বিখ্যাত বিজ্ঞান গবেষক হতে চাইলে

মোহাম্মদ আবদুল হালিম

১. যে বিষয়ে কাজ করতে চান সেই বিষয়ে বিখ্যাত গবেষকদের প্রবন্ধগুলো পড়ুন। প্রবন্ধগুলো পড়ার সময় নোট নিন, রেফারেন্স সংরক্ষণ করুন। প্রবন্ধগুলো পড়লেন কিন্তু নোট না নিলে তা জমিতে অনেক পানি সরবরাহ করা হল কিন্তু বাঁধ না দেওয়ায় পানিকে ধরে রাখা সম্ভব হবে না। কোনো প্রবন্ধ ডাউনলোড করতে না পারলে ঐ প্রবন্ধের সংশ্লিষ্ট লেখককে বিনীতভাবে ঐ প্রবন্ধটির কপির জন্য লিখুন। তাছাড়া আপনার কাজের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো ভালোভাবে জানুন। পড়ুন ও চিন্তা করুন। পড়ুন এক কেজি পরিমাণ কিন্তু চিন্তা করুন দশ কেজি পরিমাণ। আপনার সুপারভাইজরের সাথে গবেষণার বিষয়গুলো নিয়ে নিয়মিত কথা বলুন।

২. প্রজেক্টের কাজ শুরু করার আগেই প্রপোজাল টি লিখে ফেলুন রেফারেন্স সহকারে। রেফারেন্স সফট্ওয়ার ব্যবহার করুন। লিটারেচার রিভিউ ও প্রপোজাল আপনার কাজটিকে সহজ করবে। আপনার সুপারভাইজর কে প্রপোজালটি দেখান। তাঁর সাজেশন নিন। আপনার কাজটি নিয়ে ল্যাবে যারা সিনিয়র আছে তাদেরও সাথে আলোচনা করুন।

৩. প্রথমে সীমিত পরিসরে ল্যাবে কাজ শুরু করুন। আপনার এক্সপেরিমেন্টগুলো রিপিট করুন। ল্যাবে সময় দিন। আপনার কাজের সহজ ও অলটারনেটিভ পদ্ধতি চিন্তা করুন। আপনার ল্যাবে কেমিকেল ও বিকারকের স্বল্পতা থাকলে অন্য ল্যাবের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনার সমস্যা নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা করুন। গবেষণার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করবেন না। দ্রুত, অল্প কিছু ডাটা গুছিয়ে পেপার পাবলিশ করার জন্য ব্যস্ত হবেন না। তাড়াহুড়ো করলে ভুল করার সম্ভবনা অনেক বেশী, যা পরীক্ষিত। আপনার কাজকে বিভিন্নভাবে সমৃদ্ধ করুন। নিজেই নিজের কাজের সমালোচনা করুন। নিত্য-নতুন আইডিয়া সংযুক্ত করুন। নিজের কাজ নিজেই সম্পন্ন করুন। প্রসিদ্ধ জানার্লে প্রকাশিত প্রবন্ধের সাথে আপনার কাজের তুলনা করুন।

৪. আপনার ডিপার্টমেন্ট বা ল্যাবে সকল ক্যারেক্টারাইজেশন সম্ভব না হলে, অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন, বিসিএসআইআর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর গবেষণা কেন্দ্র ও জাহাঙ্গীরনগরের ওয়াজেদ মিয়া সায়েন্স রিসার্চ সেন্টারে যোগাযোগ করুন। তাদেরকে আপনার প্রজেক্টে সংযুক্ত করুন। দেশে কোথাও কোনো ক্যারেক্টারাইজেশন না করা গেলে বিদেশি গবেষকদের লিখুন। দেশে থেকেই তাদের সাথে কলোবোরেশন শুরু করুন। এক্ষেত্রে ভারত, চীন, কোরিয়া, জাপান ও এশিয়ান গবেষকের কাছে লিখুন।

৫. ডাটা কালেকশন করার পর ল্যাবে/ডিপার্টমেন্টে একটি সেমিনার দিন। নিজের কাজটি উপস্থাপন করুন। সহকর্মীদের সাজেশন নিন। আপনি ও আপনার সুপারভাইজর সম্মত হলে গবেষণা প্রবন্ধটি লিখতে শুরু করুন। সহজ ও সরল ভাষায়, ছোট বাক্যে আপনার কাজটি উপস্থাপন করুন। জার্নালে সাবমিট করার আগে ৩-৫ বার রিভিশন করুন। আপনার সুপারভাইজারের কমেন্ট ও রিভিশনগুলো গুরুত্ব সহকারে পালন করুন। আপনার গবেষণার কাজটি ভাল মানের জার্নালে প্রকাশ করার চেষ্টা করুন। আপনার কাজটি বিভিন্ন কনফারেন্সে উপস্থাপন করুন।

৬. ল্যাবে শুধু নিজের কাজেই মশগুল থাকবেন না। নতুন গবেষকদের কাজে সহযোগিতা করতে থাকুন। দেখবেন অনেক জানা ও কম জানা বিষয়ে গভীরতা বাড়তে থাকবে। সকলের মঙ্গল কামনা করুন। দেশে গবেষণা খাতকে কীভাবে উন্নত ও অগ্রগামী করা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন।

৭. শত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও আপনি বাংলাদেশে থেকে যেসমস্ত বাঁধা অতিক্রম করে গবেষণা করছেন তা প্রকাশ করুন, আমাদের তরুণদের উদ্দীপ্ত করুন।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, রসায়ন ও জৈব-রসায়ন বিভাগ, কেনেসো স্টেট ইউনিভার্সিটি, জর্জিয়া।

- Advertisement -

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version