ত্যাগেই সার্থকতা: দাম্ভিকতা, অহংকার ও পশুত্বকে কোরবানি করি

ক্লাস, সেমিস্টার, অ্যাসাইনমেন্ট, মিড এবং প্রেজেন্টেশনের ঝামেলা চুকিয়ে ঈদুল আযহার ছুটিতে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছেছে শিক্ষার্থীরা। পশু কুরবানি দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং আত্মত্যাগের শিক্ষাই এই ইদের আনন্দ। তাই ঈদকে ঘিরে তারুণ্যের মাঝে থাকে নানা আয়োজন ও ভাবনা। থাকে বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা দেয়া কিংবা বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনাও। আর তাদের ইদ আনন্দ নিয়ে কেমন ভাবনা ও প্রত্যাশা, সেই কথা তুলে ধরেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চাঁদনী আক্তার

নিরাপদ ও আনন্দময় হোক সবার ইদ

ইদ শব্দটির তাৎপর্য আমার কাছে ব্যাপক। ইদ এমন একটি উৎসব, যেখানে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের বৈষম্য ভুলে, সকলকে এক ও অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এনে ভালোবাসা এবং আনন্দ ভাগ করে নেয়ার সুযোগ সবচেয়ে বেশি। প্রতিবারের ন্যায় এই বছরও ঈদকে প্রাণবন্ত করার লক্ষ্যে আমাদের কিছু চিন্তাভাবনা রয়েছে। যেমন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, বাড়ির আশেপাশে সকলের খোঁজখবর নেয়া, স্কুল কলেজের বন্ধু-বান্ধবের সাথে পুনর্মিলনী, পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করা সহ বিভিন্ন আয়োজন।

আমি মনে করি এই ইদ আনন্দকে সামনে রেখে বৃদ্ধাশ্রমে যে সকল বাবা-মা অবস্থান করছে তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেয়া। পবিত্র ঈদুল আযহা সকলের জন্য বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি এবং সমৃদ্ধি। সকলের ইদ হোক নিরাপদ এবং প্রাণবন্ত।

সৌরভ মৃধা

পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

দাম্ভিকতা, অহংকার ও পশুত্বকে কোরবানি করি

আমার কাছে ইদ মানে এক ব্যস্ততম জীবন থেকে ছুটি নিয়ে নিজের মা বাবার কাছে, আপন নীড়ে ফিরে আসা। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবাইকে এক সাথে নিয়ে থাকার একটা অদম্য ইচ্ছা সবসময় ছিল আমার ভিতর। ইদুল আযহা এমন একটি দিন যেদিন নিজ হাতে গরীব অসহায় মানুষদের মুখে হাসি ফুটানোর একটি সুবর্ণ সুযোগ পাই, নিজের ভিতরের দাম্ভিকতা ও অহংকার সব কিছুকে দূর করে দিতে পারি। আমার কাছে ইদুল আযহা মানে আপন নীড়ে, মায়ের কাছে থেকে নিজের আত্মশুদ্ধি, আত্মসন্তুষ্টি, এক বেলা অন্তত সেই নিরন্ন অসহায় গরীব মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর এক অনন্য সুযোগ, যা নিজের ভিতর এর পশুত্বকে কুরবানি করে মানুষ হওয়ার সুযোগ দেয়।

সুমাইয়া আক্তার

এমবিবিএস, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ

ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক

ইদ মানে আনন্দ, ইদ মানে সাম্য, ইদ মানে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হওয়ার দিন ঈদুল আযহা। সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের সমস্ত ত্যাগ সমর্পণের দিন এটি। মহান রব্বুল আলামীন কুরবানির মাংসের একটা অংশ গরিব দুঃস্থ অসহায় মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দিতে বলেছেন। এই ত্যাগের শিক্ষা আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিফলিত হলেই প্রতিষ্ঠিত হবে শান্তি সৌহার্দ্য , আন্তরিকতা ও সাম্য। যার ফলে তৈরি হবে উৎকৃষ্ট সমাজ তথা উৎকৃষ্ট জাতি। স্বাদিত হবে দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি।

মুশফিকুর রহমান

মার্কেটিং বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ত্যাগেই সার্থকতা ও তাৎপর্য নিহিত

ত্যাগের মহিমায় দীপ্তমান এই ঈদুল আযহা হচ্ছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। ঈদুল আযহা বেশি পরিচিত কুরবানির ইদ নামে। আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে পশু কুরবানি উপলক্ষ্য হলেও এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন। সেদিক থেকে ঈদুল আযহা অত্যন্ত মহিমান্বিত একটি দিন। ঈদুল ফিতরের পর আর কোনো লম্বা ছুটি না থাকায় আমরা যারা বাসা থেকে দূরে থাকি তারা তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করতে থাকি কুরবানির ঈদের জন্য। বাসায় আসার পর থেকে কবে গরু কিনবে এ নিয়ে থাকে অধীর আগ্রহ। যদিও মেয়ে হওয়ায় হাটে যাওয়া হয় না তবে গরু বাসায় আনার পর দেখ ভালের কাজটা ভালোই করা হয়। ঈদের দিন কুরবানির মাংস সমান তিন ভাগ করার পর এক ভাগ গরিব-দুঃখীকে, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনকে এবং এক ভাগ নিজে খাওয়ার জন্য রাখতে হয়। আর সকলের মাঝে মাংস ভাগ বণ্টন করার মধ্য থাকে এক অসীম তৃপ্তি।

কুরবানি হচ্ছে মূলত ত্যাগ, আত্মত্যাগ। ত্যাগের মধ্যেই এর সার্থকতা ও তাৎপর্য নিহিত। ত্যাগের আনন্দে উদ্ভাসিত পবিত্র ঈদুল আযহা মানুষকে মানবিক চেতনায় পুষ্ট হয়ে জগতের সকল সৃষ্টির কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার শিক্ষা দেয়। উৎসাহ জোগায় একটি সাম্যতা পূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শামিল হতে। ফলে সমগ্র মুসলিম জাহান তো বটেই সমগ্র বিশ্বমানবের কাছে পবিত্র ঈদুল আযহার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সীমাহীন।

নুসরাত জাহান

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

- Advertisement -

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version