অনুবাদক: সাইয়্যেদ নুরসী
অতিরিক্ত পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে গেছেন, অবিরাম ব্যস্ততায় থেকেও সুফল পাচ্ছেন না? জেনে নিন Essentialism বা প্রয়োজনীয়তাবাদের মূলমন্ত্র। হয়ে উঠুন Essentialist বা প্রয়োজনীয়তাবাদী। কীভাবে Choose, Discern & trade-offs formula ব্যবহার করে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবেন? সংক্ষেপে তুলে ধরা হল Greg McKeown এর বেস্ট সেলার বই “Essentialism: The Disciplined Pursuit of Less” থেকে।
Essentialism কি?
Essentialism ধারণার মূল কথা হল প্রয়োজনীয় বিষয় ছাড়া সবকিছু বাদ। প্রতিটি জিনিসের কতিপয় বৈশিষ্ট্য থাকে যা জিনিসগুলোর পরিচয় বহন করে। বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রকাশমান বা গোপন থাকতে পারে। বিজ্ঞান ও দর্শনের কাজ হল আবিষ্কার করা। একটি জিনিস গঠনের জন্য যা Essence বা প্রয়োজন তা জানা অত্যন্ত জরুরি। কেননা জিনিসটির অস্তিত্ব এর গঠন বৈশিষ্ট্যের মাঝে লুকিয়ে থাকে। এ সব বিষয় সম্পর্কে জনা ও প্রয়োগের মতবাদই প্রয়োজনীয়তাবাদ।
যারা Essentialism তত্ত্ব মেনে চলেন তাদের Essentialist বলা হয়। ধারণা করা হয় তারা বিশেষভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করে জীবনের নিয়ন্ত্রণ নাগালে রাখার চেষ্টা করে। কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে শ্রম দিলে তা অর্জন সহজ হয়। তাই যা করা আবশ্যক তা আগে জানতে হবে। বাকি সবকিছু বাদ দিতে হবে। এরপর জীবনের তাৎপর্য যেখানে লুকানো সেখানে সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। এতে শ্রমের কার্যকারিতা ও তার ফল সন্তোষজনক হবে।
বদ্ধমূল ধারণা পরিবর্তনে Essentialism বা প্রয়োজনীয়তাবাদী তিনটি বিষয় হৃদয়ে ধারণ করা আবশ্যক। যারা এই বিষয়গুলো মেনে চলে তাদের প্রকৃত Essentialist বলা যায়:
১. পছন্দ বা বাছাই করা:
আপনার সমনে অনেক সুযোগ আসবে। সুযোগ আসার ধারা আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। তবে আপনি কোনগুলো গ্রহণ করবেন আর কোনগুলো করবেন না তা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আপনার শক্তি সীমিত, তাই সব কাজে নিজেকে জড়িয়ে লাভ হবে না। নিজের প্রয়োজনীয় বিষয়ে শ্রম ও শক্তি ব্যয় করলে প্রত্যাশিত ফল পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এজন্য সবকিছুতে জড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা বহুমুখী কাজ আপনাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও অসহায় করে দেবে।
২. উপলব্ধি বা অনুধাবন করা:
আমরা সমাজে নানামুখী আকাঙ্ক্ষার মধ্যে বাস করি। বহুজনের ভিন্ন ভিন্ন পরামর্শে বিভ্রান্ত হয়ে যাই। তাই সবকিছু গুরুত্বের সাথে নেয়া যাবে না। অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় জ্ঞান-বুদ্ধির পাল্লায় মেপে নিতে হবে। কর্মের বাহিরের রূপ আর ভেতরের রূপ এক নাও হতে পরে। তাই যা করতে হবে তার চূড়ান্ত ফলাফল কি হবে তা অনুধাবন করে আগাতে হবে।
৩. তুলনামূলক বেশি উপযোগী বিষয়টি গ্রহণ করা:
আপনি অনেক কিছু করতে পারেন কিন্তু সবকিছু করতে পারবেন না। তাই সবকিছু করার মানসিকতা ত্যাগ করুন। আপনার হাতে থাকা বিষয়সমূহের মধ্যে যেগুলো তুলনামূলক বেশি উপযোগী সেগুলো বাছাই করুন। এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রয়োজনীয় ছোট কিছু বিষয় ছেড়ে দিতে হবে। তবে, অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপনার শ্রম ও শক্তি পুরোপুরি নিয়োগের মাধ্যমে আশানুরূপ ফল লাভ করতে পারবেন।
আরো যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন:
১. না বলার অভ্যাস করুন:
প্রয়োজনীয়তাবাদ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্য সীমাবদ্ধ থাকা ও তুচ্ছ বিষয়সমূহ এড়িয়ে যাওয়ার উপর গুরুত্ব দেয়। প্রয়োজনীয়তাবাদে বিশ্বাসীগণ মনে করে বেছে বেছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সময় ও শক্তি নিয়োগ করা উচিত। এতে অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে নিজেকে ভারমুক্ত রাখা যায়। অপ্রয়োজনীয় বিষয়েকে না বলার মাধ্যমে বাস্তবে প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহে গুরুত্ব দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
২. মনোযোগ দৃঢ় করা ও জটিলতা এড়িয়ে যান:
প্রয়োজনীয়তাবাদ সবাইকে অপ্রয়োজনীয় বিষয় থেকে দূরে রাখতে এবং জীবনকে সহজ করতে উৎসাহ দেয়। দৈহিক ও মানসিক শান্তি নিশ্চিত করে অতি মনোযোগী ও উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা যায়। এজন্য নিজের কাছে থাকা অপ্রয়োজনীয় জিনিস ত্যাগ করা লাগতে পারে, যেমন: ডিজিটাল জগৎ দূরে রেখে দৈনিক রুটিন ঠিক করা। জীবনকে সহজ করলে সিদ্ধান্তে জটিলতা কমে যায়, তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়ে সময় ও শ্রম দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
৩. শৃঙ্খলা অনুসরণ:
প্রয়োজনীয়তাবাদ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়াকে উদ্বুদ্ধ করে। কোন কাজ শুরুর আগে সতর্কতার সাথে বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা, কর্মপরিকল্পনা, এবং অঙ্গীকারসমূহ যাচাই করতে উৎসাহী করে। লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে নিলে প্রধান মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মকাণ্ডে সময় ও সম্পদ বিনিয়োগ করার নিশ্চয়তা পাওয়া যায় এবং প্রত্যাশিত ফল লাভ করা যায়।
৪. দীর্ঘ সফলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ:
প্রয়োজনীয়তাবাদ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ নির্দিষ্ট করা ও তাতে মনোযোগ দিতে তাকিদ দেয়। কেননা এই ধরনের পদক্ষেপ দীর্ঘ মেয়াদি সফলতা এনে দেয়।