বই পড়লেই মিলবে চা

নাঈমুর রহমান রিজভী

মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিক জীব। বুদ্ধি ও মননের অনুশীলনের জন্য প্রয়োজন জ্ঞান আহরণ। জ্ঞান আহরণের দুটি উপায় রয়েছে। একটি হলো ভ্রমণ, অন্যটি হলো বই পড়া। ব্যয়ের হিসেব করলে জ্ঞান আহরণের জন্য মানুষের পরম বন্ধু বই। আর এই বন্ধুর সঙ্গে সখ্যতা করতে যেতে হয় লাইব্রেরিতে। জ্ঞানের প্রসার, স্বশিক্ষায় শিক্ষিত ও মনুষ্যত্ববোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে চাইলে লাইব্রেরির গুরুত্ব কোন অংশেই কম নয়। বই জাতির বিবেককে বাঁচিয়ে রাখে। আর এই বিবেককে বাঁচিয়ে রাখতে লাইব্রেরির গুরুত্ব কোনো অংশে কম।

কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, বর্তমান প্রজন্ম মোবাইল ফোন আসক্ত ও প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে জ্ঞান আহরণ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। তাই লাইব্রেরিগুলোতে এখন আর বই পড়ুয়াদের ভিড় দেখা যায় না। লাইব্রেরির বইগুলো পড়ে থাকে অগোছালো ও ধুলো জমা অবস্থায়।

তবে বই পড়ুয়াদের বই পাঠে উদ্বুদ্ধ করতে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনের অবশিষ্ট জায়গায় একটি উন্মুক্ত লাইব্রেরি তৈরি করেছেন কুমিল্লার মোহাম্মদ আরিফুর রহমান। ‘আসুন, বসুন চা খেতে খেতে বই পড়ুন। ‘বসা ফ্রি, বই পড়া ফ্রি, চা খাওয়াও ফ্রি’ এই প্রতিপাদ্যকে বুকে ধারণ করে বই পড়ুয়াদের মোবাইল ফোন আসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনতে ২০২১ সালে এমন উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ার জন্য রয়েছে আলাদা টুল-টেবিলের ব্যবস্থা। পাশাপাশি তাঁদের গরমে স্বস্তি দিতে রয়েছে স্ট্যান্ড ফ্যান। রয়েছে বই পাঠের নীরব পরিবেশ। তাঁদের ক্লান্তি দূর করতে এখানে দেওয়া হয় এক কাপ রঙ চা। যেই চা’তে রয়েছে এলাচি, দারচিনি, লবঙ্গ, পুদিনা পাতা, তেজপাতা ও আঁদার মিশ্রণ। বই পড়ার জন্য এমন মনোরম পরিবেশ আর কোথাও কি আছে?

বই পড়ছে শিক্ষার্থীরা

এই মনোরম পরিবেশ দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়ের ভিক্টোরিয়া কলেজ রোড সংলগ্ন নুরজাহান ট্রেড সেন্টারের লিপিকা লাইব্রেরিতে। প্রতিদিন এখানে বই পড়ার জন্য ভিড় জমান কুমিল্লা মহিলা কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের স্কুল কলেজের এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। এখানে তাঁরা গল্পের বই, অ্যাকাডেমিক বই, চাকরির বইসহ যেকোনো বই বসে পড়তে পারে, ছবি তুলে নিতে পারে এবং নোটও করতে পারে। জ্ঞান আহরণের এমন সুযোগ তৈরি করে সুনাম কুড়িয়েছেন আরিফ। এই পরিবেশে বই পড়ে সন্তুষ্ট পাঠকরা।

আইরিন আকতার নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি এখানে সুযোগ পেলেই চলে আসি গল্পের বই পড়ার জন্য। এখানে যেকোনো বই পড়া যায়। নাম বললেই মামা বই খুঁজে দেন। এখানের সুবিধা ও পরিবেশ অনেক সুন্দর।

লাইব্রেরির মালিক আরিফুর রহমান বলেন, আমি কুমিল্লায় ১৪ বছর ধরে ব্যবসা করতেছি। নুরজাহান ট্রেড সেন্টারে এই দোকানটা নেওয়ার পর সামনে খালি জায়গা ছিল আবার আমার দোকানে পর্যাপ্ত বইও ছিল। এই চিন্তা থেকে ভাবলাম এখানে একটা কিছু করা যায়। পরে এখানে টেবিল চেয়ার বসিয়ে একটা উন্মুক্ত লাইব্রেরি তৈরি করি। যাতে এখানে শিক্ষার্থীরা বই পড়তে পারে। তাদেরকে বই পাঠে উদ্বুদ্ধ করতেই আমার এই উদ্যোগ। আস্তেধীরে এখানে আশেপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করে। তাদের বই পড়ার আগ্রহ দেখে ছেলে মেয়েদের বই পড়ার জন্য আলাদা জায়গা করে দেই। তাদের জন্য প্রতিদিন চায়ের ব্যবস্থা করি। এখানে তাঁরা যেকোনো বই পড়তে পারে, নোট করতে পারে এবং ছবি তুলতে পারে। এটা আমি বই পাঠে উদ্বুদ্ধ করতেই করি।

লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

- Advertisement -

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version