলা নিয়ে স্বপ্ন আছে কী না?

মিরহাম: খেলা নিয়ে একসময় অনেক স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকেই গেলো। যাদের আর্থিক সমস্যা আছে তাদের স্বপ্ন দেখা বারণ। স্বপ্ন পূরণ করার জন্য স্বপ্ন দেখানোর মানুষ যেমন প্রয়োজন, তেমনি স্বপ্ন পূরণের যাবতীয় খরচ বহন করার ও মানুষ প্রয়োজন। তবে এখনো ফুটবলকে ভালোবাসি।

বিডিফিচার: ফুটবল নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মিরহাম: স্বপ্ন ছিল জাতীয় দলের হয়ে খেলবো তা পূর্ণ হলো না। এখনো সেই আশা মাটি দেই নাই। স্বপ্ন নতুন করে সাজিয়ে নিয়েছি। ভবিষ্যতে ফুটবল কোচ হওয়ার ইচ্ছে আছে।

বিডিফিচার: চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অনুভূতি কেমন?

মিরহাম: আসলে বিজয়ের অনুভূতি সহজে প্রকাশ করা যায় না। আমি বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টে ফাইনাল খেলায় সেরা গোলরক্ষক পুরস্কার পেয়েছি। এই অনুভূতিটা খুব আনন্দের এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার সেরা অর্জন হয়ে থাকবে। আর উপাচার্য স্যারের এমন আয়োজন আমাদেরকে উদ্যোমী করবে।

আমি আসলে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করতেছি কারণ আমি আমার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে রিপ্রেজেন্ট করতে পেরেছি। প্রথম থেকেই আমার আত্মবিশ্বাস ছিল যে আমরা চ্যাম্পিয়ন হবো আলহামদুলিল্লাহ হয়েছি। যখন আমরা ট্রাইবেকারে যায় আমাদের ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান সোহরাব উদ্দীন সৌরভ স্যার এবং মাহমুদুল হাসান খান স্যার আমাকে সব সময় বলতেন ‘মিরহাম, আমাদের প্লেয়াররা ৫টা পেনাল্টি শুট মিস করলে তুমি ৫টায় সেভ দিয়ে কামব্যাক করাবে।’ এই আত্মবিশ্বাসটা আসলে একজন গোলকিপারের কাছে খুব জরুরি। আলহামদুলিল্লাহ, এখন আমরা চ্যাম্পিয়ন।

বিডিফিচার: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

মিরহাম: আপনিও ভালো থাকবেন।

- Advertisement -

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version