কুবিতে বিলুপ্তপ্রায় গুঁইসাপের নিরাপদ আবাস চায় শিক্ষার্থীরা

সুদীপ চাকমা

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের লাল মাটির সবুজ ক্যাম্পাস কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে প্রায় সময় দেখা মিলে বিলুপ্ত প্রায় বড়সড় টিকটিকির মতো দেখতে কিন্তু সাপের মতো দ্বিখণ্ডিত জিহ্বাসম্পন্ন প্রাণী ‘গুঁইসাপ’ এর। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বেশ কয়েকটি জায়গা জঙ্গলাকীর্ণ হওয়ায় নিরাপদ আবাস স্থলে পরিণত হয়েছে বিলুপ্ত প্রায় এই প্রাণীটির। যার বৈজ্ঞানিক নাম: ‘Varanus salvator’।

বাংলাদেশে সাধারণত তিন প্রজাতির গুঁইসাপ দেখা যায়। এগুলো হলো সোনা গুই, কালো গুই ও রামগাদি বা বড় গুই। এদের প্রতিটিই এখন বিপন্ন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে প্রজাতিটি দেখা যায় সেটি হলো সোনা গুই। এই প্রজাতিটি মূলত পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করে। এদের প্রধান খাদ্য হলো কাঁকড়া, শামুক, ইঁদুর, হাঁস-মুরগির ডিম, পচা-গলা প্রাণী দেহ ও উচ্ছিষ্ট।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু জায়গাই প্রায় সময় খাবার সংগ্রহের জন্য এই প্রাণীটিকে দেখা মিলে। মূলত ক্যাফেটেরিয়া সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর পাশেই এদের বেশি দেখা যায়। খাবার সংগ্রহের পর শান্ত স্বভাবের এই প্রাণীটি আবার জঙ্গলে ফিরে যায়।’

সরেজমিনে দেখা যায়, ‘অপরিকল্পিতভাবে ঝোপঝাড় কাটায় এই প্রাণীটির অস্তিত্ব এখন অনেকটা হুমকির মুখে। আবার অনেক সময়ই মানুষের রোষানলে পরে এই প্রাণীটি হামলার শিকার হয়।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ” শান্ত স্বভাবের এই প্রাণীটি মানুষকে কোন ক্ষতি করে না বললেই চলে। উলটো ইঁদুরের মতো মৃত পচা গলা প্রাণিদেহের উচ্ছিষ্ট খেয়ে পরিবেশের উপকার সাধন করে। তাই পরিবেশবান্ধব বিলুপ্ত প্রায় এই প্রাণীটি সংরক্ষণের আওতায় আনা হোক এবং প্রাণীটির সুরক্ষায় বিভিন্ন সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।”

পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্যে সভাপতি আব্দুল্লাহ আল সিফাত বলেন, “প্রকৃতির জন্য প্রতিটি প্রাণীই গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় যে-সকল প্রাণী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তার মধ্যে গুঁইসাপ অন্যতম। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি আমাদের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের জঙ্গলে প্রায় সময় আগুন লেগে যায়! এতে করে গুঁইসাপ ছাড়াও অন্য প্রাণীগুলোর উপর বিরূপ প্রভাব পরে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দাবি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী গুঁইসাপকে তার নিজের মতো করে বাঁচতে দেওয়া। তাই অভয়ারণ্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরের মতোই গুঁইসাপ ও অন্যান্য প্রাণী নিধনের জন্য জঙ্গলে আগুন দেওয়ার বিরোধিতা করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও যেন এরকম কিছু না হয় সেজন্য একাধিকবার মানববন্ধনও করেছে। আমরা চাই সবার মধ্যে গুঁইসাপ নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি হোক।

- Advertisement -

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version