শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় ফলাফল ভালো করতে পেরেছি

মোবাশ্বের আহমেদ শিপন

শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। কামারের শ্রম ও ঘামে কঠিন স্পাত যেমন ইচ্ছেমতো পাতে পরিণত করা যায়, তেমনি একজন শিক্ষকের প্রত্যক্ষ ভূমিকায় একজন শিক্ষার্থীও তাঁর দেখানো পথে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে। শিক্ষকের পরামর্শ ও সান্নিধ্যে নিজেকে গড়ে তোলা এমনই একজন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী রোকাইয়া সালাম। যিনি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পেয়েছেন।

রোকাইয়া ২০১১ সালে এসএসসি ও ২০১৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পেয়ে ভর্তি হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে। জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদে সর্বোচ্চ সিজিপিএ নিয়ে প্রথম হন।

বর্তমানে তিনি সেকেন্ড মাস্টার্স করার জন্য বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। ‘ইরাসমাস মান্ডাস জয়েন্ট মাস্টার্স স্কলারশিপ’ নিয়ে ‘জিওস্পেশাল টেকনোলজিস’ বিষয়ের উপর স্পেন, জার্মানি এবং পর্তুগালে পৃথকভাবে অবস্থান করছেন তিনি। মাস্টার্সের প্রথম সেমিস্টার স্পেন থেকে এবং সেকেন্ড সেমিস্টার জার্মানি থেকে শেষ করেছেন রোকাইয়া। করছেন গবেষণাও। তবে তার সবকিছুতেই অবদান তাঁর শিক্ষক ড. আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলামের বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমি কখনো ভাবিনি যে পড়ালেখা করে স্বর্ণপদক পাবো। যখন যতটুকু পড়ার দরকার ছিল ঠিক ততটুকুই পড়েছি। এভাবে স্কুল, কলেজ পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। বিভাগের প্রথম ২ সেমিস্টারের ফলাফলে আমার অবস্থান হয় তৃতীয় অথবা চতুর্থ। একদিন ড. আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলাম স্যার আমাকে অ্যাসাইনমেন্ট এর ভাইভার জন্য ডাকলেন। আমার লেখার ধরণ দেখে লেখার মান বাড়ানোসহ বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন।’

শিক্ষকের সেই পরামর্শই তার জীবনের গতি বদলে দিয়েছেন বলে জানান তিনি। তাঁর স্যারের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, স্যার আমাকে বলেছিলেন তুমি চেষ্টা করলে অনেক ভালো কিছু করতে পারবে। আমি বুঝতে পারছিলাম না এই একটা অ্যাসাইনমেন্ট দেখে কীভাবে কারো ভাল বা খারাপ ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়! সেই পরামর্শ ছিল আমার জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। তারপর পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হই। স্নাতক ও স্নাতক শেষে অনুষদে প্রথম হয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত হই। বর্তমানে জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছি।

গবেষণা জগতে ড. আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলামের হাত ধরেই আসেন তিনি। তিনি বলেন, স্যারের অনুপ্রেরণাতেই গবেষণার জগতে আসা। গবেষণায় আমি আগ্রহী ছিলাম, কিন্তু গবেষণা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচুর সাহস দরকার। যেই সাহসটা আমি স্যারের কাছে থেকেই প্রথম পেয়েছি। আমি নিজেই আমার ওপর মাঝে মাঝে ভরসা হারিয়ে ফেলতাম, কিন্তু তিনি কখনও ভরসা হারাতে দেননি। সবসময় পরম স্নেহে আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।

নিজের গবেষণার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ২০১৮ সাল (অনার্স ৪র্থ বর্ষ) থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তার রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছি তিন বছর। এরপর ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ এ রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হিসেবে জয়েন করি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রিজাইন করি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছি’।

এমন সফলতার বিষয়ে রোকাইয়া সালাম বলেন, ‘সফলতা একদিনে আসে না। এর জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। নিজের দুর্বলতা কোথায় সেটা নিজেকেই খুঁজে বের করত হবে। নিজের দুর্বলতাগুলোর ওপর ধারাবাহিকভাবে কাজ করলে সফলতা আগে হোক পরে হোক ধরা দেবেই।’

লেখক: শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। 

- Advertisement -

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version